প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ব্যবহৃত সিবিপি ওয়ান অ্যাপ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার শপথ নেওয়ার পরই নির্বাহী আদেশে এই অ্যাপ বন্ধ করার আদেশ দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর সীমান্তে অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা ও কান্নার স্রোত বইতে শুরু করেছে। অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত এবং এই সিদ্ধান্তে হাজারো পরিবার হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের মেক্সিকো অংশে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার অভিবাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছেন। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তৈরি করা সিপিবি ওয়ান অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার চেষ্টা করছেন। ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন (সিপিবি) জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে ২ লাখ ৭০ হাজার অভিবাসী এই অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন।
সিবিপি ওয়ান অ্যাপটি বাইডেন প্রশাসনের সময় চালু করা হয়েছিল। এটি সীমান্তে অবৈধ প্রবেশ রোধ করতে এবং অভিবাসন প্রক্রিয়া আরো সুশৃঙ্খল করতে সহায়ক ছিল। এই অ্যাপ ব্যবহারকারীরা বৈধভাবে আশ্রয় চাওয়ার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারতেন। তবে এখন এই অ্যাপের মাধ্যমে নেওয়া সব অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করা হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন (সিবিপি)।
সোমবার বিকালে সিবিপি তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, এই অ্যাপ আর অ্যাসাইলাম আবেদন গ্রহণের জন্য কার্যকর নয়। ইতিমধ্যে নেওয়া সব অ্যাপয়েন্টমেন্টও বাতিল করা হয়েছে। সিবিপি ওয়ান অ্যাপের ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন ভাষায় পপআপ বার্তার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে, তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট আর বৈধ নয়। সিবিপি আরো জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অ্যাপের মাধ্যমে ৯ লাখ ৩৬ হাজারেরও বেশি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করা হয়েছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে সিবিপি ওয়ান অ্যাপ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত অভিবাসন প্রক্রিয়ার ওপর একটি বড় আঘাত হেনেছে। এই অ্যাপটি বাইডেন প্রশাসনের উদ্যোগে এমন একটি পদ্ধতি তৈরি করেছিল, যা বৈধভাবে আশ্রয় চাওয়ার সুযোগ বাড়িয়েছিল এবং সীমান্তে অবৈধ প্রবেশ রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল। সীমান্তে অপেক্ষমাণ লাখো অভিবাসীর জন্য এই অ্যাপ ছিল শেষ আশার আলো। তাদের মধ্যে অনেকেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, নিরাপদ জীবনের প্রত্যাশায় এবং তাদের নিজ নিজ দেশের সহিংসতা বা দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে এসেছেন। অ্যাপ বন্ধ হওয়ার পর তাদের হতাশা ও অনিশ্চয়তার চিত্র স্পষ্টতই বোঝা যায়, যখন এক মা সীমান্তের বেড়ার পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েন, আরেকজন তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন।
এই সিদ্ধান্ত শুধু অভিবাসীদের জীবনে প্রভাব ফেলছে না; এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির একটি নতুন মোড় নির্দেশ করছে। এই পরিবর্তনের ফলে সীমান্তে অভিবাসীদের চাপ আরো বেড়ে যেতে পারে, যা মানবিক সংকট আরো ঘনীভূত করবে। অভিবাসন প্রক্রিয়া যদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত না হয়, তাহলে বৈধ আশ্রয় চাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত লাখো মানুষ হয়তো বিপজ্জনক পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে। দীর্ঘ মেয়াদে এ সিদ্ধান্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলবে। এখন সময় এসেছে নীতিনির্ধারকদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করার এবং অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ ও কার্যকর করার জন্য টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার। অভিবাসীদের নিরাপদ জীবন গঠনের সুযোগ নিশ্চিত করা শুধু একটি নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অপরিহার্য।