১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, রবিবার, ০৭:১২:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘সহিংসতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার একমাত্র উত্তর ভালোবাসা’ বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে- ড. ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ৩-দিনব্যাপী ‘তারুণ্যের উৎসব’ সুন্দরবন দিবসের বিষয়ে তরুণ প্রজন্ম কিছুই জানে না! ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন দুবাই পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছে- ড. ইউনূস মানবাধিকার লঙ্ঘনে শেখ হাসিনা সরাসরি জড়িত- ভলকার টার্ক হজযাত্রীদের সঙ্গে শিশুদের নিতে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞা


অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে নিউইয়র্ক-নিউজার্সির গুরুদ্বারগুলোতে ‘অভিযান’
গ্রেফতার ও ডিপোর্টেশন আতঙ্কে অবৈধ বাংলাদেশিরা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০১-২০২৫
গ্রেফতার ও ডিপোর্টেশন আতঙ্কে অবৈধ বাংলাদেশিরা অবৈধদের গ্রেফতার করা হচ্ছে


ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে এবার দেশের আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তারা অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে নিউইয়র্ক এবং নিউজার্সির গুরুদ্বারগুলোতে অনুসন্ধান শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। গ্রেফতার ও ডিপোর্টেশন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে অবৈধ বাংলাদেশিরাও। যদিও বারবার বলা হচ্ছে, যাদের আবেদন জমা রয়েছে, তাদের আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। তবে যাদের বিরুদ্ধে অতীতে ডিপোর্টেশন অর্ডার রয়েছে এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ রয়েছে, তাদের সামনে ভয়ংকর বিপদ। সময়ক্ষেপণ না করে তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগযোগ করতে বলা হয়েছে। তাছাড়া যাদের ডিপোর্টেশন রয়েছে এবং তারা যে ঠিকানায় থাকতেন, তাদের ঠিকানা পরিবর্তন করে থাকার জন্য অনেককে পরামর্শ দিয়েছেন। আর যাদের বৈধতাপত্র নেই, তারা যেন বাইরে অহেতুক ঘোরাফেরা এবং কোনো গন্ডগোলের মধ্যে না যায়। যতদূর সম্ভব নিরাপদে থাকার চেষ্টা করবেন। জানা গেছে, ইতিমধ্যে কয়েক হাজার অবৈধ অভিবাসীকে ডিপোর্ট করা হয়েছে। সমস্যা তৈরি হয়েছে কলম্বিয়া এবং ব্রাজিলের সঙ্গে। তবে সর্বশেষ খবর লেখা পর্যন্ত সিব্বির আহমেদ নামে একজন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার বাসা থেকে গত ২৮ জ্নুয়ারি। নিউইয়র্কে গ্রেফতার অভিযানে বাংলাদেশি ব্যবসা-বাণিজ্যে মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়েছে। আতঙ্কে এখন আর কেউ বসে আড্ডা মারতে এবং পার্টিতে যেতে চায় না।

 ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বাইডেন যুগের নীতি প্রত্যাহার করেছে। যা উপাসনা স্থানসহ ‘সংবেদনশীল’ এলাকায় বা কাছাকাছি আইনপ্রয়োগকে বাধা দেয়। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক এবং নিউজার্সির গুরুদ্বারগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে। কারণ অবৈধ এবং নথিভুক্ত অভিবাসীদের সঙ্গে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংযোগ রয়েছে বলে মনে করছে তারা। আগামীকে অন্যান্য কমিউনিটির ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেঞ্জামিন হাফম্যান একটি নির্দেশনায় ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এবং কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (আইসিই) বাইডেন প্রশাসনের নির্দেশিকা প্রত্যাহার করেছেন। 

আগে ধর্মীয় ও ‘সংবেদনশীল’ এলাকাগুলোতে ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ (আইসিই) এবং ‘কাস্টম‌স অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন’ (সিবিপি)- এর প্রবেশের কোনো এখতিয়ার ছিল না। সেই নীতি বদলে এখন থেকে সিবিপি এবং আইসিইকে ধর্মস্থানগুলোতে তল্লাশি অভিযান চালানোয় ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এর পরই মুখ খুলেছে নানা শিখ সংগঠন। শিখ আমেরিকান লিগ্যাল ডিফেন্স অ্যান্ড এডুকেশন ফান্ড (এসএএলডিএফ)-এর নির্বাহী কর্তা কিরণ কৌর গিল বলেন, ‘ডিএইচএসের এ নতুন নিয়ম অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যেভাবে গুরুদ্বারের মতো পবিত্র ধর্মীয় স্থানগুলোকে নিশানা করা হচ্ছে, তাতে আমরা নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত। এতে ধর্মস্থানের পবিত্রতাও নষ্ট হচ্ছে।’

অভিবাসীদের দ্রুত বহিষ্কার করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ এখন প্রতিদিন শত শত বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীকে আটক করে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে যারা বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে, তাদের বহিষ্কার করতে ২০২৪ নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ‘আমরা অভিবাসন আইনপ্রয়োগ করবো’, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ২৬ জানুয়ারি সিবিএস টেলিভিশন নেটওয়ার্কের ‘ফেস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে বলেন।

হোয়াইট হাউস এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম কয়েক দিনে ১ হাজারের বেশি অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে, যাদের কয়েকশ গুয়াতেমালাসহ অন্যান্য দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

‘এ কাজ বেশ ভালোভাবে আগাচ্ছে। আমরা খারাপ অপরাধীদের বের করে দিচ্ছি’, ট্রাম্প শুক্রবার নর্থ ক্যারোলিনায় হারিকেনে বিধ্বস্ত এলাকায় পুনর্বাসন কাজ পর্যবেক্ষণ করার সময় সাংবাদিকদের জানান। কোনো প্রমাণ না দিয়েই তিনি বলেন, ‘এরা সব খুনি। এখানে এমন লোক আছে, যারা যত খারাপ হতে পারে তত খারাপ। যত খারাপ আপনি দেখেছেন। আমরা আগে তাদের বের করে দিচ্ছি।’

সীমান্তে আরো সৈন্য

ট্রাম্পের ‘সীমান্ত রাজা’ টম হোম্যান এবিসি টেলিভিশন নেটওয়ার্কের ‘দিস উইক’ অনুষ্ঠানে রোববার বলেন, ‘সারা দেশে আরো আটক হবে।’ ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে ১ হাজার ৫০০ সৈন্য মোতায়েন অনুমোদন করেছেন এবং হোম্যান বলেন, ‘আপনারা এ সংখ্যা আরো বাড়তে দেখবেন। তারা সেখানে সুরক্ষিত সীমান্ত তৈরি করতে গেছে।’ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘যতজনকে আটক করা যায়’ ততজনকে ফেরত পাঠাচ্ছে। মূল মনোযোগ হচ্ছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রে কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্তÍ হয়েছে। তারপর যাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের আটক করে ফেরত পাঠানো হবে। ‘এ দেশের আইন লঙ্ঘন করা ঠিক না’, হোম্যান বলেন। তিনি বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের, এমনকি যাদের যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার কোনো আদেশ দেওয়া হয়নি, তাদেরও স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসী আছে বলে ধারণা করা হয়। এই সংখ্যা এতো বড় যে অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, তাদের সবাইকে ফেরত পাঠানো অসম্ভব হবে। ‘আমাদের যতটুকু অর্থ আছে, তা দিয়ে যতটুকু করা যায়, আমরা করবো’, হোম্যান বলেন।

অর্থ বরাদ্দের আহ্বান

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রেহ্যাম ফেরত পাঠানোর কাজে আরো অর্থ বরাদ্দ করার জন্য কংগ্রেসে তার রিপাবলিকান সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। ‘আমরা ট্রাম্প টিমকে যথেষ্ট অর্থ দেইনি’, গ্রেহ্যাম এনবিসি টেলিভিশন নেটওয়ার্কের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেন। তিনি বলেন, হোম্যানের ‘আরো বেশি অভিবাসী কর্মী নিয়োগ করা প্রয়োজন। তার মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্ত প্রাচীর এবং প্রযুক্তি সম্পন্ন করা প্রয়োজন। এটাকে কার্যকর করতে, তার আটক ব্যক্তিদের জন্য ৪১ হাজার বিছানার জায়গায় ১ লাখ ৫০ হাজার বিছানার প্রয়োজন।’

‘কাজেই, বিশেষ করে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে আমার রিপাবলিকান সহকর্মীদের বলবো, আমরা ইতস্তত করছি আর অভিবাসন পরিকল্পনা দেওয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা দেওয়াল তৈরি করছি না, আমরা দেওয়ালে আটকে গেছি। টম হোম্যান যে পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন, সেটা কার্যকর করার জন্য তাকে প্রয়োজনীয় অর্থ দিতে হবে এবং কংগ্রেসের অর্থায়ন ছাড়া আমরা দেওয়ালে বাড়ি খাবো’, গ্রেহ্যাম ঘোষণা দেন।

ট্রাম্পের প্রশাসন মেক্সিকোতে অপেক্ষমাণ অভিবাসীদের মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী আদেশ আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত অধিকার বাতিল করে ট্রাম্পের আদেশ একজন বিচারক ইতিমধ্যেই আটকে দিয়েছেন।

সীমান্তে ১ হাজার ৫০০ সেনা, উড়োজাহাজ হেলিকপ্টার পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে মেক্সিকো সীমান্তে ১ হাজার ৫০০ জন সেনাসদস্য, উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার পাঠানো হচ্ছে। অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এরই মধ্যে দক্ষিণ সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তার বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসের খবরে বলা হয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ডিয়াগো শহর ও টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের এল পাসো শহরে সেনাবাহিনীর ১ হাজার সদস্য এবং মেরিন বাহিনীর ৫০০ জন সদস্যকে পাঠানো হবে।

এছাড়া সামরিক বাহিনীর দুটি সি-১৭ উড়োজাহাজ, দুটি সি-১৩০ উড়োজাহাজ এবং হেলিকপ্টারও মেক্সিকো সীমান্তে পাঠানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট স্যালেসেস বলেছেন, ৫ হাজারের বেশি অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানোর কাজে সহায়তার জন্য সামরিক উড়োজাহাজ দেবে প্রতিরক্ষা দফতর।

সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে সর্বোচ্চ ১০ হাজার সেনা মোতায়েনের জন্য তৈরি থাকতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। দেশটির দক্ষিণ সীমান্তে আগে থেকেই প্রায় ২ হাজার ২০০ সেনাসদস্য মোতায়েন রয়েছেন। তারা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর কাজে সহায়তা করেন। ক্ষমতায় বসার পরপরই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করেন ট্রাম্প। ওই আদেশের ফলে সেখানে সামরিক বাহিনী মোতায়েনের পথ খুলেছিল। গত বছর নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই ট্রাম্প বলে আসছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে ক্ষমতায় বসার দিনই পদক্ষেপ নেবেন তিনি।

শেয়ার করুন