০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:২৫:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


নির্বাচনী বছরে উচ্চাভিলাষী বাজেট
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৬-২০২৩
নির্বাচনী বছরে উচ্চাভিলাষী বাজেট


অনেকটাই শারীরিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ১ জুন ২০২৩ নির্বাচন বছর ২০২৩-২৪  জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন। জাতীয় সংসদে তিনি ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক বাজের বক্তব্য দেন। ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেটকে প্রাথমিক বিবেচনায় সচেতন মহল উচ্চাভিলাষী অর্জনের জন্য চ্যালেঞ্জিং বলে মত প্রকাশ করেছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড়। বাজেটটি ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকার প্রাক্কলিত জিডিপির ১৫ দশমিক ২১ শতাংশ।

এবারের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

রাজস্ব হিসেবে ৫ লাখ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংগ্রহ করবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে আরো ৭০ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা আগামী অর্থবছরের চেয়ে ৬৭ হাজার কোটি টাকা কম। প্রস্তাবির বাজেটে ব্যয়ের খাতগুলোর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।

স্বীকার করতে দ্বিধা নেই বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের মতো নিম্ন আয়ের দেশে (এখনো এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেনি) বাজেট প্রণয়ন নানা কারণেই কঠিন। একদিকে যেমন বৈষয়িক কারণে বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চাপ, অন্যদিকে বৈষয়িক কারণে বিশ্ববাজার থেকে অগ্নিমূল্যে জ্বালানি আমদানির প্রয়োজনীয়তা। মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনাও প্রকট। এমতাবস্থায় দুর্বল কর অবকাঠামো, দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। সরকারকে অবশ্যই বাজেট প্রণয়নকালে প্রান্তিক মানুষদের কথা বিবেচনায় রাখতে হয়েছে। 

খাতভিত্তিক বরাদ্দ

আগামী বাজেটে ১৩টি খাতে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। খাতভিত্তিক বরাদ্দ হলো, জনসেবা খাতে ২ লাখ ৭০ হাজার ২৭০ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৪৯ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা খাতে ৪২ হাজার ১৪২ কোটি টাকা, জননিরাপত্তা খাতে ৩২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ১ লাখ ৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যখাতে ৩৮ হাজার ৫০ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ৪০ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা, আবাসন খাতে ৭ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৫ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৮৭ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৪৩ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা এবং বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম খাতে ব্যয় ৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা।

সীমিত পরিসরে বাজেটের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করবো না। শুধু  বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা নিয়ে আলোচনা করা যাক। সবাই জানে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে নিজেদের প্রাথমিক জ্বালানি সম্পদ মাটির নিচে রেখে আমদানিকৃত জ্বালানির দিকে ঝুঁকে পড়ায় দেশজুড়ে এখন তীব্র জ্বালানি সংকট। বাজেট বরাদ্দের সিংহভাগ খরচ হবে জ্বালানি বিদ্যুতে ভর্তুকি দিতে। 

এমনিতেই বিপিডিবি, বিপিসি, পেট্রোবাংলার বিপুল বকেয়া আছে। ডলার সংকটে কয়লা, তেল, এলএনজি কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট গ্রিড সংযুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও ১৫০০০-১৬০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রয়োজন দ্রুত গ্যাস উত্তোলন, কয়লা উত্তোলন বিষয়ে সিদ্ধান্ত। অথচ জানিনা সীমিত বরাদ্দ দিয়ে পেট্রোবাংলা কীভাবে গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করবে। জ্বালানি নিরাপত্তা এখন নাজুক। জ্বালানি বিদ্যুৎ সরবরাহ সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত, জন জীবন অতিষ্ঠ। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সব ক্ষেত্রেই জ্বালানি সংকট প্রভাব ফেলছে। জ্বালানি বিদ্যুৎ সাশ্রয়, চুরি অপব্যবহার বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান দ্রুত বাড়াতে হবে। অন্যান্য খাতে বরাদ্দ সমন্বয় করে হলেও জ্বালানি অনুসন্ধানে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। 

এমনিতেই সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য আইএফসির শর্তযুক্ত ঋণ নিয়েছে। অন্যতম শর্ত হলো জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতসহ সব খাত থেকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মাঝে সাবসিডি তুলে নেয়া। অথচ সরকার নির্বাচন সামনে রেখে জ্বালানি বিদ্যুতের মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারবে না। জানি না সরকার অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে কীভাবে অর্থ জোগান দিবে। বাংলাদেশের দুর্বল কর কাঠামো নিয়ে বাজেট ঘাটতি পূরণ হয়তো সম্ভব হবে না।

শেয়ার করুন