০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৩৫:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জোর জাতিসংঘ মহাসচিবের
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৩-২০২৫
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জোর জাতিসংঘ মহাসচিবের ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অ্যান্তোনিও গুতারেস


বাংলাদেশে সংস্কার বা দ্রুত ত্রয়োদশ নির্বাচনের বিষয়টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বোঝাপড়ার ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতারেস। বরং সবদলমত নিয়ে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন আন্তোনিও গুতারেস। এর আগে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরে আসেন তিনি। এবারের সফরকালে তিনি ঢাকায় জাতিসংঘ কার্যালয় উদ্বোধন, রাজনৈতিক দল, তরুণ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়, রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন তিনি। তবে তার সফরের সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে জাতিসংঘ ঢাকা অফিসের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভাটি। যার মূল এজেন্ডায় ছিল সংস্কার কর্মকান্ড। বৈঠকে সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার বিষয়ক কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী নিজ নিজ কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা বলেন। রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ কথা বলেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালেহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ। এসময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরে ঘটে যাওয়া কিছু কথা

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতারেস সফরে এসে প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব বিমানে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তারা। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার কার্যালয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতারেস সাক্ষাৎ এ বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সংস্কার ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়। সে আলাপে অ্যান্তোনিও গুতারেস বাংলাদেশ একটি দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারকেই প্রাধান্য দেন। কিন্তু পরে রাজনৈতিক দল বিশেষ করে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি’র শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে কথা বলে ও তাদের দেয়া বক্তব্য শুনে অ্যান্তোনিও গুতারেস বাংলাদেশে সংস্কারের দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রমের নেতিবাচক দিকগুলি জানতে পারেন। এর পরে অ্যান্তোনিও গুতারেস সংস্কারের বিষয়টি রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

এদিকে একটি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলের মতবিনিময়ে মোটা দাগে বলা চলে যা উঠে এসেছে তা হলো জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতারেস বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনকেই গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন পৃথিবীতে নজির সৃষ্টি করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, কতটুকু সংস্কার হবে, কতটুকু নির্বাচনের আগে এবং কতটুকু নির্বাচনের পরে-সেটা জনগণের সঙ্গে আলোচনা করে রাজনৈতিক দলগুলোকেই ঠিক করতে হবে। আর ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের চলমান সংস্কার কার্যক্রমে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ সহায়তা দেবে বলে জানান তিনি। বলেছেন, বাংলাদেশ সংস্কার ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ পর্বে রয়েছে। দেশটির এ সন্ধিক্ষণে শান্তি- সংলাপ ও ঐকমত্যে সহায়তার জন্য জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে। টেকসই ও ন্যায়-সংগত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করবে। দেশের মানুষ তাদের অবিচল অংশীদার হিসেবে জাতিসংঘের ওপর নির্ভর করতে পারে।

বিএনপি সন্তুষ্ট যে কারণে

এদিকে একটি সূত্র জানায়, মহাসচিবের সঙ্গে পুরো আলোচনায় বিএনপি’র নেতারা অ্যান্তোনিও গুতারেসকে একটি বিষয় বোঝাতে সক্ষম হন। তা-হলো, যতো ধরনের সংস্কার করা হোক না কেনো রাজনৈতিক সরকার ছাড়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিকমনা দল ব্যক্তিরা তা মেনে চলতে স্বচ্ছন্দবোধ করছে না এবং করবে না। কোন রাজনৈতিক সরকার ছাড়া কারো পক্ষে সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভবও না। বরং সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ করা হলে দেশে আবারও বিশৃংঙ্খলা দেখা দেবে। বিএনপি নেতারা অ্যান্তোনিও গুতারেসকে বোঝাতে সক্ষম হন যে রাজনৈতিক দল যদি সংস্কারের মত না দেয়, সেক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছুই করার নেই। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মহলও দ্রুত বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক সরকার দেখার আশায় আছে। জানা গেছে, বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্য অ্যান্তোনিও গুতারেসকে সন্তুষ্ট করেছে। এবং শেষমেষ অ্যান্তোনিও গুতারেস সংস্কারের বিষয়টি রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে তা অভিমত জানিয়ে বক্তব্য দেন। এমন আভাস মিলিছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালেহউদ্দিন আহমেদেরও বক্তব্যে। সালাহ উদ্দিন আহমদের গণমাধ্যম কর্মীদের সংস্কার প্রশ্নে বলেছেন ‘জাতিসংঘের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আপনারা বসে রিফর্মস কী নেবেন, সেটা ঠিক করেন। উনি বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। 

বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, সংস্কার প্রশ্নে জাতিসংঘ মহাসচিবের অভিপ্রায়ে বিএনপি’র নেতারা আশ্বস্ত হয়েছেন। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার দাবিতে অটল জামায়াতে ইসলামীর নেতারা মন:ক্ষুন্ন হয়েছেন। কেননা দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের দাবিটি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতারেসের কাছে অতটা গুরুত্বই পায়নি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, অ্যান্তোনিও গুতারেস সংস্কারের বিষয়টি রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে অভিমত জানিয়ে দেয়া বক্তব্যটি বিএনপি’র জন্য প্লাস পয়েন্ট। আর মাইন্যাস পয়েন্ট হলো জামায়াতের।

শেয়ার করুন