০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:১৫:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


আসুন বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াই
আহবাব চৌধুরী খোকন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৬-২০২২
আসুন বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াই


আকস্মিক বন্যায় এখন প্রায় পুরো সিলেট বিভাগ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত। প্রথম ধাক্কায় শুধু সুনামগঞ্জ ও সিলেট বন্যা আক্রান্ত হলেও এখন ধীরে ধীরে পুরো বিভাগেই বন্যার ব্যাপকতা বিস্মৃত হচ্ছে। জানা গেছে ভারতের আসাম ও মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢল এই ভয়াবহ বন্যার সূচনা করেছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন বৃষ্টিপ্রবণ মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত এক সপ্তাহে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা বিগত ১২২ বছরের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এই বৃষ্টির পানি এখন পুরো সিলেট বিভাগকে ডুবিয়ে দিয়েছে। সিলেট বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা এখন বন্যার পানিতে সয়লাব। পুরো সুনামগঞ্জ জেলা এখন বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত কয়েক ল প্রবাসী এখন তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্য সীমাহীন উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ু হঠাত করে হিমালয়ের উঁচু পাহাড়গুলোতে আঁচড়ে পড়ায় এই ভারী বৃষ্টিপাতের সূত্রপাত হয়। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টিপাত বন্ধ না হলে বাংলাদেশে উজান থেকে পানি আসা বন্ধ হবে না। এরূপ পরিস্থিতিতে সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা ছাড়াও এই মুহূর্তে দেশের ১২টি জেলা বন্যাকবলিত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, শেরপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাট ও ভোলা। ফলে এই সকল এলাকার হতদরিদ্র লাখ লাখ পানিবন্দি মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মানুষ যে যেভাবে পেরেছে কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে উঁচুস্থানগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে আবার ডুবে যাওয়া ঘরের চালে ও আশ্রয় নিয়েছে। ফলে অনেকের শেষ সম্বল ক্ষেতের ফসল ও গবাদিপশু বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন তীব্রতর হয়ে উঠেছে। বহু শিাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সিলেট বিমানবন্দরের রানওয়ে ডুবে যাওয়ায় বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

গত কয়েকদিনে এই বন্যার পানিতে আটকে থাকা কিছু পরিবারের অসহায় সন্তানসন্ততির আকুতি ফেসবুকে লক্ষ করছিলাম। নিউইয়র্কে বসবাসরত সুনামগঞ্জ জেলাস্থ ছাতক উপজেলা প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান মাসকুর পাবেল লিখেছেন, পুরো ছাতক শহর এখন প্রায় আট ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কোথাও নগদ পয়সা দিয়েও কোনো খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর নব্বই বছরের বৃদ্ধ পিতা পেশায় একজন এমবিবিএস ডাক্তার। সিলেট শহরে বাড়ি থাকা সত্তে¡ও কখনো ছাতক ছেড়ে যাননি। তাদের পুরো বাড়ির নিচতলা এবারের বন্যায় তলিয়ে গেছে। বিদ্যুত নেই। নেই গ্যাস ও টেলিফোন সার্ভিস। এই অবস্থায় তাদের কোনো খোঁজ- খবরও তিনি নিতে পারছেন না। আবার ঢাকা নগরীতে বসবাসরত এক বোন ফাহমিদা চৌধুরী, যিনি পেশায় একজন স্কুল শিয়ত্রী। তাঁর সিলেট শহরের পুরো বাসা এখন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমার সোনার বাংলায় ৩০ টাকা প্যাকেটের পাঁচটি মোমবাতি এখন ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশের সব জায়গায় এখন সিন্ডিকেট। বিদ্যুত নেই। এর মাঝে মোমবাতির ও পর্যাপ্ত সাপ্লাই নেই। এতোদিনের মধ্যে কেন মোমবাতির সাপ্লাই বা উত্পাদন নিশ্চিত করা গেলো না? এই বিপর্যয়ের মাঝেও বোঝা যাচ্ছে কোথাও কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। ভালো কোনো সাহায্যের দরকার নেই। আসুন, সবাই একত্রে এই বন্যার পানিতে ডুবে মরি। এমন সোনার বাংলায় বেঁচে থাকা মানে উপহাস মাত্র।’ আবার ইংল্যান্ডে বসবাসরত সুনামগঞ্জ জেলার একসময়ের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী মাহফুজ শিপলু লিখেছেন, না পারছি কিছু করতে, না পারছি খোঁজ নিতে। প্রতিটা ক্ষণ মনে হচ্ছে দম আটকে যাচ্ছে। পানিবৃদ্ধির খবরে একবার আতঙ্কিত ঘন, আবার কমার খবরে সাহস ফিরে পাই। এখন আবার ডাকাতেরও আতঙ্ক। মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, তবে এখন অনুধাবন করছি, কি কষ্টে কেটেছে যুদ্ধকালীন সময়। আমরা যারা প্রবাসে আছি কেউ ভালো নেই। মনে হচ্ছে, সবাই যুদ্ধের ময়দানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আছি। আমার বৃদ্ধ মা-বাবা এলাকার মানুষের টানে সিলেট শহরে থাকেতে চান না, আমার ভাই-বোনদের কাছে। আল্লাহর ওপর ভরসা করে আর পাড়াপ্রতিবেশী আত্মীয়দের ওপর বিশ্বাস আছে বলেই মা-বাবার জন্য চিন্তা তেমন একটা করতাম না। কিন্তু আজকে সবাই অসহায়। আমার দোতলা বাসার পুরো নিচতলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। দুদিন আগে পাড়ার ছোট ভাই আশরাফ খাবার পানি এনে দিয়ে গেছে। নিতাই দা খাবার এনে দিয়ে গেছেন বুক পানি অতিক্রম করে। তাদের ধন্যবাদ দেবো এই সুযোগও পাচ্ছি না। এখন সবাই বিপদে। না আছে বিদ্যুত, না আছে মোবাইল সংযোগ। জানি না আমার পরিবার, প্রতিবেশী বা আত্মীয়-স্বজন কেমন আছেন। রোগবালাই হলে এদের কি চিকিত্সা হবে? ডাক্তার, ঔষধ পাওয়া তো মহামুশকিল। সিলেট নগরীর উপশহরে বসবাসরত আমার বোনের ছয়তলা বাড়ির নিচতলা এখন চার ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। আমার পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধ ভগ্নিপতি সিলেট জজকোর্টের অ্যাডভোকেট এবং ভাগনে সিলেট মেডিক্যাল কলেজের রেজিস্টার্ড (ডাক্তার)। তারা প্রায় এক সপ্তাহ যাবত পানির মধ্যে আটকে আছেন। নৌকা ও পাচ্ছেন না যে ঘর থেকে বের হবেন। বিদ্যুত নেই, গ্যাস নেই, টেলিফোন সার্ভিস নেই। বাড়ির দোতলায় অবস্থান নিলেও এখন আতঙ্কে আছেন দোতলা না আবার তলিয়ে যায়।

সুহৃদ পাঠক, যাদের আকুতি এখানে উল্লেখ করলাম তারা সবাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। তাঁদের কারো সরকারি সাহায্যের দরকার নেই। কিন্তু তা সত্তে¡ও এই বন্যায় তাদের অসহায়ত্ব যেভাবে ফুটে উঠেছে তাতে গরিব মানুষগুলোর অবস্থা কি হতে পারে একটু কি ভেবে দেখেছেন। তাই আমরা যারা ভালো আবস্থায় আছি তাদের প্রত্যেকের উচিত অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো। ভালো কথা অনেক সংগঠন ও ব্যক্তি দেখেছি ইতিমধ্যে মানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছেন। বিশিষ্ট লেখক ও হোম কেয়ার ব্যবসায়ী আবু জাফর মাহমুদ দেখলাম সুদূর সুনামগঞ্জে ছয় শতাধিক মানুষের জন্য এক সপ্তাহের খাবার পাঠিয়েছেন। তিনি এই সাহায্য বন্যা পুরোপুরি না কমা পর্যন্ত অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন। সরকার আবার প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে উপদ্রুত এলাকার জন্য কয়েক মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৬০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেছে। এটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সীমিত। তাই আমরা প্রবাসীরা যদি এই মুহূর্তে সাহায্যের হাত প্রসারিত না করি, তাহলে দেশের দরিদ্র মানুষগুলোকে বাঁচানো যাবে না। নিউইয়র্কে যে সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের উচিত নিজস্ব অবস্থান থেকে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

আসুন, আমরা সবাই একটু হলেও বন্যাদুর্গত মানুষকে বাঁচাতে এগিয়ে আসি। এখন যে অবস্থা পানি কমে গেলে অবস্থা আরো খারাপ হবে। লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু ও দুর্ভিরে শিকার হবে। এই অবস্থায় তাদের জন্য খাদ্য, আশ্রয়, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিশ্চিত করতে হবে। দেশের বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও ধনিক শ্রেণিকেও ত্রাণকার্যে এগিয়ে আসা উচিত।

লেখক: কলাম লেখক ও কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট

শেয়ার করুন