মিডিয়া, বিনোদন, শিল্প, ফ্যাশন, গবেষণা, অর্থ এবং ব্যবসার একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র নিউইয়র্ক। এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মহানগর, মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক জনবহুল শহর। একই ছাতার নিচে নানা ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও নানা সংস্কৃতির শহর নিউইয়র্ক। পৃথিবীর যে কোনো নৃতাত্ত্বিক উত্তরাধিকারকে পাওয়া যাবে এখানে। এ শহর কোটিপতি আর উন্মাদের শহর। এ শহর দরিদ্র আর অভিজাত মানুষের শহর। পৃথিবীর সব রং ধরা আছে এ শহরে।
এই শহরেই আশ্রয়ের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন বহু মানুষ। তাদের সঙ্গে রয়েছে বহু শিশুও। পরিবারের সঙ্গে পথঘাটে না খেয়ে, না ঘুমিয়ে দিনযাপন করছে তারাও। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।
এই শহরে এক টুকরো রুটির জন্য মানুষ হাত পাতে। আবারও কেউ কেউ একবেলা নাশতার জন্য ব্যয় করেন ২ হাজার ডলার। ম্যানহাটনে ২ হাজার ডলারে নাশতা খাওয়ার জন্য টেবিল বুকিং দিতে হয় আগেভাগেই। হোটেলটির নাম নরমাস অ্যাট লা পার্কার মেরিডিয়ান। এখানকার ব্রেকফাস্টের পোশাকি নাম ‘জিলিয়ন ডলার লবস্টার ফ্রিটাটা’। ব্রেকফাস্ট আইটেমে থাকবে একটা বিশাল সাইজের লবস্টার, ছয়টি ডিম, লবস্টারের শুঁড়, ১০ আউন্স মাছের ডিম (সাভরুগা ক্যাভিয়ার)সহ অন্যান্য উপকরণ।
যেতে চান? তাহলে ঠিকানাটা টুকে নিন।
নরমাস অ্যাট লা পার্কার মেরিডিয়ান
১১৯ ওয়েস্ট ৫৬ স্ট্রিট, নিউইয়র্ক, নিউইয়র্ক-১০০১৯।
ফোন: ২১২ ৭০৮ ৭৪৬০
সুখ নেই আমেরিকায়!
আমেরিকা’ একটি লাখো স্বপ্নের নাম, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতির নাম, নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করা এক জাতির নাম, বিশ্বজুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো মোড়লের নাম, উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তি আর বিজ্ঞান উৎকর্ষতার চরম শিখরে অবস্থান করা একটি দেশের নাম, পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর সামরিক শক্তির নাম। অথচ ভাবতে অবাক লাগে এ দেশটিতে সুখ নেই। ২০২৫ সালের যে ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তাতে আমেরিকার অবস্থান ২৪। ২০১২ সালে এই তালিকায় দেশটির অবস্থান ছিল ১১। তারপর থেকে এই সুখের পারদ ক্রমেই নিচে নামছে।
বিশ্ব যেখানে বেকার সমস্যা সমাধানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমেরিকায় বেকারত্বের হার নেমে এসেছে সর্বনিম্ন মাত্রায়। তবুও আমেরিকানরা সুখী নয়, তবুও তারা দিনকে দিন অসুখী হয়ে চলেছে। কিন্তু কেন?
অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ আমেরিকার মানুষের ধীরে ধীরে অসুখী হয়ে ওঠার কারণ খুঁজতে গিয়ে গবেষকরা প্রথমেই বলেছেন ‘আমেরিকান ড্রিমস’-এর কথা। ব্রিটিশ নিউরোসার্জনদের এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি তাকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যেতে যায়। অগ্রগতি না থাকলে মানুষ সুখী হতে পারে না। মাসে ৫০ হাজার ডলার আয় করা লোকটি স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন চালিয়ে নিতে পারে। কিন্তু কয়েক বছর পর যদি তার আয় বৃদ্ধি না পায়, তাহলে সে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে, যদিও তার আয় তার জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট। ঠিক এ ব্যাপারটিই ঘটছে আমেরিকানদের ক্ষেত্রে। প্রজন্মের পর প্রজন্মজুড়ে তারা অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বাস করে এসেছে এবং তা বাস্তবায়নও করেছে। ধনী পিতা-মাতার চেয়ে তাদের সন্তান আরো অধিক আয় করেছে। কিন্তু বর্তমানে এই অগ্রগতি অনেকটাই স্তিমিত। গবেষণা বলছে, এখন সন্তান তার পিতার চেয়ে অধিক আয় করতে পারছে না, উপরন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা কমছে। আর তাতেই বাড়ছে হতাশা আর অসন্তুষ্টি।
অনেক গবেষকের মতেই, দূষিত রাজনীতি এবং মেরুকরণ আমেরিকানদের অসুখী করে তুলছে। দেশের মানুষ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে দ্বিধাবিভক্ত। ডেমোক্র্যাট বনাম রিপাবলিকান, ড্রাগ বৈধকরণ বনাম ড্রাগ নিষিদ্ধকরণ, ডানপন্থী বনাম বামপন্থী, অস্ত্র অধিকারের সমর্থক বনাম অস্ত্রের অধিকার রহিতকরণের সমর্থক, ধার্মিক বনাম অধার্মিক, যুদ্ধবিরোধী বনাম যুদ্ধের সমর্থক ইত্যাদি ভাগে বিভক্ত মার্কিনরা প্রায় কোনো ক্ষেত্রেই আর সমস্বরে কথা বলতে পারছে না। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক তিক্ততা যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
হুইটনি মিউজিয়াম অব আমেরিকান আর্ট
নিউইয়র্কে অনেকগুলো নামকরা মিউজিয়াম রয়েছে। এগুলোর প্রায় প্রতিটিতেই রয়েছে দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের শিল্পকর্মের বিশাল সংগ্রহ। কিন্তু আপনি যদি শুধু আমেরিকান শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখতে চান বা তাদের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন, তাহলে আপনাকে এই মিউজিয়ামে যেতে হবে। সমগ্র আমেরিকার শিল্পীদের শিল্পকর্মের এতো সুবিশাল সংগ্রহ দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ।
বিংশ শতাব্দীর আমেরিকান শিল্পীদের প্রায় ১২০০ উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্মের সংগ্রহ রয়েছে এই মিউজিয়ামে। এসব শিল্পীর মধ্যে আছেন আলেকজান্ডার, ফেল্ডার, এন্ডি ওয়ার হল, জেসপার জনস, কিথ হারিং ও এডওয়ার্ড হপারের মতো শিল্পীরা।
আর্টের ছাত্রদের জন্য এই মিউজিয়ামে রয়েছে, ‘ইনডিপেনডেন্ট স্টাডি প্রোগ্রাম’। ১৯৬৮ সালে চালু করা এই প্রোগ্রামের মধ্যে শিল্পকলার ইতিহাসসহ বিভিন্ন তথ্যাদি জানার সুযোগ রয়েছে।
গার্ট্রুড ভেন্টারবিট হুইটনি নামের একজন শিল্প রসিক ব্যক্তি ১৯৩১ সালে এই মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এতে শিল্প কর্মের সংগ্রহ ছিল ৭০০টি।
মিউজিয়ামটির অবস্থান হচ্ছে ম্যানহাটনের মেডিসন অ্যাভিনিউয়ের ৭৫ স্ট্রিটে। গ্রানাইট স্টোন দিয়ে ১৯৬৩ সালে অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে নতুন এই চারতলা ভবনটি তৈরি করা হয়।
আগ্রহীরা ৬ সাবওয়ে ট্রেনে ৭৬ স্ট্রিট।অথবা এম-১, ২, ৩, ৪ বাসে মেডিসন অ্যাভিনিউয়ের ৭৫ স্ট্রিটে নামতে পারবেন।
মিউজিয়াম সম্পর্কীয় যে কোনো তথ্যের জন্য ২১২ ৫৭০ ৩৬৭৬ এই নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।