দ্রুত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে অনড় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। সংস্কারকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে বড় ঝাঁকুনি দিতে চায় বিএনপি। একদিকে অন্তর্বর্তী সরকারকে নিজেদের দাবির পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে শরিক মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিরও একাট্টার বার্তা-ও দিতে চায় বিএনপি। একিই সঙ্গে মাঠে বিএনপি’র দাবির বিরুদ্ধে অবস্থানকারী দলকে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কাজটিও এই ফাঁকে সেরে ফেলতে চায় তারা। তবে দ্রুত নির্বাচনের দাবি আদায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিএনপি ও সমমনাদের শক্ত অবস্থানের জানান অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ সুশৃংখলভাবে দিতে চায় বিএনপি, পাশে সুযোগ সন্ধানীরা যেনো কোনো ধরনের ফায়দা লুটে না নিতে পারে। এমনসব খবর মিলেছে বিএনপি’র নেতাদের আলাপ করে।
আগামী নির্বাচন ঠিক হবে বা হবে কি-না তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ধোঁয়াশা কাটছে না। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সর্বশেষ বক্তব্যে বলেছেন চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এমন বক্তব্য মাঠের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি’কে বলা চায় একধরনের ধোয়াশার মধ্যে রেখেছে। তারা শুধু ধোয়াশাতেই নয়, আছে নানান শঙ্কায়। বিএনপি’র বেশ শীর্ষ পর্যায়ের আশঙ্কা নির্বাচনকে আরও দেরিতে আয়োজনের ব্যবস্থা করার পক্ষের শক্তি দেশের স্বার্থে নয়। এই সুযোগে নিজেদের দলকে সর্বক্ষেত্রে একটি শক্ত অবস্থান করে নিতে চায়। বিএনপি’র হাইকমান্ডের আশঙ্কা নির্বাচনের আয়োজন দেরিতে করতে করতে এর ফাঁকে প্রশাসনে নিজেদের প্রভাবশালিদের অবস্থান করে ফেলতে চায় ওই শক্তিটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা বলেন, বিগত ১৭ বছরে ফ্যাসিবাদি আমলে তাদের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত ও প্রকাশ্যে অবস্থানের কারণে সরকারি বেসরকারি প্রতিটি সেক্টরে চাকুরি পাওয়া সম্ভবই হয়নি। অথচ একটি রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় পরিচয় গোপন করে অনেক রকম কায়দা কানুন করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে মিশে যায়। বলা যায় অনেক ক্ষেত্রে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে গোপন লেনদেনের মাধ্যমে সরকারি চাকুরিও বাগিয়ে নিয়েছিল তারা। একিইভাবে নির্বিগ্নে বিপুল লেনদেনের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ হাতিয়ে নেয়। আবার ২০২৪ সালে ৫ আগস্টের ফ্যাসিবাদ পতনের সাথে তারা প্রশাসনের বড় বড় পদে আসীন হয়ে পড়ে। সেই ধারাবাহিকতা অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করে প্রশাসন ব্যবসা বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে আরও ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছে। ফলে নির্বাচন যতোই দেরি হবে ওই রাজনৈতিক দলটি সরকার থেকে ততই বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নিয়ে ফুলে-ফেপে শক্ত অবস্থানে চলে যাবে। প্রশাসনকে তাদের মতো করে সাজিয়ে নেবে। তবে ওই রাজনৈতিক দলটির পক্ষ থেকে ‘আগে সংস্কার পরে নির্বাচনের দাবির নেপথ্যে যে এমন পরিকল্পনা কাজ করছে তা বিএনপি’র হাই কমান্ড বুঝে ফেলেছে। তারা একারণে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সম্পন্ন করে দেশে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতেই অনড় বিএনপি।
নির্বাচন কমিশনকে পরিষ্কার বার্তা দিয়ে এলো বিএনপি
এদিকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আগে গত ২৩ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জমা দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা। এতে বিএনপি তার মতামত তুলে ধরতে গিয়ে জানিয়েছে যে, ‘নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন’-এই শিরোনামটি সঠিক নয়। বিএনপি মনে করে, শিরোনামটি ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন’ হওয়া উচিত। আর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর অধিকাংশ নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে হওয়া উচিত বলে মনে করে বিএনপি। পাশাপাশি বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, দলটি ইসির ক্ষমতা খর্ব চায় না। এজন্য একটি স্থায়ী জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
দ্রত নির্বাচন দিতে সর্বশেষ বার্তা দেওয়া হবে
এদিকে বিএনপি’র একটি সূত্র জানায় যে তাদের দলটি দেশে দ্রুত একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার চায়। এজন্য দ্রুত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে দলটি আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চায়। কারণ বিএনপি’র নেতারা মনে করেন দেশে একটি রাজনৈতিক সরকার ছাড়া মাঠে প্রশাসনের শক্ত অবস্থান দৃশ্যমান হবে না। বরং অস্তিরতা বাড়বে। একারণেই দ্রুত জনগণের ভোটে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরকার। জানা গেছে, এই দাবি দলটি তাদের সমমনাদের নিয়ে আন্দোলন যাওয়ার আগে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একটি চূড়ান্ত মেসেজ বা বার্তা দিতে চায়। সেই বার্তার পর ছোট ছোট আন্দোলন কমসূচি নিয়ে দেশচ্যাপী চষে বাড়াবে বিএনপি। এরপর তারা চূড়ান্ত আন্দোলনে মাঠে নামবে।
আন্দোলনে যুগপৎ শরিকরাও থাকছে
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দ্রুত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে বিএনপি ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিগুলির সাথে ফলপ্রসূ আলাপ করেছে। এর পাশাপাশি বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ইসলামী দলও এই আদর্শ বিশ্বাসীদের সাথে আলাপ আলোচনা করেছে। সবার কাছে বিএনপি একটি মেসেজ দিয়েছে যে তারা দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করতে চায়। এই যাত্রায় সর্বশেষ হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিএনপির নেতারা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বলা যায় হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দ্রুত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিকে সমর্থন জানায়।
আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ
বিএনপি’র একটি সুত্র জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে প্রতিটি আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ। কোনোভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রককর অবস্থায় ফেলে বিএনপি মাঠ থেকে কোনো দাবি আদায় করতে চায় না বিএনপি। কারণ বিএনপি’র নেতারা মনে করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন না করলে মাঠে বিশৃংখলার সুযোগে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থকরা নিয়ে নেবে। এর পাশাপাশি যে দলটি দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের পর নির্বাচন দাবি করছে তাদেরও পোয়াবারো হবে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারকে-ও দেশে বিদেশে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে। এজন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে মাধ্যমেই দেশের একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের প্রতিষ্ঠা আন্দোলন করবে বিএনপি।