১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৭:৩৪:৩১ পূর্বাহ্ন


তিন জয়নুলে ভজঘট!
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৫
তিন জয়নুলে ভজঘট! হাবিব রহমান


তিনজনের নামই জয়নাল আবেদীন। তিনজনই সাংবাদিক। তিনজনের বাড়িই নোয়াখালী। তিনজনই থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। এক জয়নুল কাজ করেছেন বাংলাদেশ টাইমস, পিআইবিতে। থাকেন ইলিনয়। অন‍্যজন কাজ করেছেন গণকণ্ঠ, শক্তি এবং নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক রানার পত্রিকায়। থাকেন পেনসিলভানিয়া। অন্যজন কাজ করেছেন সংবাদ সংস্থা এনা, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস ও বিডিনিউজে। হিন্দু টাইমস বাংলাদেশেরও সংবাদদাতা ছিলেন। ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস‍্য। থাকেন মিনিসোটায়।

তিনজনই প্রথিযশা সাংবাদিক। গত ১৭ এপ্রিল তৃতীয় জয়নুল আবেদিন ৮৮ বছর বয়সে মারা যান মিনিসোটায়। কিন্তু ভুলবশত পেনসিলভানিয়ার জয়নুল আবেদিন মারা গেছেন বলে নিউইয়র্কের একজন সাংবাদিক সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি প্রকাশ করলে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। শত শত শোকবার্তা আসতে থাকে। কিন্তিু একটু পরেই খবর হয় পেনসিলভানিয়ার জয়নুল আবেদীন সুস্থ আছেন। মারা গেছেন মিনসোটায় বসবাসরত সাংবাদিক জয়নুল আবেদীন।

এসব দেখে একজন প্রবাসী মন্তব্য করেন, এ যেন নামে নামে যমে টানে!

গডুত মিউজিয়াম

ম‍্যানহাটনের ২২৫ ফিফথ অ্যাভিনিউতে আছে একটা অভিনব সংগ্রহশালা-নাম গডুত মিউজিয়াম। যার বিষয়বস্তু অঙ্ক। বিভিন্নরকম মডেল, প্রদর্শনীর মাধ‍্যমে গডুতের প্রতি ছোট থেকে বড় সবার উৎসাহ সৃষ্টি এই মিউজিয়ামের উদ্দেশ‍্য। গডুত ভয় নয়, মজার ছলে শিখে নেওয়া যায় এটাই বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট চার্চ

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট চার্চটির অবস্থান নিউইয়র্ক স্টেটে। এটাকে বলা হয় ক্রস আইল‍্যান্ড চ‍্যাপেল। এটি ১৯৮৯ সালে নিউইয়র্কের ছোট একটি স্থান এনিডায় তৈরি করা হয়েছিল। এর অবস্থানের কারণে পর্যটকরা চার্চটির প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়ে থাকেন। এনিডার অবস্থান নিউইয়র্ক স্টেটের মেডিসন কাউন্টিতে। এর পশ্চিমে সিরাকিউস এবং পূর্বে ইউটিকা রাজ‍্য।

বিয়ন্সে দেখতে লিন্ডসে লোহানের মতো!

নিউইয়র্কের মাদাম তুসো জাদুঘরে রাখা বিখ্যাত সংগীতশিল্পী বিয়ন্সের মোমের মূর্তিটি দেখতে নাকি অপর জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী লিন্ডসে লোহানের মতো দেখাচ্ছে- এমনই দাবি করেছেন বিয়ন্সের ভক্তরা। তাদের অভিযোগ, নতুন এই মূর্তিতে মিশ্র বর্ণের বিয়ন্সের গায়ের রং একটু বেশি ‘সাদা’ হয়ে গেছে। জাদুঘরের নতুন অতিথিদের কাছে বিয়ন্সের এই চেহারা বিভ্রান্তিকর বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

টুইটার বার্তায় বিয়ন্সের ভক্তরা বেশ ক্ষোভ দেখিয়েছেন মাদাম তুসোর কর্তৃপক্ষের প্রতি। তাদের কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন যে, জাদুঘরে বিয়ন্সেকে দেখতে অনেকটা লিন্ডসে লোহান বা জেসিকা সিম্পসন অথবা শাকিরার মতো দেখাচ্ছে। মোমের এই মূর্তিটি যারা বানিয়েছেন তারা নাকি কোনোদিন বিয়ন্সেকে দেখেননি, এমন মন্তব্যও করেছেন অনেক ভক্ত।

এ ব‍্যাপারে মাদাম তুসো কর্তৃপক্ষ বলেছেন, আমাদের প্রতিভাবান শিল্পীরা জাদুঘরে রাখা বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রকৃত গায়ের রঙের সঙ্গে মূর্তির গায়ের রং মেলাতে অনেক পরিশ্রম করে থাকেন। গ্যালারির আলোর সঙ্গে ক্যামেরার ফ্লাশ মিশে এক অদ্ভুত রং তৈরি হতে পারে। এর ফলে প্রকৃত রং হারিয়ে যেতে পারে। তবে বিয়ন্সের চেহারা বা শরীরের ভাঁজের ভুল উপস্থাপনা হয়েছে এমন মন্তব্যের কোনো উত্তর দেয়নি তুসো কর্তৃপক্ষ।

সুগার ফ‍্যাক্টরি নিউইয়র্ক

ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় আমেরিকান রেস্তোরাঁ হিসেবে প্রথম স্থান পেয়েছে ম‍্যানহাটনের সুগার ফ‍্যাক্টরি। এটি একটি আন্তর্জাতিক চেইন রেস্তোরাঁ। নিউইয়র্ক ছাড়াও আমেরিকার বেশ কয়েকটি বড় শহর যেমন লাসভেগাস, মায়ামি, শিকাগো শহরে এর শাখা রয়েছে। এই রেস্টুরেন্টের খাবার গ্রহণের জন‍্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন। দোতলা এই রেস্টুরেন্টটি খুবই সুপ্রশস্ত জায়গা নিয়ে তৈরি। সুগার ফ্যাক্টরি নিউইয়র্ক রেস্তোরাঁর সাজসজ্জায় একটি সামগ্রিক মধ্যযুগীয় স্টাইল রয়েছে। এতে আছে ক্লাসিক ফরাসি বারোক স্টাইলের হলুদ স্ফটিক ঝাড়বাতি এবং ক্যাসল স্টাইলের আয়নাগুলো রেট্রো গ্রিনে খোদাই করা রয়েছে।

ইতালীয় রেস্তোরাঁর সৌজন‍্য পাউরুটি

নিউইয়র্কে রয়েছে অনেক ইতালীয় রেস্তোরাঁ। আমরা অনেকেই খাবারে রুচি বদলাতে সেসব রেস্তোরাঁয় যাই। বসার পরপর প্রথমেই পরিবেশন করা হয় মাখন -জেলিসহ পাউরুটি। এটাকে স্বাভাবিক মনে হলেও আসলে তা নয়। এর পেছনে রয়েছে কিছু অন্তর্নিহিত কারণ। মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে মিসরের লোকেরা খ্রিস্টের জন্মের আট হাজার বছর আগেই (এখন থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে) পাউরুটি বানানোর কৌশল জানতো। তবে বিভিন্ন ধরনের পাউরুটি আর পাউরুটির বিভিন্ন রেসিপি উদ্ভাবনে এগিয়ে ছিল ইতালি। শুরুতে ইতালির রেস্তোরাঁগুলোয় অতিথিদের পাউরুটি দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। এটা ছিল সম্পূর্ণ ফ্রি! ইতালীয় সংস্কৃতিতে মনে করা হয়, উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য সামান্য মাখন মাখানো একটুকরা পাউরুটির চেয়ে ভালো কিছুই হয় না!

পাউরুটির দাম খুবই কম। ‘মূল খাবার’ আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পাউরুটি চিবানোর চেয়ে ভালো বিকল্প পাওয়া ভার। তাছাড়া যিনি খেতে এসেছেন, এই উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়ে তার ভেতরও কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে ওই রেস্তোরাঁয় কিছু ভালো বা দামি খাবার খাওয়ার একটা ‘মানসিকতা’ তৈরি হয়। ইতালিতে এর চল শুরু হলেও দ্রুত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রেস্তোরাঁয় পাউরুটি দিয়ে অভ্যর্থনা জানানোর এই সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ে। আমেরিকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়ও শুরুতে অতিথিদের পাউরুটি খেতে দেওয়া হয়।

রেস্তোরাঁয় শুরুতেই একটুকরা পাউরুটি দিয়ে আপ্যায়িত করার ‘আসল’ রহস্য সম্প্রতি একটা ভিডিওতে ফাঁস করেছেন জেসি ইনচাউসপে। ৩২ বছর বয়সী এই ফরাসি বায়োকেমিস্টকে ডাকা হয় ‘গ্লুকোজ গডেস’। জেসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার। তিনি লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে গডুতে স্নাতক ও যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর করেন।

২০২২ সালে প্রকাশিত হয় তার বই ‘গ্লুকোজ রেভল্যুউশন: দ্য লাইফ চেঞ্জিং পাওয়ার অব ব্যালান্সিং ইয়োর ব্লাড সুগার’। বইটি নিউইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বইটি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওই বছর সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইয়ের রেকর্ড করে। এটি ৪০টির বেশি ভাষায় অনূদিত হয়। ২০২৩ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয় তার ‘দ্য গ্লুকোজ গডেস মেথড’। সেটিও নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলারের তালিকায় স্থান করে নেয়।

ইনস্টাগ্রামে জেসির অনুসারীসংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৪৩ লাখ। জে শেঠির পডকাস্টে জেসি জানান রেস্তোরাঁয় শুরুতে একটুকরা পাউরুটি দেওয়ার ‘আসল’ কারণ। তার বক্তব্য:

মনে করুন, আপনি একটা রেস্তোরাঁয় গেছেন। আপনাকে খানিকটা মজাদার পাউরুটি চিবাতে দেওয়া হলো। যতক্ষণ মূল খাবার আসছে, ততক্ষণে পাউরুটির স্টার্চ গ্লুকোজে পরিণত হচ্ছে। ফলে আপনার ‘সুগার স্পাইক’ (হুট করে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়া) হবে। আর এর আধঘণ্টা পরই আপনার ‘গ্লুকোজ ড্রপ’ করবে। ফলে গ্লুকোজ কূন্যতায় প্রচণ্ড চিনির তেষ্টা পাবে। মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা জাগবে। আর সে সময় ওয়েটার এসে জিজ্ঞেস করবে, ‘স্যার/ম্যাম, আপনাকে কি কোনো ডেজার্ট দেবো!

এরপরই জে বলেন, ‘এখন সবকিছু আমার কাছে পানির মতো পরিষ্কার। এটা আসলে মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি আসক্তি তৈরি করে। খুব অল্প দামের পাউরুটি দিয়ে ডেজার্ট খাওয়ানোর কৌশল।’

জেসি আরো যোগ করেন, ‘তা ছাড়া, আপনি শেষে যে খাবার খান, সেটিই মূলত আপনার সামগ্রিক খাবারের অভিজ্ঞতা ভালো নাকি খারাপ, সেটা অনেকখানি নির্ধারণ করে। তাই আপনি যদি মিষ্টিজাতীয় খাবার দিয়ে শেষ করেন, সেটা একটা দারুণ অনুভূতি। আবারও ওই রেস্তোরাঁয় ফিরে আসতে চাইবেন আপনি।’

# নিউইয়র্ক ২৫ এপ্রিল ২০২৫

শেয়ার করুন