১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৭:৪৩:১২ পূর্বাহ্ন


ইমিগ্র্যান্টদের স্বার্থরক্ষায় জোরহান-জুমানি-জাস্টিন ও শাহানার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৫
ইমিগ্র্যান্টদের স্বার্থরক্ষায় জোরহান-জুমানি-জাস্টিন ও শাহানার বক্তব্য রাখছেন জোরহান মামদানি


আগামী ২৪ জুন নিউইয়র্ক সিটির প্রাইমারি নির্বাচন। এই নির্বাচনে মেয়রসহ বিভিন্ন প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের মুখোমুখি হবেন। এই প্রাইমারি নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা তাদের প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এসব প্রার্থীদের সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছেন। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী জোরহান মামদানি, পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানি উইলিয়াম, সিটি কম্পট্রোলার জাস্টিন বার্নন এবং কাউন্সিলম্যান হিসেবে বাংলাদেশি আমেরিকান শাহানা হানিফকে সমর্থন জানিয়েছে অ্যাসাল। এই অনুষ্ঠানটি গত ২৭ এপ্রিল ব্রুকলিনের বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির প্রথম ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। এটিকে নিউইয়র্ক সিটি ছোট্ট পার্ক হিসেবে গড়ে তুলেছে। পার্কেই এই মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রতিটি প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচণ্ড সমালোচনা করা হয়। সেই সঙ্গে নিউইয়র্কে মুসলিম সম্প্রদায় এবং ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটির স্বার্থরক্ষায় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

অ্যাসালের সভাপতি মাফ মিসবাহর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক করিম চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি, পাবলিক অ্যাডভোকেট প্রার্থী জুমানি উইলিয়াম, সিটি কম্পট্রোলার প্রার্থী জাস্টিন বার্নন এবং কাউন্সিলম্যান প্রার্থী বাংলাদেশি আমেরিকান এবং প্রথম মুসলিম নির্বাচিত প্রতিনিধি শাহানা হানিফ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন অ্যাসালের কর্মকর্তা এবং কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। যার মধ্যে অন্যতম বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, সাবেক ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, গোলাম ফারুক শাহীন প্রমুখ।

মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি বলেন, বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তিনি নিউইয়র্ক সিটির জনতার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তার কারণে নিউইয়র্কের ইমিগ্র্যান্টরা ভয়ের মধ্যে বসবাস করছে। তিনি ট্রাম্পের কথায় রিকার্স আইল্যান্ডে অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের জন্য জেল তৈরি করছেন। তিনি আরো বলেন, আমি একজন মুসলিম এবং ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে এই দুটো সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষা করবো। তিনি মেয়র প্রার্থী এন্ড্রু কুমোরও সমালোচনা করে বলেন, তিনি নারী কেলেঙ্কারির কারণে গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাকে এবার ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি আপনাদের সমর্থন চাই। বর্তমানে আমি সেকেন্ড পজিশনে রয়েছি। ১ শতাংশ ভোট বেশি পেলেই আমি শীর্ষে পৌঁছে যাবো। তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে বিনামূল্যের বাস সার্ভিস চালু করবো। সব শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবো। মানুষের সুবিধায় নতুন হাইজিং করবো, যাতে করে সবাই অল্প অর্থে বসবাস করতে পারেন।

জুমানি উইলিয়াম কঠোরভাবে মেয়র এরিক অ্যাডামসের সমালোচনা করে বলেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন পলিসিকে সমর্থন করছেন। যার ফলে নিউইয়র্কের মানুষ ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। আরেক প্রার্থী কুমো ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক। তাদের কাছে মানুষ এবং মানবতা বড় নয় তাদের কাছে ধর্ম কড়। তিনি বলেন, আমি ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাচ্ছি এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের আহবান জানান তিনি।

সিটি কম্পট্রোলার প্রার্থী জাস্টিন বার্নন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করবো। তিনি ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটির স্বার্থরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই সঙ্গে সবার জন্য শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

শাহানা হানিফ বলেন, আমি আপনাদেরই সন্তান। এখানেই আমার বেড়ে ওঠা। এখান থেকে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ ওয়ে। যা আমি সবার সহযোগিতায় করতে পেরেছি। ইমিগ্র্যান্টদের জন্য লড়াই করেছিম এখানো করছি, মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য লড়াই করেছি, এখানো করছি। স্কুলে হালাল খাবারের জন্য লড়াই করেছি। সফল হয়েছিলে। এখনো অনেক কাজ বাকি। সেই কাজগুলো আপনাদের নিয়ে করতে চাই। তাই আমি নির্বাচন করছি। আশা করি অতীতের মত আমার পাশে থাকবেন এবং সহযোগিতা করবেন।

শাহানার দু’চোখে জল!

জন্মে আমেরিকান, রক্তে বাঙালি। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী বাবা মায়ের প্রথম সন্তান শাহানা হানিফ। নিজের বেড়ে ওঠায় প্রাচুর্য দেখেছেন। চারপাশে দেখেছেন সুবিধাবঞ্চনা। সে কারণে হয়তো বঞ্চনার বিপ্রতীপ শক্তি হতে চেয়েছেন তিনি।

শাহানা নিউইয়র্ক সিটিতে ডিস্ট্রিক্ট থার্টি নাইনে প্রথম নারী কাউন্সিল মেম্বার (২০২১ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচিত)। সেবার দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাতজনকে দলীয় প্রাইমারি নির্বাচনে হারিয়ে। এবারও লড়ছেন তিনি। একই পদে। বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে গিয়ে তিনি হয়েছেন অনেকের চক্ষুশূল। সমাজবাদী চেতনায় গড়ে তুলেছেন নিজের রাজনীতি। পড়াশোনা শেষ করে কাজ শুরু করেন সিটিতে বাসযোগ্য ও সাশ্রয়ী আবাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য। কৈশোর থেকে দূরারোগ্য লুপাস ব্যাধির সঙ্গে লড়াই তাকে দিয়েছে এক অক্লান্ত পরিশ্রমী চেতনা। সিটিতে তিনি হয়ে উঠেছেন অভিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ এক আলোকবর্তিকা। কাউন্সিলে একের পর এক জনবান্ধব আইন তৈরিতে হয় নিজে উদ্যোগী হয়েছেন নয়, সহায়তা দিয়েছেন। শাহানার এতোসব কাজের প্রশংসা করে অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেইবরের সমাবেশ চলছিল, তখন তার দু’চোখ বেঢ়ে গড়িয়ে পড়ছিল আনন্দাশ্রু।

শেয়ার করুন