নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি (এনওয়াইইউ) ল স্কুলে প্যালেস্টাইনপন্থী বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ৩১ জন ছাত্রছাত্রীকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের জানানো হয়েছে, তারা যদি আর কোনো বিক্ষোভে অংশ না নেওয়ার লিখিত চুক্তিতে সই না করেন, তবে তাদের ক্লাসরুম, গ্রন্থাগার, এমনকি আবাসন সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হবে। ঘটনাটি ঘটে গত ২৫ এপ্রিল ল স্কুলের ডিন ট্রয় ম্যাকেঞ্জির অফিসের সামনে এক শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভের পর। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই পদক্ষেপে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অধিকারকর্মীরা। তারা একে সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী এবং শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করার একটি উদাহরণ বলে অভিহিত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাঠানো চুক্তিপত্রে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময়ে কোনো ধরনের প্রতিবাদ বা ‘বিধ্বংসী কার্যকলাপ’ এ অংশ নেবেন না- এমন অঙ্গীকার করলেই কেবল তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। এখনো পর্যন্ত কেউ এই চুক্তিতে সই করেননি বলে জানা গেছে। এদিকে ২৮ জন শিক্ষার্থী, যাদের মার্চ মাসের একটি বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার পর থেকেই ক্যাম্পাসে প্রবেশাধিকার স্থগিত করা হয়েছিল, তাদের বাসস্থানেও প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া আরো ১৫ জন শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে, ভবিষ্যতে ‘আর কোনো অশান্তি’ সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিক্ষোভকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আইন শিখছি আর সেই ল স্কুলই আমাদের সংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে বলছে এটা কতটা পরিহাস।
এই ঘটনার পর প্রায় ৪০০ জন শিক্ষার্থী, প্রাক্তন ছাত্র এবং কমিউনিটির সদস্য একটি খোলা চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে ন্যায়বিচার দাবি করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তিমূলক নীতিমালা পরিষ্কার করার, শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের রেকর্ড মুছে দেওয়ার, অস্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের এবং একটি বিতর্কিত আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদের আহ্বান জানান।বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয় হলো, নিষিদ্ধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ল স্কুলের ক্লিনিক্যাল কাজের সঙ্গে যুক্ত, যেখানে তারা অভিবাসন, নাগরিক অধিকার ও পারিবারিক বিচ্ছেদসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলায় ক্লায়েন্টদের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের অনেকেই ক্লায়েন্টদের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না বা সময়মতো নথি দাখিল করতে পারছেন না। এক শিক্ষার্থী বলেন, ল স্কুল আমাদের ক্লায়েন্টদের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করছে।
ডিন ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে একটি বৈঠকের পরও শিক্ষার্থীরা কোনো সন্তোষজনক জবাব পাননি। বরং তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসন তাদের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছে এবং অন্তর্বর্তী বহিষ্কার সম্পর্কে কোনো স্বচ্ছ ব্যাখ্যা দেয়নি। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা শান্তভাবে বসে পড়াশোনা করছিলেন এবং কারো কাজের বিঘ্ন ঘটায়নি। তবুও ক্যাম্পাস সিকিউরিটি কর্মকর্তারা তাদের হাতে নোটিশ তুলে দেন, যেখানে বলা হয় তারা বিধ্বংসী আচরণ, নির্দেশ অমান্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় সম্পদের অপব্যবহার করেছেন।
প্রতিবাদরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দমনমূলক নীতির ফলে আরো শিক্ষার্থী প্রতিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এবং প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি দাবি করছেন।