০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:০৩:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


জি এম কাদেরের লাগামহীন বক্তব্যের খেসারত দিচ্ছে জাপা
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৬-২০২৫
জি এম কাদেরের লাগামহীন বক্তব্যের খেসারত দিচ্ছে জাপা জি এম কাদের


জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের লাগামহীন বক্তব্যের পাশাপাশি দলের ভেতরে নানান ধরনের কূটকৌশল দলকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তার অতীত ও বর্তমান বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ড জাতীয় পার্টির জন্য অত্যন্ত বিপদজ্জনকও বলে মনে করেন। দলের ভেতরে বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে দলটির ভেতরে এমন অবস্থা আঁচ করা গেছে। 

লাগামহীন বক্তব্য

সম্প্রতি রংপুর নগরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা জি এম কাদেরের বাড়ি দ্য স্কাই ভিউয়ের জানালার কাচ ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন। বলা হচ্ছে এধরনের ঘটনার সময় জি এম কাদের ওই বাড়িতে ছিলেন। আরও জানা যায়, এঘটনা ঘটনার আগে জি এম কাদের কিছু বক্তব্য দেন। তিনি রংপুর নগরীর সেন পাড়াস্থ স্কাইভিউ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপযুক্ত নির্বাচন দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, আমরা সামনের দিনে মহা বিপদের আশঙ্কা করছি। দেশ ভালোভাবে চলছে না। সবদিক থেকে সবকিছু বন্ধ হয়ে পড়েছে, সবকিছু ভেঙে পড়েছে। এছাড়া তিনি জিএম কাদের ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়া নতুন দল নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি, সরকারে থেকে দল গঠন করা যাবে না। অথচ এই সরকার দল গঠন করেছে। আইনগত বৈধতা না থাকলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তারা দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সব জায়গায় তাদের প্রায়োরিটি দেওয়া হচ্ছে। জিএম কাদের প্রশ্ন তোলেন, প্রধান উপদেষ্টা বুঝে করছেন নাকি না বুঝে করছেন জানিনা। কিন্তু উনি এবং ওনার সঙ্গে যারা তরুণ নেতৃত্ব, যাদেরকে উনি ওদের অভিভাবক ও নিয়োগকর্তা হিসেবে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, তারা মিলে দেশকে বিভক্ত করে ফেলছে। এই বিভক্তিটি দিনে দিনে খুব শক্তিশালী হচ্ছে এবং একজনের ওপর আরেকজনের সরাসরি একটি সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সামনের দিকে সেটা বড় ধরনের সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। সামনে নির্বাচন হলে কীভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে? এজন্য আমরা বিশ্বাস করি উপযুক্ত নির্বাচন দেওয়ার ক্ষমতা এই সরকারের নেই এবং এই সরকারের ইচ্ছেও নেই।

প্রতিক্রিয়া

তার এই বক্তব্য প্রচারের পর ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নগরের গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয় যে, মিছিলটি জিএম কাদেরের বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলে সেখানে অবস্থান করা জাতীয় পার্টির অতিউৎসাহী নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেয়। এতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পরিস্থিতি আর খারাপ হয়ে যায় যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের কয়েকজনকে ধরে বেধড়ক মারধর করা হয়। আর এতে উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে জিএম কাদেরের বাসার জানালার কাচ ভেঙে যায়। পরে বাসার সামনে থাকা দুইটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। 

দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা

এদিকে রংপুর নগরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা এক জায়গায় থেমে থাকেনি। দেশের বিভিন্ন স্থানে দলটির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। লালমনিরহাট শহরের আলোরূপা মোড়ে জেলা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। ভাঙচুরের শিকার বরিশাল জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়। ৩১ মে শনিবার রাতে বরিশাল নগরের ফকিরবাড়ি সড়কে ভাঙচুরের শিকার বরিশাল জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়। 

শেষ কথা ও জাপা’র আত্মপক্ষ সমর্থন

এদিকে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে এর আগে উঠা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে দলটির পক্ষ থেকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেয়া হয়। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে গিয়ে আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিয়েছে, এমন অভিযোগ খন্ডন করে জি এম কাদের বলেছেন বিভিন্ন সময়ে। বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির প্রায় ২৭০ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। বিভিন্নভাবে তাঁকে নির্বাচনে থাকতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি। তিনি বলেন, বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গেলেও ওই বছর স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে গিয়েছিল। তাহলে ২০১৪ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো কী আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দেয়নি, এমন প্রশ্ন তুলেন তিনি। তবে জাপার নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা জি এম কাদেরের পক্ষ থেকে এতো তাড়াতাড়ি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলা ঠিক হয়নি বলেই মনে করেন। আবার কাউকে মেয়র হিসাবে ক্ষমতায় বসাতে দৌঁড়ঝাপ দেওয়াও ঠিক হয়নি। কেননা দলের একটি বড়ো অংশ মনে করেন জি এম কাদেরের অতি লোভের কারণে দলের ইমেজের এমন অবস্থা। তারা মনে করেন জি এম কাদেরের লাগামহীন মন্তব্য এই সময়ে মানায় না....। কারণ এমনিতেই অভিযোগ রয়েছে যে তিনি ‘গত ১৬ বছর ধরে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচারী সরকার হিসেবে টিকিয়ে রাখতে নানাভাবে সহায়তা করেছেন। আওয়ামী লীগ আমলে অনেক আর্থিক, প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন তিনি। এছাড়া কারো কারো মতে, একটি প্রতিবেশী দেশের সাথেও অতীতে যেমন যোগাযোগ ছিল এখনও তা বজায় আছে। আর সে-ই কানেকশান বজায় রেখে আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসেবে তিনি অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছেন কি-না এমন সন্দেহ রাজনৈতিক মহলে। তা-ই দলের ত্যাগি নেতারা মনে করেন জি এম কাদেরের লাগামহীন আপাতত বন্ধ রাখা তার ও দলটির জন্য অনেক মঙ্গল।

শেয়ার করুন