১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৫:৫২:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে- নাহিদ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চারজন নিহত নিউইয়র্কে ২০ লাখ মানুষ মেডিকেইড ও ৩ লাখ পরিবার স্ন্যাপ সুবিধা হারাবে নতুন ভিসা ফিতে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি মাহমুদ খলিলের টেক্সাসের অভিবাসন আইন এসবি ৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা ফ্লোরিডার ‘সিনেট বিল ৪-সির কার্যকারিতা বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন নীতি ঘোষণা : ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন এনসিপিসহ ১৪৪ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের তথ্যে ঘাটতি


সোনার পাত্রে গোয়ার স্টোন
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৬-২০২৫
সোনার পাত্রে গোয়ার স্টোন হাবিব রহমান


নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়ামে নকশাকাটা একটা সোনার পাত্রে আছে শ্যাওলা রঙের একটি গোল পাথর। নিচে একটা বিবরণীতে লেখা আছে, এটা গোয়ার স্টোন। ঢাকনাটা খুলে পাশে রাখা আছে। ঢাকনার ওপরে একটা ময়ূর। বলা হচ্ছে, সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে এটা তৈরি হয়েছিল ভারতের গোয়ায়। বানিয়েছিল জেসুইট পাদ্রিরা।

ওই যে শ্যাওলা রঙের পাথর- সেটা একটু একটু করে চেঁছে বা ভেঙে গুঁড়ো করে জল বা চায়ের সঙ্গে খাওয়া হতো। কারণ অনেকের বিশ্বাস ছিল এতে অসুখ-বিসুখ দূর হবে। পাথরটা তৈরি করা হতো নানারকম জৈব ও অজৈব পদার্থ দিয়ে। যেমন কস্তুরী হরিণের নাভি, কোনো তৃণভোজী প্রাণীর গলব্লাডারে পাওয়া পাথর, গাছের গায়ে ঝরেপড়া আঁঠা... এ-রকম হরেক জিনিস দিয়ে।

এই পাথরটা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোনো ব্রিটিশ অফিসার গোয়া থেকে ইংল্যান্ডে নিয়ে যান। সেখান থেকে এসে ঠাঁই হয়েছে নিউইয়র্কের মিউজিয়ামে।

পেন্ট হাউজের দাম ১১ কোটি ডলার!

নিউইয়র্কের ম‍্যানহাটানে একটি পেন্ট হাউজের দাম হাঁকা হয়েছে ১১ কোটি ডলার। এ মুহূর্তে এটি নিউইয়র্ক সিটিতে বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত সবচেয়ে দামি বাড়ি।

এ সম্পত্তির দায়িত্বে থাকা সদবি’স ইন্টারন্যাশানাল রিয়েলটির ব্রোকার নিকি ফিল্ড জানান, আর্থিক বাজারের সাম্প্রতিক ঝোড়ো ওঠানামা তাদের লক্ষ্যে থাকা ক্রেতাদের প্রভাবিত করছে না। স্টেইনওয়ে টাওয়ারের চূড়ায় অবস্থিত পেন্ট হাউজ ৮০ ও পেন্ট হাউজ ৮২ একসঙ্গে বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। ইউনিট দুটি মিলে কোয়াডপ্লেক্স গঠনের এ সুযোগ বলে জানায় সদবি’স, যেখানে ব্যক্তিগত এলিভেটরের সুবিধা রয়েছে। পেন্ট হাউজের মোট ফ্লোর স্পেস ১১ হাজার ৪৮০ বর্গফুট। যার মধ্যে রয়েছে পাঁচ বেডরুম, ছয় বাথরুম, একাধিক লাউঞ্জ এবং একটি ৬১৮ বর্গফুটের টেরেস। এ টেরেস থেকে সেন্ট্রাল পার্ক এবং ম্যানহাটনের দুই পাশের নদীগুলোর বিস্তৃত দৃশ্য দেখা যায়।

নিকি ফিল্ড বলেন, ‘যদিও বর্তমানে এ দুটি ইউনিট আলাদাভাবে রয়েছে। তবে স্থাপত্যগত দিক থেকে এতে বড় ধরনের সুবিধা রয়েছে।’ চড়া দামে আবাসন বিক্রিকে নতুন প্রবণতা হিসেবে দেখছেন রিয়েল এস্টেট পরামর্শক সংস্থা মিলার স্যামুয়েলের জনাথন মিলার। তার মতে, আগে শত মিলিয়ন ডলারের তালিকাভুক্তিকে পাবলিসিটি স্টান্ট বলে ধরা হতো, এখন সে ধারা বদলেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর গড়ে চারটি ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ডলার মূল্যের আবাসন সম্পদ বিক্রি হয়। ২০২১ সালে রেকর্ড ৯টি এ ধরনের সম্পদ বিক্রি হয়েছিল। গত বছর হয়েছিল আটটি। এর মধ্যে দুটি সম্পদ ছিল নিউইয়র্কে ক্রাউন বিল্ডিংয়ে একটি ১৩ কোটি ৫০ ডলারের পেন্ট হাউজ এবং সেন্ট্রাল পার্ক টাওয়ারের ১১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের একটি ইউনিট। তবে সেন্ট্রাল পার্ক সাউথে কেন গ্রিফিনের ২০১৯ সালের ২৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সম্পত্তি ক্রয় এখনো যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে দামি আবাসন বিক্রি হিসেবে রেকর্ড ধরে রেখেছে।

মেয়েরা বদলে দেয় বাবার মনোজগত?

আগামী ১৫ জুন বাবা দিবস। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু। ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই, পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এদিনটি প্রথম পালিত হয়। আবার সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতেও পিতৃ দিবসের আইডিয়া আসে।

এক গবেষণায় জানা গেছে, মেয়েরা বাবার মনোজগতটাই বদলে দিতে পারে। বাবা-মেয়ের সম্পর্কটাই আলাদা, পৃথিবীর সব সম্পর্ক থেকে একটু বেশিই আলাদা, বিশেষ। সম্পর্কটা ভয়-শ্রদ্ধা-নির্ভরতার মিশেল। মেয়ের চোখে বাবা ‘আইডল’। বাবা কী বলেন, কীভাবে চলেন আর কী ভাবেন, সেসব মেয়ের মনে ভীষণ দাগ কাটে। তবে গবেষণা বলছে, উল্টোটাও ঘটে। মেয়ের ভাবনা, জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বাবার মূল্যবোধ আর বিশ্বাসের জগতকে নাড়িয়ে দেয়, প্রভাবিত করে, সমৃদ্ধি জোগায়।

চীনের চায়না ইউরোপিয়ান ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুল ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিয়ামি রীতিমতো গবেষণা করে দেখিয়েছে, বাবার কর্মজীবনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কন্যা কতটা প্রভাব ফেলে। এজন্য তারা ১৯৯২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ২০ বছরের তথ্যউপাত্ত ঘেঁটেছে।

জার্নাল অব ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিকসে গবেষণাটি কয়েক বছর আগে প্রকাশিত হয়। গবেষণার শিরোনাম ছিল- যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) কর্মক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানেরা কোনো ভূমিকা রাখে কি না। উত্তর পেতে ২০ বছরে সিইওরা করপোরেট সামাজিক দায়িত্ব কতটুকু আর কীভাবে পালন করেছেন, তা খুঁজে দেখা হয়।

মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস বলছে, ৩৭৯ জন সিইও আর তাদের ৯৪৩ সন্তানের তথ্য ঘাঁটলে বেরিয়ে আসে অন্যরকম তথ্য। যেসব সিইও কন্যাসন্তানের বাবা, তারা করপোরেট সামাজিক দায়িত্ব পালনে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। অন্যদের চেয়ে এ খাতে ১০ শতাংশের বেশি খরচ করেছেন। তারা কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কর্মিবান্ধব ও উদার করতে তৎপর ছিলেন। তাদের হাত ধরে চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছেন নানা আর্থসামাজিক অবস্থান থেকে উঠে আসা কর্মীরা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গগত বৈষম্য দূর করার একটা প্রচ্ছন্ন চেষ্টা তাদের ছিল। উচ্চ বেতনে নারীকর্মী নিয়োগ দিয়েছেন। সমাজ, পরিবেশ, মানবাধিকারের মতো বিষয়ে করপোরেট সামাজিক দায়িত্ব পালনে তারা ছিলেন সচেতন ও সক্রিয়।

সিইও বাবাদের জীবনে মেয়ের প্রভাব কেমন, তার বড় উদাহরণ মার্ক জাকারবার্গ। ফেসবুকের এই সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও তার স্ত্রী প্রিসিলা চ্যানের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন চ্যান জাকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ। তাদের এই দাতব্য কাজের শুরু ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর, তাদের বড় মেয়ে ম্যাক্সিমা চ্যান জাকারবার্গের জন্মের দিনে। এই দম্পতি ফেসবুকে তাদের শেয়ারের ৯৯ শতাংশ দাতব্য কাজে ব্যয়ের ঘোষণা দেন সেদিন। দুই মেয়ে ম্যাক্সিমা ও আগস্টের জন্য সুন্দর পৃথিবী নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে অর্থ ব্যয় করছেন জাকারবার্গ।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিয়াজ ফর লিডারস বলছে, একজন মেয়ে তার বাবার ভাবনাকে বদলাতে পারে। এর সপক্ষে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব আইনপ্রণেতার এক বা একাধিক মেয়ে আছে, তারা গর্ভপাতের মতো নারীর প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার বিষয়ে উদার। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির প্রসঙ্গ এসেছে। তিনি রক্ষণশীল রিপাবলিকান। রাজনৈতিক আদর্শের কারণে তার সমলিঙ্গের বিয়ের বিরোধী হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি সমলিঙ্গের বিয়ের পক্ষে ছিলেন। কারণ তার কন্যা সমকামী।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বড় মেয়ের জন্মের বছর চারেক পর সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা গেটসের সঙ্গে গড়ে তোলেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। ২০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী দরিদ্র দেশের স্বাস্থ্যখাতে অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছে। দুই মেয়ে মালিয়া ও সাশা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জীবন কতটা বদলে দিয়েছে, সে কথা তিনি নিজেই বলেছেন। বুদ্ধিদীপ্ত ও স্মার্ট দুই মেয়ের জনক হিসেবে সব সময়ই নিজেকে ভাগ্যবান বলে থাকেন তিনি। একটা ছেলের সমান সুযোগ-সুবিধা যেন একটা মেয়েও পায়, তেমন পৃথিবী গড়ার জন্য আমৃত্যু লড়ে যাওয়ার অঙ্গীকার তার।

একজন সমাজবিজ্ঞানী বলেছেন, নানা কারণে বাবারা এমন করে থাকেন। তবে সবচেয়ে বড় কারণ বোধ হয়, মেয়েদের মায়ার বাঁধনে জড়াতে পারার ক্ষমতা। মেয়েরা বাবার সঙ্গে মানসিকভাবে ছেলেদের চেয়ে অনেক বেশি জড়িয়ে থাকে। ফলে ছোটবেলা থেকেই মেয়ের ভাবনা, জীবনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতাগুলো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারেন বাবা। অন্যের হাতে থাকা সেসব প্রতিবন্ধকতার সবকটি হয়তো তিনি সমাধান করতে পারেন না, তবে নিজের সাধ্যের মধ্যে থাকা সবটুকু করতে একটুও পিছপা হন না। এভাবেই ধীরে ধীরে বদল ঘটে বাবার মনোজগতে।

০১ জুন ২০২৫

শেয়ার করুন