ঈদ মানেই এখন শুধু উৎসব নয়, বরং ওটিটি কনটেন্টের রঙিন ভান্ডারও। অভিনেত্রী রুনা খান এবারের কোরবানির ঈদে তিনটি ভিন্ন কনটেন্টে অভিনয় করে সেই আনন্দ আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। তার অভিনীত সিরিজ ও সিনেমা, পারিবারিক সময় এবং ব্যক্তিজীবনের অনুভূতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির
প্রশ্ন: ঈদে এবার লম্বা ছুটি। আপনার ঈদ কেমন কাটলো?
রুনা খান: সাধারণত ঈদ ঢাকাতেই কাটে, কিন্তু এবার পুরো পরিবার নিয়ে ঢাকার বাইরে ঈদ করছি। কারণ আমার মেয়ের স্কুলে লম্বা ছুটি পড়েছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটু বদল আনবো ঈদ উদযাপনে। পরিবার নিয়ে নতুন জায়গায় ঈদ করা মানে নতুন অভিজ্ঞতা-নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ, অন্যরকম আনন্দ।
প্রশ্ন: ঈদে তিনটি ওটিটি কনটেন্টে আপনার অভিনয়! একটু বিস্তারিত বলবেন?
রুনা খান: হ্যাঁ, এবারের ঈদে আমার অভিনীত তিনটি কাজ ওটিটিতে এসেছে, আর প্রতিটিই আলাদা রকমের।
প্রথমত, ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ (৫ জুন, হইচই)-এটি একটি ওয়েব সিরিজ, যেখানে আমাকে একদম অন্যরকম একটি চরিত্রে দেখা যাবে।
দ্বিতীয়টি, ‘পাপ কাহিনী’ (৯ জুন, আইস্ক্রিন), শাহরিয়ার নাজিম জয়ের পরিচালনায় তৈরি এই সিরিজটি নিয়েও দর্শকের মধ্যে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
তৃতীয়ত, ‘নীলপদ্ম’-এটি একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা, পরিচালনা করেছেন তৌফিক এলাহী। এই তিনটির প্রতিটি কাজেই আলাদা চরিত্রে অভিনয় করেছি, আর তিনটিই আমার কাছে খুব কাছের।
প্রশ্ন: ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’তে আপনার চরিত্রটা কেমন ছিল?
রুনা খান: আমার চরিত্রের নাম আম্বিয়া। সে একজন শক্ত মনের নারী-একটি ভাতের হোটেলের মালিক। রগচটা, দাপুটে, কিন্তু সেই কঠোরতার মধ্যে আছে এক ধরনের আন্তরিকতা। আম্বিয়া তার স্বামী আব্বাসের প্রতি অসম্ভব দুর্বল। এই ভিন্নতর মানবিক জটিলতা নিয়েই চরিত্রটি গড়া হয়েছে। নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী যখন আমাকে স্ক্রিপ্ট দেন, তিনি বলেন-রুনা, এই চরিত্রটা তোমার জন্যই লেখা হয়েছে। সেই আত্মবিশ্বাসটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
প্রশ্ন: চরিত্রটি কি অভিনয়ের দিক থেকে চ্যালেঞ্জিং ছিল?
রুনা খান: একদমই না। বরং আমি বলবো, এটি ছিল আনন্দদায়ক একটা যাত্রা। নির্মাতা ও তার টিম স্ক্রিপ্ট এতো সুন্দর ও গোছানোভাবে প্রস্তুত করেছিল, আমার কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। আমরা রিহার্সেল, লুকটেস্ট, সবকিছু সময় নিয়ে করেছি। ওয়েব সিরিজে এই প্রস্তুতির সময়টা এখন অনেকটাই বেড়েছে, যা একজন অভিনেতার জন্য ভীষণ সাহায্য করে। টিজার রিলিজের পর থেকেই দর্শকরা যেভাবে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন, সেটা সত্যিই প্রাপ্তির জায়গা।
প্রশ্ন: মোশাররফ করিমের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
রুনা খান: মোশাররফ ভাই আমার বহু বছরের সহকর্মী। আমরা একসঙ্গে বহু নাটক, ধারাবাহিক এবং সিনেমায় কাজ করেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি ভীষণ সহযোগিতাপরায়ণ। একজন কো-আর্টিস্ট হিসেবে সব সময় পাশে থাকেন, দৃশ্য আরো সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেন। ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’তে আবারও তার সঙ্গে কাজ করে নতুন করে শেখার সুযোগ পেয়েছি।
প্রশ্ন: ‘পাপ কাহিনী’ নিয়ে এতো আলোচনা কেন, মনে হয়?
রুনা খান: আমি মনে করি, এর কারণ হচ্ছে গল্পের ভিন্নতা। এখনকার দর্শক একই ধরনের গল্পে আগ্রহী নয়। তারা নতুন ভাবনা, ভিন্ন টোন এবং নতুন পরিবেশে গল্প খুঁজে বেড়ায়। ‘পাপ কাহিনী’ সেই চাহিদা মেটাতে পেরেছে। সিরিজটির নির্মাণশৈলী, চরিত্র নির্মাণ এবং গল্প বলার ধরন দর্শকদের ভালো লেগেছে, তাই এতো আলোচনা।
প্রশ্ন: শাহরিয়ার নাজিম জয় বলেছিলেন, আপনার নাকি অনেক গাড়ি, বাড়ি ও টাকা দরকার?
রুনা খান: জয় ভাই মজার মানুষ। ওনার এই পোস্টটাও রসিকতার ছলে করেছেন। আমার জীবনে বাহ্যিক কিছু দিয়ে মূল্যায়ন খুব একটা কাজ করে না। আমি সব সময় সাধারণ থাকতে পছন্দ করি। জীবনটা সহজভাবে কাটাতে চাই, সেই চেষ্টাই করি।
প্রশ্ন: ছোটবেলার কোরবানির ঈদ আর এখনকার মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
রুনা খান: ছোটবেলার ঈদ মানেই ছিল আনন্দ, হইচই আর নতুন জামার গন্ধ। নানাবাড়ি, দাদাবাড়ি যাওয়া, কাজিনদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি-এসবই ছিল ঈদের মূল আনন্দ। এখন ঈদ মানে দায়িত্বের মাঝেও কিছুটা শান্তি খুঁজে বের করা। সকালে কোরবানির কাজ, রান্নাবান্না, পরিবার সামলে হয়তো বিকালে একটু নিজের সময় বের করা যায়। বন্ধুরা আসে, আড্ডা হয়, কিন্তু সেই শৈশবের মতো একটানা আনন্দ এখন আর থাকে না।
প্রশ্ন: ঈদ শব্দটা শুনলেই এখন কী স্মৃতি প্রথম মনে পড়ে?
রুনা খান: আমার বাবা। গত ১০ মার্চ উনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এবারের রোজার ঈদ, কোরবানির ঈদ-সবই বাবাহীন। এই প্রথম আমরা দুই ভাইবোন বাবাকে ছাড়া ঈদ করছি। এই অভাব ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি পরিবারকেন্দ্রিক মানুষ। বাবা-মা, ভাই-বোন, এখন স্বামী-সন্তান-এই পরিবারই আমার জগত। বাবা ছিলেন সেই জগতের কেন্দ্র। তিনি না থাকায় প্রতিটি ঈদই এখন অসম্পূর্ণ।
প্রশ্ন: বর্তমানে আপনি কী কী প্রজেক্টে কাজ করছেন?
রুনা খান: তিনটি সিনেমার শুটিং শেষ করে রেখেছি- ১. ‘বক’ (পরিচালক: মাসুদ পথিক) ২. ‘দাফন’ (পরিচালক: কৌশিক সংকর দাশ) ৩. ‘নীলবন্ধন’ (পরিচালক: জাহিদ হোসেন)। এছাড়া সোহেল রানা বয়াতির একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘নিদ্রাসুর’-এ অভিনয় করেছি। সম্প্রতি একটি নতুন সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছি, কিন্তু নির্মাতা ও প্রযোজকের অনুরোধে এখনই নাম বলা যাচ্ছে না। এক মাসের মধ্যে ঘোষণা আসবে।
প্রশ্ন: নারী চরিত্র নিয়ে আপনার কী ভাবনা-আগে আর এখনকার মধ্যে পার্থক্য কী?
রুনা খান: আগে নারী চরিত্রগুলো প্রায়ই গল্পের পাশে থেকে যেতো। কিন্তু এখন নারীরাই হয়ে উঠছে গল্পের চালক। ওটিটি ও সিনেমার কনটেন্টে এখন নারীদের বাস্তবতা, সংগ্রাম, জটিলতা অনেক বেশি গভীরভাবে দেখানো হচ্ছে। ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’র আম্বিয়া তার বড় উদাহরণ। এখন একজন নারী শুধু পরিপাটি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে না, সে গল্পের কেন্দ্রে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন: অভিনয়ের বাইরে আপনি কীভাবে সময় কাটান?
রুনা খান: আমার সময়ের বড় অংশটাই পরিবার ঘিরে। মেয়েকে সময় দেওয়া, ভালো সিনেমা দেখা, বইপড়া-এসব আমার প্রিয় কাজ। কখনো কখনো একা সময় কাটাতেও ভালো লাগে। প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যেতে, নিরিবিলি বসে থাকতে খুব ভালোবাসি। যদিও অভিনয় আমার পেশা, কিন্তু আমি ব্যক্তিজীবনে খুবই শান্ত ও অন্তর্মুখী। নিজের মতো সময় কাটানোতেই আমার সবচেয়ে বেশি স্বস্তি।