০৩ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:৩১:০০ পূর্বাহ্ন


মাহমুদ খলিলকে মুক্তির আদেশ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৬-২০২৫
মাহমুদ খলিলকে মুক্তির আদেশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ খলিল ও খলিলের স্ত্রী মার্কিন নাগরিক ড. নূর আবদাল্লাহ


নিউজার্সির ফেডারেল বিচারক মাইকেল ফারবিয়ার্জ গত ১১ জুন এক ঐতিহাসিক রায়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ খলিলকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনপন্থী প্রতিবাদে অংশগ্রহণের জন্য মাহমুদ খলিলকে আটক করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের চেষ্টা চলছে। তবে বিচারক সরকারকে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে ১৩ জুন সকাল ৯:৩০ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। যদিও সরকার আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবু ওই সময়সীমা শেষ হওয়া পর্যন্ত আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আপিল দাখিল করেনি। খলিলের আইনজীবী রামজি কাসেম এই রায়কে খলিলের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তবে আমরা এখনো মুক্তির পূর্ণ নিশ্চয়তায় পৌঁছাইনি, যতক্ষণ না মাহমুদ তার স্ত্রী ও সন্তানের কাছে ফিরে যাচ্ছেন।

খলিলের স্ত্রী ও মার্কিন নাগরিক ড. নূর আবদাল্লাহ আশা প্রকাশ করেছেন, শুক্রবারের মধ্যে মাহমুদ নিউইয়র্কে ফিরতে পারবেন এবং তাদের সদ্যোজাত পুত্র দীনের সঙ্গে তার প্রথম ফাদার্স ডে উদযাপন করতে পারবেন। খলিলের মুক্তির পেছনে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ নিশ্চিত করেছে যে তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। বিভাগের মুখপাত্র ট্রিশা ম্যাকলাফলিন বলেন, আজকের রায় ন্যায়বিচার বিলম্বিত করছে এবং সংবিধানের আর্টিকেল টু-এর অধীনে প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতাকে খর্ব করার চেষ্টা করছে। আমরা আশা করি উচ্চতর আদালত আমাদের অবস্থানকে সমর্থন করবে।

খলিলকে ৮ মার্চ, বিশ্ববিদ্যালয়-নিয়ন্ত্রিত অ্যাপার্টমেন্টের লবিতে গ্রেফতার করা হয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের অংশ হিসেবে এটি ছিল প্রথম গ্রেফতার। পরে তাকে হাজার মাইল দূরে লুইজিয়ানার একটি ফেডারেল ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। খলিলের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, তার গ্রেফতার অবৈধ এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করার একটি চেষ্টা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একটি দুর্লভ আইনের উল্লেখ করে খলিলকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে দাঁড়ান, যেখানে বলা হয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে ‘গুরুতর ক্ষতিকর প্রভাব’ ফেলতে পারে, তাদের নির্বাসন দেওয়া যেতে পারে।

তবে বিচারক ফারবিয়ার্জ পূর্ববর্তী এক রায়ে বলেছিলেন, এই ভিত্তিতে খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা সাংবিধানিকভাবে সন্দেহজনক। সর্বশেষ রায়ে তিনি উল্লেখ করেন, খলিলের আটকে রাখা তার পেশাগত জীবন, পরিবার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় অপূরণীয় ক্ষতি করছে। রায়ে বলা হয়েছে, খলিলের গ্রিনকার্ড বাতিলের ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম তাকে নীতি পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ থেকে বিরত থাকে। বিচারকের মতে, এই ক্ষতি সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত বাকস্বাধীনতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

ইউএস অ্যাটর্নি দাবি করেছে, খলিল তার গ্রিনকার্ড আবেদনে কিছু তথ্য গোপন করেছেন। তবে বিচারক বলেন, এমন অভিযোগে সাধারণত গ্রিনকার্ডধারীদের আটক করা হয় না। খলিল নিজেও আদালতে বলেন, তিনি জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার কর্মকর্তা ছিলেন না, বরং তার বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত একটি ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করেছেন। এই রায়ের আগে আরো কয়েকজন রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় আইনি বাসিন্দা, যাদের ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থানের কারণে আটক করা হয়েছিল, তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন কলম্বিয়ার আরেক ছাত্র মোহসেন মাহদাবি, টাফটস ইউনিভার্সিটির রুমাইসা ওজতুর্ক এবং জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির গবেষক বাদার খান সুরি। গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় খলিলের বিরুদ্ধে কোনো আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়নি। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, এমন আন্দোলনকারীরা ‘আন্তিসেমিটিক’ ও ‘প্রো-হামাস’ মনোভাব প্রকাশ করছেন। তবে এই অভিযোগের পক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

খলিল ছিলেন আন্দোলনকারীদের অন্যতম মুখপাত্র ও আলোচক এবং সংবাদমাধ্যমে তার সক্রিয় উপস্থিতির কারণেই তিনি প্রশাসনের নজরে আসেন। এই রায় যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অভিবাসী অধিকারের সুরক্ষা এবং নির্বাসনের দমনমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ আইনি প্রতিরোধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, শুক্রবারের মধ্যে সরকারের আপিল কী ফলাফল বয়ে আনে এবং খলিল আদৌ তার পরিবারে ফিরতে পারবেন কি না। মাহমুদ খালিলের অবৈধ আইসিই আটক থেকে মুক্তির দাবিতে ফের আদালতে আবেদন মাহমুদ খালিলের আইনজীবীরা গত ১৬ জুন আবারও তার তাৎক্ষণিক মুক্তির জন্য নিউজার্সির ফেডারেল আদালতে আবেদন করেছেন। নিউজার্সিতে বসবাসকারী এ ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন গ্রিনকার্ডধারীকে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) কর্তৃক লুইজিয়ানার একটি দূরবর্তী আটক কেন্দ্রে আটকে রাখা হয়েছে, যা তার আইনজীবীরা অবৈধ ও প্রতিশোধমূলক বলে দাবি করছেন। গত ১৪ জুন আদালতের আদেশ অনুযায়ী, শুধু সেক্রেটারি অব স্টেটের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কাউকে আটক করা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়। এরপরও সরকার খালিলের গ্রিনকার্ড আবেদনে তথাকথিত ‘ভুল তথ্য প্রদান’-এর অভিযোগে তাকে আটক রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। খালিলের আইনজীবীরা একে ‘মিথ্যা ও অজুহাতপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে এটি সরকারের পক্ষ থেকে তার মতপ্রকাশের অধিকারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ।

খালিলের পক্ষে কাজ করা সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস, এসিএলইউ, নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এনওয়াইসিএলইউ), ক্লিয়ার প্রজেক্টসহ একাধিক সংগঠন বলেছে, সরকার অত্যন্ত অস্বাভাবিক একটি অভিযোগের ভিত্তিতে একজন স্থায়ী বাসিন্দাকে আটক রেখেছে। এটি আরো প্রমাণ করে যে খালিলের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ তার ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে কথা বলার কারণেই নেওয়া হয়েছে। নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের অভিবাসী অধিকার বিভাগের পরিচালক অ্যামি বেলশার বলেন, মাহমুদের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং প্রতিশোধমূলক। তার মুক্তি বিলম্বিত করার জন্য সরকার মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে শুধু সময়ক্ষেপণ করছে।

আইনজীবীরা আদালতকে জানিয়েছেন, খালিল পালানোর ঝুঁকিতে নেই এবং তিনি কারো জন্য হুমকিও নন। তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ অত্যন্ত দুর্লভ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মাহমুদ খালিলের পক্ষের আইনজীবী মার্ক ভ্যান ডার হাউট বলেন, এই ধরনের অভিযোগে কাউকে আটক রাখা অস্বাভাবিক এবং অন্যায্য। তার বিরুদ্ধে সরকারের পূর্বের অভিযোগ ইতিমধ্যেই বাতিল হয়েছে। এখন তাকে আটকে রাখার আর কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই।

শেয়ার করুন