যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে গত ২৭ জুন জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বিতর্কিত রায় ঘোষণার পরই, অভিবাসী অধিকার রক্ষাকারী সংগঠনগুলো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে একটি নতুন দেশব্যাপী ক্লাস-অ্যাকশন মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি ‘বারবারা বনাম ট্রাম্প’ শিরোনামে নিউ হ্যাম্পশায়ার ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে দায়ের করা হয়েছে।
এই মামলাটি যৌথভাবে দায়ের করেছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ), এসিএলইউ অফ নিউ হ্যাম্পশায়ার, এসিএলইউ অফ মেইন, এসিএলইউ অফ ম্যাসাচুসেটস, লিগাল ডিফেন্স ফান্ড, এশিয়ান ল ককাস এবং ডেমোক্রেসি ডিফেন্ডার্স ফান্ড। মামলাটি প্রস্তাবিত একটি শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করছেসেই সকল নবজাতক এবং তাদের বাবা-মা, যারা ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের আওতায় নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এর আগে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নিউ হ্যাম্পশায়ার ফেডারেল কোর্টেই একটি অনুরূপ মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যেখানে বাদী ছিলেন নিউ হ্যাম্পশায়ার ইন্দোনেশিয়ান কমিউনিটি সাপোর্ট, লিগ অব ইউনাইটেড ল্যাটিন আমেরিকান সিটিজেনস (লুলাক) এবং মেক দ্য রোড নিউ ইয়র্কের সদস্যরা। সেই মামলায় আংশিক রায় দিয়ে বাদীদের সাময়িক সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছিল এবং সেটি বর্তমানে ফার্স্ট সার্কিট কোর্ট অফ অ্যাপিলসে বিচারাধীন। মামলার মৌখিক শুনানি আগামী ১ আগস্ট নির্ধারিত আছে। সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের কারণে পূর্ববর্তী তিনটি মামলার আওতায় থাকা সর্বজনীন স্থগিতাদেশ এখন সীমিত পরিসরে কার্যকর, যার ফলে অনেক পরিবার আইনি সুরক্ষা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। নতুন মামলাটি সেই ফাঁকগুলো পূরণ করতে এবং সমগ্র দেশের পরিবারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই দায়ের করা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, যারা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করে এবং এখানকার বিচারিক আওতাধীন থাকে, তারা মার্কিন নাগরিক। এই সংবিধানিক ধারা স্পষ্টভাবে বলে দেয়, কেবল বিদেশি কূটনীতিকদের সন্তানরা এই অধিকার থেকে বাদ পড়বে। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ এই সাংবিধানিক নিশ্চয়তাকেই অস্বীকার করে বলে মামলায় অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এসিএলইউর অভিবাসী অধিকার প্রকল্পের উপপরিচালক কোডি ওফসি বলেন, এই নিষ্ঠুর আদেশকে যেসব আদালত খতিয়ে দেখেছে, তারা সবাই একে অসাংবিধানিক বলেছে। সুপ্রিম কোর্টও এই আদেশকে বৈধতা দেয়নি। আমরা লড়ছি যেন কোনো শিশুর নাগরিকত্ব অধিকার কেড়ে নেওয়া না হয়।
এসিএলইউ নিউ হ্যাম্পশায়ারের নির্বাহী পরিচালক ডেভন চাফি বলেন, এই নির্বাহী আদেশ আমাদের সংবিধান, মূল্যবোধ এবং ইতিহাসের পরিপন্থী। এটি আমেরিকায় জন্ম নেওয়া শিশুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকত্বে পরিণত করতে চায়।
লিগ্যাল ডিফেন্স ফান্ডের পরিচালক কারলা ম্যাকক্যান্ডার্স বলেন, এই আদেশ জাতিগত বৈষম্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চায়। আমরা এর বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। এশিয়ান ল ককাসের নির্বাহী পরিচালক আরতি কোহলি বলেন, ‘আমরা জানি নাগরিকত্ব যখন বৈষম্যের অস্ত্র হয়ে ওঠে, তখন তার পরিণতি কতটা ভয়াবহ হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা এই সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় একতাবদ্ধ। এসিএলইউ মেইনের নির্বাহী পরিচালক মলি কারেন রোলস বলেন, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ ১৪তম সংশোধনীর স্পষ্ট ভাষার বিরুদ্ধে যায় এবং আমেরিকার মৌলিক নীতিকে অবজ্ঞা করে।
বাদী পক্ষের দাবি, এই নির্বাহী আদেশ লক্ষাধিক নবজাতককে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে একটি স্থায়ী, বৈষম্যপূর্ণ শ্রেণি তৈরি করবে। তারা জানিয়েছে, আইনের সব পথ ব্যবহার করে এই আদেশের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার যাতে অটুট থাকে, তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।