২৫ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ১০:০১:০৯ অপরাহ্ন


কি হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৭-২০২৫
কি হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক


কি হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে তা নিয়ে দেশে এখনো জল্পনা কল্পনা শেষ নেই। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে হবে কি-না তা নিয়ে বিস্তর সন্দেহ রাজনৈতিক দলগুলি মধ্যে। এর মধ্যে গোপনে প্রকাশ্যে চলছে বিভিন্ন ধরনের গোপন বৈঠক। চলছে কূটনৈতিক পাড়ার নানান ধরনের নড়াচড়া।

রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ করে ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মুখে ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা দেশে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর নানান ধরনের আলোচনা তুঙ্গে। শেখ হাসিনার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনুস ৮ই আগস্ট ২০২৪ সাল থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার দাযিত্ব গ্রহণের পর বলা চলে ১৭ বছর ধরে যেসব রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ছিল তারা ক্ষমতা গ্রহণের পরপর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে সাক্ষাৎ করে আসেন। এরপর পর্দার আড়ালে বিভিন্ন কথা বার্তা শোনা যায়। 

শোনা যায় একটি জাতীয় সরকারের গঠনের নানান কলাকৌশল। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কট্টর অবস্থান নেয় বিএনপি। বিএনপি এখানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায়। দলটি মনে করে জাতীয় সরকার গঠন করলে লাভবান হবে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি ধারণা যে ফরমটেরেই হোক না কেনো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের নিরুঙ্কুশ বিজয় হচ্ছেই। এর বিপরীতে জামায়াত কিছু আসন পাবে বলে তারা জাতীয় সরকার বা এধরনের কিছু একটা করে আগে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। কিন্তু বিএনপি’র পাশাপাশি তার সাথে দীর্ঘদিন ধরে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের উদার ও প্রগতিশীল দলটি একাট্টা হয়। 

তারাও জাতীয় সরকারের আদলে কোনো ধরনের সরকার গঠনে আগ্রহ দেখায় না। ফলে জামায়াত বিপদে পড়ে এবং নতুন রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে মাঠে নামে। তা হলো সংস্কার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে প্রচার চালাতে থাকে। যদিও প্রথমে সবদলই প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করে আসে। কিন্তু অল্প কয়েকদিন পরেই শুরু হয় দ্রুত নির্বাচনের দাবি। এই দাবিতে প্রথমে বিএনপি’ই জোরালো অবস্থান নেয়। কিন্তু এর বিপরীতে চলে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান। তারা দাবি জানাতে থাকে সংস্কার ছাড়া কোনোভাবেই নির্বাচন চায় না। 

কিন্তু এই প্রচারণা থমকে যায় লন্ডনে বৈঠকের পরপর। সম্প্রতি লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। বৈঠকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে দুই প্রধান ব্যক্তির ওয়ান টু ওয়ান বৈঠক। এসময় ধরে নেয়া হয় যে ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু লন্ডনে জামায়াতকে ছাড়া নির্বাচনের ইস্যুতে এমন বৈঠকে রাজনৈতিক অঙ্গনে দলটি বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। এরমধ্যে এখন মাঠে বক্তব্য জোড়ালো করা হচ্ছে ‘জুলাই সনদ’ ছাড়া নির্বাচন হবে না।

 তবে সর্বশেষ জানা গেলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, হাতে সময় কম। কিছু বিষয়ে ঐকমত্য না হলে এগোনো যাবে না। দীর্ঘ আলোচনা করার সুযোগ নেই। জুলাই সনদ তৈরিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে জুলাই সনদ হয়েছে কি-না বা সমাপ্তের পথে এমনটা তিনি জোর দিয়ে বলেননি। 

এরইমধ্যে গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়। ১ জুলাই থেকে সারা দেশে মাসব্যাপী জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ ঘোষণা করেছিল এনসিপি। এই কর্মসূচি ঘিরে ওইদিন সকাল নয়টার পর থেকে বিকেল পর্যন্ত চার দফায় হামলা চালায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে অনেক কিছুর বার্তা দিয়ে গেছে। 

তবে গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির কর্মসূচি নিয়ে যেমন তোলপাড় বইছে তেমনি তাদের দলের একজন নেতার মুখে এমন অকাট্য সত্য কথা বেরিয়ে পড়া নিয়েও নানান গুঞ্জন হাটে মাঠে ঘাটে..। কেননা দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা এক ধরনের ডিফিকাল্টির মধ্যে আছি। আপনারা দেখেছেন, গোপালগঞ্জে আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় নানাভাবে বাধা আসছে।’ তারা কি ধরনের ডিফিকাল্টির মধ্যে আছেন না-কি তাদের সাথে ওই সময়ে যারা সহযোগিতা করেছেন তা বিপাকে আছেন কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।

চীন সফরের হিড়িক

এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে দফায় দফায় চীন সফরের হিড়িক। সর্বশেষ চীন সরকার ও সিপিসির (চীনা কমিউনিস্ট পার্টি) আমন্ত্রণে দেশটিতে গেলেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এর আগে গত বছরের অগাস্টে বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফায় চীন সফর করেছে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির বেশ কয়েকটি প্রতিনিধি দল। সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দশ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের চীন সফর করেছে।

চীন সফরের পরই জামায়াতের সমাবেশ

এদিকে চীন সরকার ও সিপিসির (চীনা কমিউনিস্ট পার্টি) আমন্ত্রণে দেশটিতে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সফর করে আসার পরই গত ১৯ জুলাই শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতীয় সমাবেশের আয়োজন করে। 

মার্কিনীদের রশি টানাটানি

রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন চীন সফরের হিড়িক তখনই দেখা গেলো জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি এ্যান জ্যাকবসন। তবে ২১ জুলাই সোমবারের রাজধানীর মগবাজারে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের প্রথমবারের মতো ছিলেন জামায়াতের নারী নেতারাও। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচনা। কেনো চীন সফরের পরপরই জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি এ্যান জ্যাকবসন? কারো কারো মতে, চীনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলির বেশি বেশি ঝোক কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে পৃথিবীর শক্তিধর এই দেশটি পক্ষ থেকে। ইতোমধ্যে এই খবর জানা গেছে যে, কেবল বাণিজ্য নয়, বৃহত্তর কৌশলগত ক্ষেত্রেও ঢাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চায় ওয়াশিংটন। এর কারণে হচ্ছে বাংলাদেশ যেন চীনের দিকে অতিরিক্ত না ঝোঁকে। পাশাপাশি ঢাকা যাতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কৌশলের (আইপিএস) পক্ষে থাকে সেটিও চায় যুক্তরাষ্ট্র। আবার দেখা যাচ্ছে খবর বেরিয়েছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী অভিন্ন নিরাপত্তা লক্ষ্য জোরদারের লক্ষ্যে কয়েক দফা যৌথ সামরিক মহড়ার খবর। 

এনিয়ে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী অভিন্ন নিরাপত্তা লক্ষ্য জোরদারের লক্ষ্যে কয়েক দফা যৌথ সামরিক মহড়ার এবং একটি নতুন সক্ষমতা প্রবর্তনের মাধ্যমে এই গ্রীষ্মে তাদের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব আরও শক্তিশালী করবে। মার্কিন দূতাবাস গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশকে আরও শক্তিশালী এবং অঞ্চলটিকে আরও নিরাপদ করতে সহায়তা করা। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে খবরগুলি অনেক কিছুরই ইঙ্গিত করে। সেক্ষেত্রে চীন সফরের পরপরই জামায়াতের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি এ্যান জ্যাকবসনের বৈঠক অনেক কিছুরই বার্তা দেয়। হতে পারে দলগুলির এমন আচরণের বিপরীতে শক্তিধর দেশটি আপাতত সৌজন্যমূলক সর্তকতা জারি। 

আসলে হচ্ছে কি

একের পর ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক কিছুরই বার্তা দিচ্ছে। কারো কারো মতে বা ধারণা এই অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে কেমন জানি হাল ছেড়ে দেওয়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কার জন্য কি করা হবে- এমন হতাশ ভাব তাদের মধ্যে? হয়তবা তারা ভাবনায় যে, একটা অস্থির জাতির স্বপ্ন পুরণ চাট্টিখানি কথা না। তাই হয়তবা এদের গা ছাড়া ভাব থাকতে পারে। কেননা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা নিয়ে নানান ধরনের কথা গণমাধ্যমে এসেছে। এসব বিষয়ে কারো কারো মতে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবহেলা বা গাছাড়া ভাব আছে। যুক্তরাষ্ট্র গত ২ এপ্রিল দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। ওই দিন ৬০টি দেশের পণ্য আমদানিতে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ৯ এপ্রিল তা তিন মাসের জন্য স্থগিতও করে যুক্তরাষ্ট্র। জানা গেছে, এনিয়ে এখনো ভালো কিছু আশা করা হচ্ছে না বলে অনেকে মনে করেন। সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টিপাট রেখে কারো কারো মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের একেবারে শীর্ষপর্যায়ে কারো কারো মনোমানিল্য আছে কিছু বিষয়ে। অন্যদিকে জুলাই সনদ নিয়ে পানি ঘোলা করা হবে বলে কারো কারো আশঙ্কা। কারো মতে, পুরো বিষয়গুলির সমাধানের একটি দৃশ্যমান প্লট হয়তবা দেখা যাবে আগামী দুইএকমাসের মধ্যে। এখন দেখা যাক কি আছে সামনে.. বা কি ঘটতে যাচ্ছে...।

শেয়ার করুন