৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৪১:৫৬ অপরাহ্ন


নাগরিকত্বের জন্য আমেরিকাবিরোধী বিষয় এখন যাচাই বাধ্যতামূলক
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৮-২০২৫
নাগরিকত্বের জন্য আমেরিকাবিরোধী বিষয় এখন যাচাই বাধ্যতামূলক ইউএসসিআইএস


ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসনের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা জারি করেছে। এই নীতিমালায় আবেদনকারীদের ‘ভালো নৈতিক চরিত্র’ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং তারা আমেরিকাবিরোধী আদর্শে বিশ্বাসী কিনা, তা যাচাইয়ের জন্য অভিবাসন কর্মকর্তাদের ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা (ইউএসসিআইএস) আগস্ট মাসে দুটি পৃথক নোটিশে জানায়, এখন থেকে শিক্ষার্থী ও কর্মী ভিসা, গ্রিনকার্ড এবং নাগরিকত্বের আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে দেখা হবে। এতে খোঁজা হবে তাদের পোস্ট, মতামত বা কার্যকলাপে কোনো আমেরিকাবিরোধী কিংবা ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাব রয়েছে কি না।

তবে এই নতুন নীতিমালায় স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি আমেরিকাবিরোধী কার্যকলাপ বলতে কী বোঝানো হয়েছে। ইউএসসিআইএসের মুখপাত্র ম্যাথিউ ট্র্যাগেসার এক বিবৃতিতে বলেন, যারা আমেরিকাকে ঘৃণা করে এবং আমেরিকাবিরোধী আদর্শ প্রচার করে, তাদের জন্য দেশের সুবিধা নয়। ইউএসসিআইএস ১৫ আগস্ট দেওয়া আরেক ঘোষণায় জানিয়েছে, নাগরিকত্ব আবেদনকারীদের সামগ্রিক আচরণ বিশ্লেষণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক মানদণ্ডে তাদের আনুগত্য এবং ইতিবাচক অবদান যাচাই, যা দিয়ে আবেদনকারীদের ভাল নৈতিক চরিত্র রয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করা হবে।

এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন নাগরিক অধিকারকর্মীরা। তারা বলছেন, অস্পষ্ট এই নীতিমালা অভিবাসন কর্মকর্তাদের চিন্তাভাবনার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেবে, যা ধর্মীয় বা রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে লোকজনকে হয়রানির মুখে ফেলতে পারে। ক্যাটো ইনস্টিটিউটের অভিবাসন গবেষণা পরিচালক ডেভিড বিয়ার বলেন, ভালো নৈতিক চরিত্র কিংবা আমেরিকাবিরোধী আদর্শ কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে তা অস্পষ্ট। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এতে বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া আরো দীর্ঘ ও জটিল হয়ে উঠবে। কেয়ারের সরকারি সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক রবার্ট ম্যাকক বলেন, এই নীতির পেছনে ফিলিস্তিন-বিরোধী পক্ষপাত রয়েছে এবং এটি বাস্তবে এক ধরনের মতাদর্শগত পরীক্ষা। তিনি বলেন, একজন অভিবাসী যেন তার বিবেক ও অভিবাসন মর্যাদার মধ্যে থেকে কোনো একটিকে বেছে নিতে বাধ্য না হন।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ চলাকালীন ফিলিস্তিনি অধিকার সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের বহিষ্কারের চেষ্টাও এই নীতির অংশ বলেই মনে করছেন অনেকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু বিক্ষোভকে ইহুদিবিদ্বেষী বলে অভিহিত করা হয়েছে। এদিকে, রক্ষণশীল সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজ-এর এলিজাবেথ জ্যাকবস বলেন, ইউএসসিআইএস আগে থেকেই আবেদনকারীদের সন্ত্রাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখে। তবে এখন তারা আমেরিকাবিরোধী আদর্শ নিয়ে আরও প্রকাশ্য ও জোরালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

প্রতি বছর ইউএসসিআইএস লাখ লাখ গ্রিন কার্ড, কর্মসংস্থান অনুমতি ও নাগরিকত্ব আবেদন পর্যালোচনা করে। নতুন এই নিয়মের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন প্রক্রিয়ায় আরো একটি স্তরের যাচাই-বাছাই যুক্ত হলো, যা অনেকের মতে রাজনৈতিক ও আদর্শিক পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্তের ঝুঁকি তৈরি করছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করছে, এই নীতির মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে এবং অভিবাসীরা রাজনৈতিক মতের কারণে বৈষম্যের শিকার হতে পারেন। ফলে বৈধ উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ও নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ আরো কঠিন হয়ে উঠবে।

শেয়ার করুন