০২ জুলাই ২০১২, মঙ্গলবার, ৬:৫৮:০৪ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৫-২০২৪
বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত


বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি (হ্যাকিং) করে নিয়েছে ভারতীয় হ্যাকাররা। ভারতীয় এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ খবরটি সত্য নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৪ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের দফতর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, একটি ভারতীয় সংবাদপত্র নতুন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হওয়ার খবর প্রকাশ করেছে। সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এটি ভুল সংবাদ (ফেক নিউজ)। বর্তমানে রিজার্ভ ব্যাংক ফেডের সঙ্গে আমাদের তিন স্তরের কনফারমেশন পলিসি রয়েছে। যার মাধ্যেমে নিয়মিত লেনদেন তদারক করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, রিজার্ভ চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি।

প্রসঙ্গত, নর্থইস্ট নিউজ নামক ভারতীয় নিউজপোর্টালে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, চলতি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে। যাতে ভারতীয় হ্যাকারদের সন্দেহ করা হচ্ছে। উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এই ঘটনার গোপন তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি। খবরে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

এর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।

বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপিন্সের মাকাতি শহরে রিজল কর্মাশিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে। অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়। ফিলরেম মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তার কোনো হদিস মেলেনি।

২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বর্তমানে মামলা চলছে। সেসময়ের খবরও ফিলিপাইনসহ বিদেশি সংবাদমাধ্যমের মরফত জানাজানি হয়। 

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে বেশ কিছুদিনই একের পর এক খবর বের হচ্ছে। একসঙ্গে ৫৭ জন অফিসারের চাকরি ছেড়ে দেওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকে খবর সংগ্রহে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ঘটনায় সবার দৃষ্টি এ মতিঝিলস্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংক পানে। কী ঘটেছে। আবারও কিছু কী হয়েছে? পাশাপাশি রিজার্ভ তলানিতে। (ব্যবহারযোগ্য ১৩ বিলিয়ন) ডলার সংকট ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি সবকিছু নিয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি সর্বত্র! আসলেই কী এ নিয়ে জনমনে সঠিক উত্তর মিলছে না। রাজনৈতিক মহলেও তোলপাড়। 

সেন্ট্রাল ব্যাংকে সাংবাদিকরা ঢুকবে কেন? 

পৃথিবীর কোন দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকে অবাধে সাংবাদিকরা ঢুকতে পারে-এমন প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সব ওয়েবসাইটে আছে। আপনার জানার বিষয়, আপনি ভেতরে ঢুকবেন কেন?

আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৮ মে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

দেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে এখন ১৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসায় সরকার উদ্বিগ্ন কি না সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, কে বললো আপনাকে ১৩ বিলিয়ন ডলার? নিউজে বলছে, সাংবাদিকদের এমন উত্তরে তিনি বলেন, ‘কোন নিউজে বলছে আপনাকে?’ আমাদের কাছে হিসাব আছে। তখন সাংবাদিকরা বলেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, ব্যবহার করার মতো ১৩ বিলিয়ন ডলার আছে। তখন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাহলে গভর্নরকে জিগ্যেস করুন যে, কী কারণে এটা এই পর্যায়ে এলো? আমরা তো এটা জানি না, আমরা জানি ১৯ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার, এর মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

সাংবাদিকদের তো বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে দেয় না, তাহলে গভর্নরকে জিগ্যেস করবো কীভাবেÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে সেন্ট্রাল ব্যাংকে ঢুকতে পারছে অবাধে? কোন দেশে? ভারতের ফেডারেল ব্যাংকে কি অবাধে ঢুকতে পারছে কেউ? কেন ঢুকবে? সব ওয়েবসাইটে আছে। আপনার জানার বিষয়, আপনি ভেতরে ঢুকবেন কেন?

রিজার্ভ কমে ১৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসায় অর্থনীতিবিদরা অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কয় বিলিয়ন ডলার নিয়ে আমরা স্বাধীনতার পর যাত্রা শুরু করেছি। ডলার ছিল আমাদের? বিএনপি কয় বিলিয়ন ডলার রেখে গেছে আমাদের? তিন বিলিয়ন প্লাস। তাহলে এখন ১৯-২০ বিলিয়ন ডলার আছে এটা কি কম নাকি? এখন আমাদের রফতানি আয় বাড়ছে, রেমিট্যান্সও বাড়ছে এই মুহূর্তের যে প্রবণতা। এগুলো বাড়লে রিজার্ভও বাড়বে।

‘যে কোনো সময় ব্যাপক ধস নামতে পারে’

বাংলাদেশের আর্থিক খাত রেড জোনে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল। যে কোনো সময় ব্যাপক ধস নামতে পারে। এমন মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলি আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা মনে করি এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে দেশ আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে বাধ্য। হয়তো নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে।

গত ১৮ মে মগবাজারস্থ নিজের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি এসব কথা বলেন। অলি আহমেদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ আশঙ্কাজনক হারে প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। দেশি মুদ্রার তারল্য সংকট প্রতীয়মান। বাণিজ্যে বিরাজ করছে স্থবিরতা। দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যর্থতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে। গত দুই বছরে টাকার মান কমেছে ৩৮ থেকে ৫১ শতাংশ, টাকার প্রবাহও হ্রাস পেয়েছে। ব্যাংকগুলোয় টাকার হিসাবে গরমিল দেখা দিয়েছে। আর্থিক খাতে বাংলাদেশ রেড জোনে প্রবেশ করেছে। সুতরাং আর্থিক ঝুঁকি খুবই বড়।

বাংলাদেশ ব্যাংক কি ‘নিষিদ্ধ পল্লি’?

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কী তাহলে ‘নিষিদ্ধ পল্লি’? সেখানে সাংবাদিকদের কেন প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এজন্য সাংবাদিকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ১৮ মে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জিয়া মঞ্চের ঢাকা বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রয়োজনে আমরাও তাদের জন্য রাজপথে নামব। কারণ সাংবাদিক কোনো দলের জন্য নয়। আজকে সাগর-রুনির মামলার রায় ১০৯ বার পেছনে হয়েছে। এটা তো আরো পেছাবে তা প্রক্রিয়াটা দেখলেই বোঝা যায়।

গয়েশ্বর বলেন, রাজনীতি মানেই জনসেবা। নিজের জীবনের জন্য নয়; কিন্তু আজকে রাজনীতি হয়ে গেছে ট্রেডিংয়ের মতো। যেমন-ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উপমহাদেশে করেছিল। আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে কেনো? তারা ব্যবসা করছে। লুট করছে। আজকে আমাদের দেশের টাকা হ্যাক হয়ে যায় কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ জানে না। পাশের দেশে খবর প্রকাশের পর জানতে হচ্ছে। তবে টাকা যে হ্যাক হয়েছে সেটা তাদের চেহারা দেখলেই বোঝা যায়। 

‘বিলিয়ন বিলিয়ন হ্যাক হয়ে গেছে’ 

বিএনপির যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা একটা শূন্য গহ্বরের ভেতর যেন বসবাস করছি। আমাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। কীসের ওপর দাঁড়িয়ে আছি তার নিজেরাই বলতে পারবো না। শুধু ব্যাংক থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। এটা আমার নয়, সিডিপির বক্তব্য। আমাদের জিডিপি ১২ শতাংশ নাই হয়ে গেছে। ৯২ হাজার কোটি টাকা শুধু ব্যাংক থেকে লোপাট হয়ে গেছে। লোপাটকারী সবাই ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়স্বজন ও কাছের লোক।

‘রিজার্ভ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার উধাও করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেন, এখন তলানিতে রিজার্ভ। সরকার বলছে, ১৩ বিলিয়ন ডলার আছে। অথচ যারা সচেতন মানুষ তারা বলছেন ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার আছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের ঋণ পরিশোধ করতে ৪ বিলিয়ন ডলার যাবে; রিজার্ভ তো তলানিতেই।

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, এক ক্ষুধায় জরাজীর্ণ কৃষ্ণ নারীর মুখে লিপস্টিক দিলে যা হয়, এ সরকারের উন্নয়ন হচ্ছে সেই ধরনের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, ব্যাংক কি সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্ট, রেস্ট্রিকটেড ক্যান্টনমেন্ট? ক্যান্টনমেন্টে তো বৈধ মানুষ যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক তো জনগণের আমানত রক্ষার প্রতিষ্ঠান। এখানে সাংবাদিকরা তো যেতে পারে। সাংবাদিকরা তো দেশের বাইরে কানাডা, মালয়েশিয়া, দুবাইয়ে বাড়ি করেনি। ওবায়দুল সাহেব আপনি এসব কী কথা বলছেন। আপনাদের কাছের লোক যারা ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে ধনসম্পদের মালিক হয়েছেন, দেশের বাইরে বাড়ি করেছেন, তাদের কথা সাংবাদিকরা যেন না জানতে পারেন, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

ঘটনা তো নিশ্চয়ই কিছু ঘটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় একটি পত্রিকা লিখলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হ্যাক হয়ে গেছে। ব্যাংক তো একটা স্টেটমেন্ট দিলো, কারণ তারা সরকারের চাকরি করেন। সরকার যা বলবে তাদের তাই শুনতে হবে; কিন্তু মূল ঘটনা কি আড়াল করা যাবে সাংবাদিকদের ঢুকতে না দিয়ে? কাদের সাহেব কত দিন আপনি মুখ লুকিয়ে রাখবেন। যে নাশকতার কথা একজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, সেটি তো দিনকে দিন ফুটে উঠছে। ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে না, তাহলে কি মাফিয়া, মাস্তান, ঋণখেলাপিরা ঢুকবে-আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে এমন প্রশ্ন ছোড়েন রিজভী। 

‘রিজার্ভ সংকট জাতির জন্য অশনিসংকেত’

দেশের চলমান অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও রিজার্ভ সংকট জাতির জন্য অশনিসংকেত বলে মন্তব্য করেছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষনেতারা। তারা বলছেন, দেশের আর্থিক খাতে তা-ব চালাচ্ছে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার। বাংলাদেশের রিজার্ভ শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। বিদেশি সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের নিশ্চুপ ভূমিকা জনগণের কাছে রহস্যজনক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদকর্মীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা একই সূত্রে গাঁথা।

রোববার (১৯ মে) বিকেলে রাজধানীর খিলগাঁও জোটপ্রধান মোস্তফা জামাল হায়দারের কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের চলমান সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা করণীয় নির্ধারণে ১২ দলীয় জোটের গুরুত্বপূর্ণ সভায় তারা এসব কথা বলেন। 

টিআইবির উদ্বেগ 

আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের অর্থের শেষ অবলম্বন বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন পদক্ষেপকে জনস্বার্থে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের তথ্য প্রকাশে গণমাধ্যমের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করেছে সংস্থাটি এবং দ্রুত তা প্রত্যাহারের আহ্বানও জানিয়েছে তারা।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘খেলাপি ঋণ, আর্থিক প্রতারণা ও জালিয়াতি এবং সার্বিক সুশাসনের অভাবসহ নানা সংকটে ব্যাংকিং খাত যখন জর্জরিত, তখন তথ্যের অবাধপ্রবাহ বন্ধের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্ব সবার কাছে কী বার্তা দিতে চান? কিংবা এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক কী অর্জন করতে চায়? তবে কি খাদের কিনারায় উপনীত ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিজেদের ব্যর্থতার তথ্য গোপন করতেই এই উদ্যোগ? নাকি যারা ঋণখেলাপি ও জালিয়াতিসহ এ খাতের সংকটের জন্য দায়ী, তাদের স্বার্থ সুরক্ষার প্রয়াস এটি।’

তিনি বলেন, ‘তবে কি ধরে নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ খাতের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ঋণখেলাপি, জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের মতো অপরাধী মহলের অব্যাহত সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে? চক্রটির হাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি ও নেতৃত্ব যে জিম্মি হয়ে পড়েছে, তা গোপন করতেই কি এই নিন্দনীয় পদক্ষেপ?’

টিআইবি মনে করে, ব্যাংকিং খাত নিয়ে জনমনে যখন আস্থার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কিংবা ব্যাংকের গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষার নামে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই দৃশ্যমান কিংকর্তব্যবিমূঢ়, তখন গোপনীয়তার ঘেরাটোপ আরো বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। 

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মনে রাখতে হবে, তাদের জনস্বার্থের সুরক্ষার ভূমিকা পালনের কথা, ঋণখেলাপি আর ব্যাংকিং খাতের সংকটের জন্য দায়ী মহলের নয়। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের বাধাহীন প্রবেশের পরিস্থিতি নিশ্চিতে দ্রুত ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেবে এবং অবাধ তথ্য প্রকাশের পথকে সুগম করবে এমনটাই প্রত্যাশা করে টিআইবি। 

শেয়ার করুন