২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:৪১:১৩ অপরাহ্ন


যেকোনো ধরনের সংলাপ-বৈঠকে বিএনপির না?
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২৩
যেকোনো ধরনের সংলাপ-বৈঠকে বিএনপির না?


বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনো ধরনের সংলাপ বা বৈঠকও করবে না মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আগে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের ঘোষণা দিবে এবং তারপরে সাথে সাথে বিএনপি ও তার নেতৃত্বে আন্দোলনরত সকল দলই সংলাপে বসবে। এব্যাপারে বিএনপি’র সাথে যুগপৎ আন্দোলনরত দলগুলিও একাট্টা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থবহ সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন নির্বাচনি মিশন। চলতি মাসের ৮-১২ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা সফর করেছে প্রতিনিধিদলটি। যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্রাাট পার্টির থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত আইআরআই ও এনডিআইর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত মার্কিন নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল গত ৮ থেকে ১২ অক্টোবর ঢাকায় নির্বাচন-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে তারা পাঁচটি মতামত তুলে ধরেছে। আর এমন খবরে গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে। একিই সাথে এনিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের নেতারাও বক্তব্য পাল্টা বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন।  কি আছে প্রস্তাবে..


তবে তার আগে দেখা যাক, যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে প্রতিনিধি দলের তুলে ধরা পাঁচটি মতামত।  প্রতিনিধিদলটি সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দলসহ অন্য নির্বাচনী অংশীজনদের বিবেচনার জন্য যে পাঁচ সুপারিশ রেখেছে, সেগুলো হলো-সহনশীল বক্তৃতা ও নির্বাচনী মুখ্য ইস্যুতে খোলামেলা-অর্থবহ সংলাপে বসা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা ও নাগরিকদের জন্য খোলামেলা পরিবেশ নিশ্চিত করা, যেখানে ভিন্নমতকে সম্মান করা হয়। সহিংসতার বিরুদ্ধে অঙ্গীকার ও রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িতদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনাকে শক্তিশালী করাসহসব দলের অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্র তৈরি করা। নাগরিকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সক্রিয় নির্বাচনী অংশগ্রহণের সংস্কৃতি উৎসাহিত করা। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় মার্কিন প্রতিনিধিদল বলেছে, এই সুপারিশগুলো একটি পথনকশা তৈরি করবে। সুপারিশগুলো বিবেচনায় নেওয়া হলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে পারে-এমন বিশ্বাসযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।


বিভিন্ন দলের প্রতিক্রিয়া..

বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘সংলাপে বসতে আইনি কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। কিন্তু কথা হলো, সংলাপ হতে হলে কিছু আইনি জিনিস, যেগুলো বাস্তবে আছে, সেগুলো মেনে সংলাপে আসতে হয়। সেগুলো না মানলে সংলাপ হয় না। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি চায়  প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া নির্বাচন কমিশন বাতিল করা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। সংলাপের চিন্তা করব তখন, যখন তারা (বিএনপি) চারটি শর্ত প্রত্যাহার করে নেবে। শর্তযুক্ত কোনো সংলাপের ব্যাপারে আমাদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। শর্ত তারা প্রত্যাহার করলে দেখা যাবে। অন্য বিষয় (মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশ) নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, ওগুলো নিয়ে আমরা সবাই একমত। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে বিএনপি কার সঙ্গে সংলাপ করবে? তারা এর আগে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপ খারিজ করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দুদফা তারা যাননি। এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে তারা বিএনপির সঙ্গে কথা বলুক। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে সব আছে। সংবিধানে যেভাবে নির্বাচন বিধিবিধান আছে সেভাবে নির্বাচন হবে। কারও পরামর্শ বা নির্দেশমতো হবে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’

অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা ছাড়া কোনো সংলাপ নয়। সেই সরকার কীভাবে গঠন হবে, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা বা সংলাপ হতে পারে না। এর আগেও তাদের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। তাদের আহ্বানে নির্বাচনে গিয়েছিলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। তাঁর ওপর আস্থা রাখতে বলেছিলেন। তারা বলেছিল, স্বাধীনভাবে প্রচারণা করার সুযোগ দেবে, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনে গিয়েছিলাম। পাঁচ দিনও প্রচারণা করতে দেওয়া হয়নি। কোনো ওয়াদাই তারা রাখেনি। আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সংলাপ হবে মানুষের প্রত্যাশা আর আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে। মানুষ নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। তারা তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়। তবে সরকার তাদের সেই চাওয়াকে গুরুত্ব না দিয়ে আবার একতরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ রকম একটি পরিবেশে আগে জনগণের চাওয়া ও অধিকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার শর্ত পূরণ করে কী প্রক্রিয়ায় সমাধান আসবে, সেটা নিয়ে সংলাপ হতে পারে।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হার্ড লাইন

এদিকে সংলাপ নিয়ে যখন দেশজুড়ে চলছে আলোচনার ঝড় তখন এরই মধ্যে রাজধানীতে এক জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে সব্বাই অন্যভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এতে তিনি বেশ কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরেন। জোর দিয়ে বলেন, যেভাবেই হোক নির্বাচন হবেই। বলেন, উন্নয়ন চাইলে নৌকা, ধ্বংস চাইলে বিএনপি-জামায়াত। প্রশ্ন রাখেন আগামী নির্বাচনে বিএনপির নেতাটা কে? বিএনপি’র একটি কর্মসূচি নিয়ে তামাশার সুরে বলেন, অনশনের নামে নাটক করছে বিএনপি? তার সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে জবাব দেন.. বলেন, রিজার্ভের টাকা জনগণের সেবায় খরচ করেছি। তীক্ষè মন্তব্য ছুড়ে দেন.. বলেন, কেমন ছেলে সে অসুস্থ মাকে দেখতে আসে না?

আসলে কি হচ্ছে

এমন সব পরিস্থিতি এই প্রতিনিধি বিএনপি’র পাশাপাশি তাদের সাথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাথে কথা বলেন। বিএনপি’র একজন নেতা বলেন, তাদের দল কোনোভাবেই এই সরকারের সাথে সংলাপে বসবে না। কারণ বিএনপি’র হাইকমান্ড মনে করেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের দল (বিএনপি) ক্ষমতায় আসবেই। এটা দেশে বিদেশে বিএনপি’র সব শুভানুধায়ীরাই মনে করেন করে-এই নেতা মন্তব্য করেন দেশ প্রতিনিধির কাছে। বিএনপি’র এই নেতা প্রশ্ন করেন কেনো বিএনপি’র সংলাপে গিয়ে সরকারকে আরেকবারের জন্য ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দেবে? তিনি বলেন, বিএনপি বড়ো ধরনের আন্দোলন ছাড়াইতো সরকারের অবস্থা নড়বড়ে..। এদিকে বিএনপি’র সাথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জোট গণতন্ত্র মঞ্চের একজন নেতা এই প্রতিনিধিকে জানান, এই সময়ে বিএনপি আর কোনো ধরনের সংলাপ বা সমঝোতায় যাবে না। সে-ই সুযোগ সরকার হারিয়ে ফেলেছে..। এই ধরনের সুযোগ এক বছর আগে ছিলো। এখন তা আর নেই।

সংলাপ যে হবে না তা ক্ষমতাসীনরাও বোঝে

সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক গণমাধ্যমে ড. সেলিম মাহমুদ কিছু কথা বলেছেন। এতে তিনি জানান, তাদের (মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে ) সঙ্গে বৈঠকে সংলাপের প্রসঙ্গ সেভাবে আসেনি। তিনি বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সুপারিশের লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, তারা বলেছে– ‘ইন গুড ফেইথ’ (সরল বিশ্বাস) বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। এখন বিএনপি কি সরল বিশ্বাসে আসবে? তারা যেসব দাবি করছে, সেগুলো অযৌক্তিক। এগুলো মানতে গেলে সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন করতে হয়। এ অবস্থায় বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো সুযোগও নেই। গণমাধ্যমে ড. সেলিম মাহমুদের এমন ধরনের মন্তব্যে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন বিএনপি যে সংলাপে অংশ নেবে না বা তারা যে আন্তরিক না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বোঝে। 

তাহলে কী হবে?

এদিকে বিএনপি’র একটি সূত্র জানায় তারা সামনের দিনগুলিতে আরো ঘন ঘন কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত রাখবে, কোনঠাসা করে ফেলতে চাইবে। তাদের ধারণা এরই মধ্যে বিশ্বের গণতন্ত্রমনা ক্ষমতাধর দেশগুলি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বিভিন্নভাবে কঠোর চাপে রাখবে। এতে সরকার নিজেই মূলত নৈতিকভাবে অচল হয়ে যাবে। বিএনপির এই নেতা বলেন, তার দলের পাশাপাশি পশ্চিমাদের এমন কঠোর ভূমিকা আঁচ করেই তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ  আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীদেরও অনুরোধ জানিয়েছেন আগামী একশ’ দিন রাষ্ট্র পাহারা দেয়ার জন্য। বিএনপি’র এই নেতা মনে করেন সংলাপে আগ্রহী হলে খোদ প্রধানমন্ত্রী বা তার মন্ত্রীরা এভাবে কথা বলতো না। তাই বিএনপি সংলাপের ডাক যেমন পাত্তা দেবে না, তেমনি কোনো ধরনের সমঝোতাতেই যাবে না। তারা রাজপথে আন্দোলন করে তাদের সব লক্ষ্য বাস্তবায়ন করবে। বিএনপির এই নেতা বলেন, তাদের দল দেশের মাঠের অবস্থা বুঝে গেছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ এই ব্যাপারে অন্ধকারেই আছে।

শেয়ার করুন