২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:২৩:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


রাজধানীতে মেগা প্রকল্পগুলো কী দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১০-২০২৩
রাজধানীতে মেগা প্রকল্পগুলো কী দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে?


একসময়ের তিলোত্তমা রাজধানী ঢাকা, কোটি কোটি টাকা খরচে কয়েকটি মেগা প্রকল্প চালুর পরেও যানজট, জলজট, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ থেকে মুক্তি পায়নি মানুষ।  মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়েও ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর। সামান্য বৃষ্টি হলেই চরম দুর্ভোগে পড়ছে মহানগরবাসী। সহজেই অনুমেয় মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পরিকল্পনাকালে যথাযথ কারিগরি সমীক্ষা করা হয়নি। প্রকৃতি বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়নি। বিপুল বায়ে নির্মিত মেগা প্রকল্পগুলোর সুফল কবে পাবে বা আদৌ পাবে কি না সেই বিষয়ে জনমনে শঙ্কা জেগেছে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল অচিরেই চালু হবে মেট্রোরেল। ৪ নভেম্বর উদ্বোধন হওয়ার কথা ২৯ অক্টোবর থেকে পিছিয়ে। প্রথম অংশের মেট্রোরেল একটু আগেভাগে চালু হলেও দ্বিতীয় দফা মতিঝিল পর্যন্ত চালুর তোড়জোড়। শেষাংশ মতিঝিল কমলাপুর সময় লাগবে আরো। চালু হয়েছে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। কিন্তু এরপরও ঢাকাজুড়ে তীব্র যানজট। বাংলামোটর থেকে ফার্মগেট যেতেই ঢাকাবাসীকে মহাযানজটে দীর্ঘসময় আটকা থাকতে হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলে ঢাকাজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এর মধ্যে রাজধানীর কিছু অংশ রয়েছে, যেখানে বৃষ্টি-বর্ষার প্রয়োজন নেই, বাসাবাড়ির ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্যে ডুবে থাকে সারা বছর, যার মধ্যে উত্তরার উত্তরখান-দক্ষিণখানের বড় একটা অংশ। বৃষ্টিপাত চলে গেছে। শীত নেমে গেছে। কিন্তু মাজার রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও দৈনিক লাখ লাখ মানুষের চলাচলের এ রাস্তার সিএনজি পাম্প এলাকায় রাস্তা হাঁটুর নিচে এমন ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত নর্দমার পানি। মাঝেমধ্যেই এ রুটে চলাচল করা ক্ষুদ্র যানবাহনগুলোও হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় পানিতে ডুবে ইঞ্জিন যাওয়ার ভয়ে। এটা ওই এলাকার নিত্যচিত্র। এলাকার মানুষ রীতিমতো অসহায়। এমন চিত্র গোটা বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে ঘুরেও দেখা যাবে না। ওইসব স্থানে উন্নয়ন হলেও রাজধানীর এ অঞ্চল চোখের আড়ালে। উত্তরা থার্ড টার্মিনাল, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসসহ অনেক উন্নয়নের পাশেই এমন চিত্র বড্ড বেমানান। বিভিন্ন মিডিয়া দীর্ঘদিন ধরেই এগুলো তুলে ধরে আসছে। সচিত্র ভিডিও, ছবিসহ খবর প্রচার করছে দেশ-বিদেশের খবরাখবরে। কিন্তু সবাই নির্বিকার বছরের পর বছর। ক্ষমতাসীনদের জন্য ভীষণ লজ্জাজনক। কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ ব্যাপারে একটা সংক্ষিপ্ত চিত্র দেন এ এলাকার মেয়র আতিক। যেখানে তিনি বলেন, উত্তরখান দক্ষিণখান এলাকায় প্রায় ১১ লাখ ভোটার। সামনেই নির্বাচন। এমন ভোটারদের কাছে জনপ্রতিনিধিরা কীভাবে ভোট প্রার্থনার জন্য দাঁড়াবেন? অথচ এটা সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত। একটা রেললাইনের ব্যবধানে উত্তরা সেক্টরে হাজারো সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। পাশেই অবস্থিত এ এলাকা সিটি করপোরেশনের কোনো ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অথচ সিটি করপোরেশনের ট্যাক্সের বোঝা সেই ২০১৮ সাল থেকেই চাপানো হয়েছে এবং আদায়ও চলছে। মানুষ দিশেহারা। জানা গেছে, পরিবার-পরিজন, বাচ্চাদের স্কুল-কলেজের কথা ভেবে বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে যান নিজের বাসস্থান রেখে। 

সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে এসেছে যান জটের কারণে প্রতি বছর ৩০ লাখ শ্রম ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, যার ফলে ক্ষতির পরিমাণ ৩৮ লাখ কোটি টাকা। তাহলে ১৫ বছর একনাগাড়ে ক্ষমতায় থাকা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকারের অর্জন কতটুকু? দুর্ভাগা নগরবাসী এই প্রশ্ন সংগতভাবেই করতে পারে। 

আসল কারণ অনুসন্ধানে দেশীয় বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় নানা কথা পরামর্শ দিয়েছেন, দিচ্ছেন।  কিন্তু পলিসি মেকার্সরা যেন কানে তুলো দিয়ে আছেন। ক্ষুদ্র একটি শহর, বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ নগরীগুলোর অন্যতম। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিনোদন, আয় উপার্জনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা শহর থেকে অধিকাংশ কার্যক্রম ঢাকার বাইরে স্থানান্তর না করে ঢাকায় দ্বিতল, ত্রিতল এমনকি বহুতল যাতায়াতব্যবস্থা করা হলেও যে সুফল মিলবে না সেটি সবাই বোঝে। ঢাকার অন্যতম প্রধান সমস্যা অগণিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত যানবাহন। দুনিয়ার কোনো আধুনিক শহরে এতো ধরনের যান্ত্রিক এবং অযান্ত্রিক যানবাহন আছে বলে জানা নেই। অসংখ্য যানবাহনের ফিটনেস নেই, অধিকাংশ মানুষ ট্রাফিক আইন মেনে চলে না। এহেন অবস্থায় ভিআইপি চলাচলের জন্য অনেক ব্যস্ত সড়ক নানা সময় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। অনেক সময় সড়কজুড়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ এমনকি ঈদ পার্বণে পশুর হাট বসে। ঢাকা থেকে সরকারি অফিস আদালত, বিজিবি হেডকোয়ার্টার্স, সেনা ক্যান্টনমেন্ট, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো স্থানান্তর না করা হলে ঢাকার যানজট আদৌ কমানো যাবে না। 

ঢাকার চারপাশে বৃত্তকার সড়ক না করে পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-চট্টগ্রাম বহু লেন সড়ক, ফ্লাইওভার, ওভারপাস করে সুফল পাওয়া যায়নি। এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে থেকে ওঠানামার সব সংযোগ সড়ক চালু না করে সড়কটির অংশবিশেষ খুলে দেওয়ায় কিছু এলাকায় যানজট বেড়েছে। মহানগরীর উন্নয়নকাজে নিয়জিত বিভিন্ন সংস্থার কাজে সমন্বয় না থাকায় ঢাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। জানি না, কোথায় গেল নদীরক্ষা এবং খালগুলো পুনরায় উদ্ধারের আন্দোলন? মাটির নিচের গ্যাসলাইন এবং মাটির ওপরের খোলা তারের বিদ্যুৎলাইন মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হলে ঢাকাকে মৃত্যুপুরী বানাবে সন্দেহ নেই।

একমাত্র সমাধান ঢাকার আশপাশের শহর এবং জেলাগুলোতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন সুবিধাটি নিশ্চিত করে ঢাকার জনসংখ্যা অতিদ্রুত কমিয়ে আনা, ঢাকার চারপাশে অতিদ্রুত বৃত্তকার সড়ক, জলপথ এবং সম্ভব হলে রেলপথ স্থাপন। ঢাকার জনসংখ্যা পরিকল্পিত উপায়ে ১ কোটির নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হলে পাতাল রেল করেও মুক্তি মিলবে না। আগামী সরকারগুলোর জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে ঢাকাকে পরিত্যক্ত মহানগরী হওয়ার সম্ভাবনা থেকে বাঁচানো।

শেয়ার করুন