২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৯:১১:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


রাজনীতির যাঁতাকলে নিরুপায় মানুষ
২০১৪ বা ২০১৮-এর মতো নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১১-২০২২
২০১৪ বা ২০১৮-এর মতো নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই


চারিদিকে সংকট ঘনীভূত। যেদিকে দেখবেন, প্রতিটা সাইটেই দুর্ভিক্ষের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের বলা কথা, ‘দেশে গণতন্ত্র থাকলে দুর্ভিক্ষ হয় না।’ বাংলাদেশের শাসক দল দাবি করে আসছে, দেশে গণতন্ত্র আছে। তবে কেন প্রধানমন্ত্রী আসন্ন ‘দুর্ভিক্ষ’ ইঙ্গিত করে জনগণকে সতর্ক করছেন। ১৪ বছর হয়ে গেলো বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। বিরোধীদল, বিরোধী রাজনীতি ছিল ইনডোরে আলোচনা, সভা-মিটিংয়ের মধ্যেই। এতে করে বলা যায়, তাদের কার্যক্রম সাধারণ মানুষ দেখতো শুধু পত্র-পত্রিকায়। 

বর্তমানে কিছুদিন হলো অধুনা মূলধারা বিরোধীদল সরকারবিরোধী সভা-সমাবেশ করছে। বেশকিছু শহরে বড় সমাবেশ হয়েছে নানা বাধা অতিক্রম করে। জনগণ যেমন সরকারি দলের ওপর বিরক্ত, তেমনি মূলধারা বিরোধীদলের ওপর আস্থা নিতে পারছে না। সৎ মানুযের খোঁজ পাওয়া দায়। কি করবে সাধারণ মানুষ? মানুষ নিরুপায়। কারণ রাজনীতির যাঁতাকলে তারা যে বড্ড অসহায়।  

জনগণের আবেগ পুঁজি করে সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু রাজনীতিক মহল চুটিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করেছে, করছে। কোটি কোটি টাকা নানাভাবে দেশের বাইরে পাচার করেছে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোতে তারল্য সংকট। কানাঘুষা আছে সরকার-ঘনিষ্ঠরা ব্যাংকগুলোর বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। জ্বালানি, বিদ্যুৎ সংকটে শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ হবার উপক্রম। অবস্থা এরকম থাকলে রফতানিবাণিজ্য সংকটে পড়বে অচিরেই। একথা সম্প্রতি এক সভায় জ্বালানি উপদেষ্টা বলেছেনও ব্যবসায়ীদের।

কিন্তু ভরসা পাওয়ার মতো কোনো কথা জ্বালানি উপদেষ্টা বলতে পারেননি। বরং ছড়িয়েছেন প্রচ- হতাশার বাণী। এটা কী জেনে-বুঝে বলেছেন, না বলার জন্য, উপমা দেয়ার জন্য বা সতর্ক করতে বলেছেন তাতো ঠাহর করা যাচ্ছে না। তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তো হাসিঠাট্টার বিষয় এটা না। ফলে যা বলেছেন সেটা সঠিকই বলেছেন। যদিও এর কাউন্টারও দিয়েছেন সরকারের কেউ কেউ। তবে ডলার সংকটের কারণে আমদানি-রফতানি এমনিতেই সংকটে। ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে প্রায়ই অনীহা জানাচ্ছে বলে খবর বেরোচ্ছে। অথচ অপ্রয়োজনীয় খাতে বিপুল অপচয় হয়েছে। মেগাপ্রকল্পগুলোসহ সকল প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে বহুগুণ। অনেকগুলোর বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অথচ সরকারপ্রধান দীর্ঘদিন ধরেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সেটা কার্যকর করার দায়িত্বশীলদের শৈথল্য প্রশ্নবিদ্ধ পদে পদে। 

আমলাদের ওপর ছিল সরকারের ভরসা। তাদেরকে সংসদ সদস্যদের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ করতে দিয়ে এতোদিনে সরকার বুঝতে পারছে বহু আমলা সরকারবিরোধী কাজে লিপ্ত তলে তলে। এখন দুর্নীতিবাজ আমলাদের শাস্তি দিতে গেলে অন্যরাও ভেতরে ভেতরে রাগ-ক্ষোভ করতে পারে। এমতাবস্তায় ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন। বিরোধীদলগুলো বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে কোনোভাবেই আগ্রহী নয়। তাদের উদহরণ বিগত দুই জাতীয় নির্বাচন, যা যেভাবেই হোক না কেন, যে প্রেক্ষাপটেই হয়েছে তা কিন্তু অস্বীকার করা যাচ্ছে না। প্রকারান্তে গত সিইসিও বলে গিয়েছেন। ফলে প্রচ- কূটনৈতিক চাপ আছে নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার। এতে করে অন্তত ২০১৪ বা ২০১৮-এর মতো নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। 

সরকার-ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষের নানা দুর্নীতি নিয়ে কানাঘুষা চলছে। জনগণের কাছে বিকল্প কিছু নেই। জনগণ ২০০১-২০০৬ বিভীষিকাময় দিনে ফিরে যেতে চায় না। ফিরে যেতে চায় না ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিন স্টাইলের শাসনে। আবার বর্তমান সরকারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও আস্থাহীন। দেশে সুস্থ রাজনীতির অনুপস্থিতি দেশকে আমলা আর অসৎ ব্যবসায়ীনির্ভর করে ফেলেছে। 

২০০৯ জ্বালানি বিদ্যুতের যে অবস্থা ছিল বর্তমান অবস্থা সেটা থেকেও নাজুক। তাহলে ১৪ বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কি লাভ হলো? কিছুই যে হয়নি বলা যাবে না। বর্তমান অবস্থার জন্য ইউক্রেনে যুদ্ধ অন্যতম কারণ হলেও একমাত্র কারণ নয়। জ্বালানি, বিদ্যুৎ সেক্টরকে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইন করে পঙ্গু করা হয়েছে। জবাবদিহিতা বা স্বচ্ছতা বলে কিছু নেই। পেট্রোবাংলার কোম্পানিগুলোকে ফতুর করা হয়েছে। দ্রুত সমাধানের পথ সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এখানেও আমলানির্ভরতা আর যথেচ্ছ খরচ দায়ী। দ্রুত গ্যাস উত্তোলন আর কয়লা ওঠানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে পেট্রোবাংলা। মনে হয় না প্রান্তিক সময়ে সরকার কোনো বড় পরিবর্তন করবে। 

অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে জ্বালানি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, শিল্পকে স্বভাবে সহায়তা দিতে হবে। আমদানি-রফতানির ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। সর্বোপরি দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উন্নত হলেই জবাবদিহিতা আসবে। সেটি এই মুহূর্তে দরকার। বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে একসময় গণবিস্ফোরণ হতে পারে। কারণ মানুষ প্রচণ্ড আস্থাহীনতায়। কোথায় গেলে তারা স্বস্তি পাবে। আসলে জনতা এখন অসহায়।

শেয়ার করুন