২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৯:৫০:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


আমলানির্ভর সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৮-২০২২
আমলানির্ভর সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে


দেশজুড়ে প্রচণ্ড খরা। সূর্যতাপে ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির। এর মাঝে পরিকল্পিত বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের নামে চলছে কিছু কিছু জায়গায় ৪-৬ ঘণ্টার বিদ্যুৎহীনতা। পরিবহন ভাড়া, নিত্যপ্রয়োনীয় দ্রব্যাদির মূল্য আকাশছোঁয়া, জ্বালানি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হয়েছে আগুনে ঘি ঢালার মতো। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য উভয় সংকট। না পারছেন মানুষের কাছে হাত পাততে, না পারছেন দু’বেলা দু’মুষ্ঠি খাবার সবার মুখে তুলে দিতে। জনমনে ক্ষোভের আগুন দাউ দাউ জ্বলছে। অবস্থা কিছু দিন চললে বিস্ফোরণ ঘটবে কিনা কে জানে? 

মূলত আমলা নিয়ন্ত্রিত জ্বালানিখাত পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসামাল হয়ে পড়েছে সরকার। দীর্ঘদিন নিজস্ব জ্বালানি অনুসন্ধান আর উন্নয়নের বাস্তবধর্মী কার্যক্রম গ্রহণ না করে জ্বালানি আমদানির মরীচিকার পেছনে ঘুরছে বাংলাদেশ। ফলাফল বিশ্ববাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি স্থগিত করেছেন সরকার প্রধান। করোনাকালে বিশ্ববাজারে এলএনজি মূল্য ২ ডলার/এমএমবিটিইউ হয়েছিল। বাংলাদেশ ক্রয়নীতি ফিউচার পারচেজ সমর্থন করে না। আবার বাংলাদেশে জ্বালানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা সীমিত। তাই সুযোগ হারিয়েছে বাংলাদেশ। আজ যা কাহন এলএনজি মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে আকাশছোঁয়া তখন স্পট মার্কেট থেকে জ্বালানি তেল ক্রয় স্থগিত হওয়ায় জাতীয় গ্যাস গ্রিড গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। জ্বালানি বাজার নানাকারণে অস্থির। শুধু এলএনজি নয় জ্বালানি বাজারে কয়লা, তেল, এলপিজির দাম বেড়েছে বহুগুণ। সাধ্য থাকলেও সামর্থ্য নেই বাংলাদেশের। 

এক ডলার সংকট অন্যদিকে অগ্নিমূল্য। বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির অর্থনৈতিক চাপ সামাল দিতে সরকার জ্বালানি মূল্য ৫১ শতাংশ বা ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। নানাধরনের কৃচ্ছ্রতা পালনের নির্দেশ জারি করেছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা এখন ১৫ হাজার এমএমসিএফডি। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ২৫ হাজার মেগাওয়াটের অধিক উৎপাদন ক্ষমতা থাকলেও জ্বালানি সংকটে ১৩ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনে হিমশিম থাকছে সরকার। ডিজেল, কেরোসিন মূল্য ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি হওয়ায় চক্রাকার মূল্যবৃদ্ধির জালে চাল, ডাল, লবণ, চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, মরিচ, সবজি সবকিছুর দাম বেড়েছে এবং বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির বাজারমূল্য অনেক সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে। সরকার কত জনকে প্রণোদনা দেবেন? পরিস্থিতি কিন্তু দিন দিন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

সরকারপ্রধানের হয় আন্তরিকতা আছে, কিন্তু তার পাশের পরামর্শক, মন্ত্রী, সাংসদদের এক অংশের সংকটটের বহুমুখিতা আর গভীরতা বিষয়ে সম্যক ধারণা নেই, বেসামাল কথা বলছেন সরকারের মন্ত্রীরা। বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষত জ্বালানি বিষয়ে বর্তমান সংকটের জন্য সরকারি সমন্বিত নীতিহীনতা, দুর্বল বাস্তবায়ন কৌশল আর সীমাহীন দুর্নীতি একান্তভাবে দায়ী। মাটির নিচে উন্নতমানের বিপুল কয়লা সম্পদ পড়ে রয়েছে পরিবেশ রক্ষা নামের জুজুর ভয়ে, জলে-স্থলে সম্ভাব্য বিপুল পরিমাণ তেল-গ্যাস সম্পদ আরোহন হচ্ছে না। ভুল নীতির কারণে জ্বালানি বিষয়ে আমদানিনির্ভরতা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভূ-রাজনীতির কারণে অস্থির জ্বালানিবাজার থেকে আকাশছোঁয়া মূল্যে জ্বালানি ক্রয় বাংলাদেশের সামর্থ্যরে বাইরে চলে গেছে। এদিকে নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন ক্রমাগত কমছে। সরবরাহ চাহিদার বিপুল ঘাটতি মিটানোর জন্য অবিলম্বে স্থলভাগে বিদেশি তেল কোম্পানিগুলোকে বাপেক্সের পাশাপাশি সুযোগ দেয়া এখন সময়ের দাবি। ২০২৩ থেকে বাপেক্সের চারটিসহ ১০টি অনুসন্ধান রিগ বিশেষ ব্যবস্থায় কাজ করলে ২০৩০ নাগাদ স্থলভাগেই অন্তত ৫ টিসিএফ গ্যাসপ্রাপ্তির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারকে ১০ বছরের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার তহবিল সৃষ্টি করে গ্যাস তেল অনুসন্ধানের জন্য অনুদান হিসেবে দিতে হবে। একইসঙ্গে বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

এক মুহূর্তকাল বিলম্ব না করে কয়লা ক্ষেত্র উন্নয়নের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পেশাদার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। আধুনিক বিশ্বে বাংলাদেশের কয়লা পরিবেশ সম্মতভাবে উত্তোলনের টেকনোলজি আছে। কূপম-ুক ভাবধারা প্রভাবিত না হয়ে কয়লা উত্তোলনের এখন শেষ সুযোগ।  হাত ছাড়া হলে অনাগত প্রজন্ম অভিশাপ দিবে। কয়লা উত্তোলনের কার্যক্রম ২০২৪ থেকে গৃহীত হলে ২০৩০ নাগাদ নিজেদের কয়লা দিয়েই ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত হবে।

আমি মনে করি, পেট্রোবাংলাকে নিরঙ্কুশ আমলানির্ভরতা থেকে মুক্ত করা না হলে জ্বালানির বেহাল অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। সংকট মুহূর্তে দেশে এবং প্রবাসে থাকা জ্বালানি পেশাদারদের পেট্রোবাংলা কোম্পানিসমূহের পরিচালনা পরিষদে সম্পৃক্ত করা না হলে লক্ষ্য অর্জিত হবে না। আমলারা কখনোই জ্বালানি সেক্টরে গতিশীলতা ফিরিয়ে আসতে পারবে না। 

বর্তমান মুহূর্তে জ্বালানি সংকটের আশু অন্তর্বর্তীকালীন সমাধান হতে পারে রাশিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী সুলভ মূল্যে ডিজেল, কেরোসিন ক্রয়। স্থানীয় মূল্য এবং সঠিক মুদ্রায় রাশিয়ার জ্বালানি ক্রয় করা গেলে ৫১ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি কমিয়ে পুনরায় ২০-২৫ শতাংশ সীমিত করার বিষয় বিবেচিত হতে হবে। সেই সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠোর করে সিন্ডিকেটে চূর্ণ করা প্রয়োজন।

বর্তমানে অনিশ্চয়তার পথে বাংলাদেশ। গৃহীত এবং ঘোষিত কৃচ্ছ্রতা কার্যক্রম সংকটের তুলনায় সামান্য। সরকারের জনসম্পৃক্ততার অভাবে গণসচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে না। সরকারের মন্ত্রীরা অসংলগ্ন কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে প্রতিনিয়ত। জনগণ কিন্তু দীর্ঘদিন নীরবে সইবে না সবকিছু। অতএব সাধু সাবধান।

শেয়ার করুন