০১ মে ২০১২, বুধবার, ০৫:০৩:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না রাজনীতিতে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৮-২০২২
অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না রাজনীতিতে ভোলায় বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়ার পর পুলিশের অবস্থান/ ফাইল ছবি


অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না দেশের রাজনীতিতে। ভোলায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ থেকে নিয়ে শাহবাগে প্রগতিশীল ছাত্রদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ এবং সম্প্রতি বামদলগুলির সাধারণ কর্মসূচিতে বাধা দানসহ বিভিন্ন বিষয়ে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব বিষয়ে সরকারের একেবারে উপরের মহলে যেমন প্রশ্ন ও উৎসক্য উদ্বেগ আছে, তেমনি নানান গুঞ্জনের ডালপালা  মেলছে। কারা এসব করছে ,কার স্বার্থে এমন হচ্ছে-নানান প্রশ্ন রাজনৈতিক মাঠে। 

লুক বিহাইন্ড

গত মাসের শেষে ভোলা সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে গুলিতে প্রথমে একজন নিহত হন । পরে আরেকজন মারা যান। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। ঘটনার বিররণে দেখা যায় ঔদিন  বেলা ১১টার দিকে জেলা সদরের মহাজনপট্টিতে এ সংঘর্ঘের ঘটনা ঘটে। বিদ্যুৎ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবিতে বিএনপির ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে এ সংঘর্ষ হয়। নিহত ব্যক্তির নাম মো. আবদুর রহিম। তিনি সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এনিয়ে বিএনপির দাবি করেছে পুলিশ অতর্কিতভাবে তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দিয়ে গুলি চালিয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সমাবেশের অনুমতি নিয়ে মিছিল বের করায় পুলিশ বাধা দিলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হয়। ভোলা জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম খান গণমাধ্যমে অভিযোগ করেছেন, জেলা সদরের মহাজনপট্টিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছিলেন দলের নেতা-কর্মীরা।

এ সময় ঘটনাস্থলে এসে বাধা দেয় পুলিশ। তারা প্রতিবাদ জানালে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এরপর দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশের ছোড়া গুলিতে তাঁদের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪৫ জন। অন্যদিকে জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেছেন, বিএনপির সমাবেশ করার অনুমতি ছিল, কিন্তু মিছিলের অনুমতি ছিল না। বিএনপি মিছিল বের করে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তাদের কাছেও অস্ত্র ছিল। আবদুর রহিম নামের লোকটি মারা গেছেন। তবে তিনি কার গুলিতে মারা গেছেন তদন্ত না করে বলা সম্ভব নয়। এ ঘটনায় পুলিশের আট সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন। এদিকে সর্বশেষ ঘটনায় দেখা গেছে এদিকে ভোলায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নুরে আলম নিহতের ঘটনায় তার স্ত্রী ইফফাত জাহান আদালতে মামলা করেছেন। এতে ভোলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিস উদ্দিনকে প্রধান করে পরিদর্শক (তদন্ত) আরমান হোসেনসহ ৪৬ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।

যেসব প্রশ্ন উঁকি মারছে

ভোলা সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ নিয়ে অনেক প্রশ্ন চলে আসে। বিএনপি দাবি করেছে তাদের কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ। ছিলো না উস্কানি। তাছাড়া উস্কানি থাকলেও পুলিশ এতো বেপারোয়া হবে সেটি তাদের কোনোভাবেই মনে হয়নি। এমন বক্তব্য মিলে যায় বিএনপি’র বেশ কয়েকজন নেতা সাথে কথা বলে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে পুলিশ কেনো এতো মারমুখি হয়ে উঠলো সেদিন। আবার এখানে জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলামের বক্তব্য আমলে নেয়া প্রয়োজন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন। কারণ তিনি বলেছেন, আবদুর রহিম নামের যে লোকটি মারা গেছেন তিনি কার গুলিতে মারা গেছেন তদন্ত না করে বলা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, সাধারণত অনেকেই পুলিশের এধরনের বক্তব্য গ্রহণ করতেই চায় না। কিন্তু অতীতে দেখা গেছে এমন ঘটনার আগে বেশ বুক ফুলিয়ে বলা হতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ছুড়েছে পুলিশ। কিন্তু এই পুলিশ কর্মকর্তা এধরনের বক্তব্য খুব জোড় গলায় না দিয়ে বরং জানিয়েছেন,আবদুর রহিম নামের যে লোকটি মারা গেছেন তিনি আসলে কার গুলিতে মারা গেছেন তদন্ত না করে বলা সম্ভব নয়। তাহলে জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলামের ধারণা ঐ স্পটে কি আরো কেউ তৎপরছিলেন? 

গোলাগুলি পেছনে আরো কারো হাত আছে। অভিযোগ উঠেছে ঘটনাস্থলে বিএনপির পক্ষে বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতির নেওয়ার সময়ই পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এমন ঘটনা বিরল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন। তবে শীর্ষ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, সরকার ভোলার ঘটনাটি সাদামাটাভাবে দেখেনি। যদিও সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, ভোলায় সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ফলে দু’জনের মৃত্যুকে বিএনপির লাশের রাজনীতির বলি। তিনি আরো বলেছেন,বিএনপি’র রাজনীতি লাশের ওপরে প্রতিষ্ঠিত,সেই কারণে তারা লাশ সৃষ্টি করতে চায়। কোনো ধরনের তদন্ত না করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমন বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে বিএনপি’র রাজনীতি লাশের ওপরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে তাহলে ভোলা সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের হতাহতের ঘটনায় দল সেখানে দিনব্যাপী হরতাল ডেকে তা প্রত্যাহার করেছিল কোনো? 

এতো বড়ো মাপের একজন জেলা নেতাসহ বেশ কয়েকজনের হতাহতের ঘটনায়তো বিএনপিতো বলা যায় তেমন বড়ো কর্মসূচি দেয়নি। আবার এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে বিএনপি’র কেনো হরতাল কর্মসূচিতে কাট-ছাট করে? উল্লেখ্য ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলমের মৃত্যুর প্রতিবাদে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকে মাঠে নামার আগেই তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল জেলা বিএনপি। ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার পরপরই হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর। অথচ এর আগে বুধবার ৩ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এক প্রতিবাদ সভায় ভোলায় বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দেন গোলাম নবী আলমগীর। 

তবে কেনো তিনি এমন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন তার সুস্পস্ট ব্যাখ্যা দেননি। অবশ্য এ পুলিশ কর্মকর্তাকে(জলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম) নিয়ে বিএনপি’র এক নেতা অন্যরকম হিসাব নিকাশ তুলে ধরেছেন। ভোলায় বিএনপির সমাবেশে গুলির নির্দেশদাতা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন বলেও  দাবি করেছেন তিনি। রিজভী বলেন, প্রমোশন ও পুরস্কারের লিপ্সায় এসপি সাইফুল বিএনপির মিছিলে নারকীয় তান্ডবের নির্দেশ দেন। 

ধৈয্যের আওয়াজ তুলে বেধড়ক লাঠিচার্জ কেনো?

এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে পূর্বঘোষিত মশাল মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছিল বেশ কয়েকটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন। আন্দোলনে পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত দু’জনের মাথায় ৬ থেকে ১৪টি সেলাই লেগেছে। রোববার (৭ আগস্ট) বিকেলে শাহবাগ মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ‘প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ’র ব্যানারে বেশ কয়েকটি সংগঠন এ আন্দোলনের ডাক দেয়। এব্যপারে প্রত্যক্ষদর্শীলা জানায়, সংগঠনের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শেষের দিকে ছিল। এমন সময় পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে একটি দল তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশের মারধরে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে পুলিশের লাঠির আঘাতে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাবি শাখার কর্মী সামি আব্দুল্লার মাথায় ১৪টি সেলাই লেগেছে। এছাড়া ঢাবির আহ্বায়ক জাবির আহমেদের মাথায় ৬টি সেলাই লেগেছে। তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে এডিসি হারুন গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘ভিত্তিহীন অভিযোগে মন্তব্য করি না’। তবে কয়েকটি গণমাধ্যমে এমন বক্তব্যের পাল্টা সংবাদ পরিবেশন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বরাত দিয়ে। এতে বলা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে হারুন অর রশিদের নেতৃত্বেই হামলার বিষয়টি দেখা গেছে। 

এমন হামলার নেপথ্যে কি?

প্রশ্ন হচ্ছে পুলিশকে ‘ধৈর্য ধরে’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেয়ার পরও কোনো শাহবাগে একটি ক্ষুদ্র আন্দোলনে পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থীকে আহত হতে হলো। এর পেছনে কি? কারা এমন নির্দেশ দিলো? সরকার কি এটা চেয়েছিল যে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করুক? কেননা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর শুক্রবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষোভ জানাচ্ছেন নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন। বিশেষভাবে মোটরসাইকেল চালকরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া রাজধানীর শ্যামলীতে একটি মিছিল থেকে পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। 

এ অবস্থায় আগ্রাসীভাবে নয়, বরং সব দিক বিবেচনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘ধৈর্য ধরে’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেওয়ার খবরে অনেকে সরকারের নমনীয়তাই আশা করেছিল। ডিএমপির ক্রাইম বিভাগের সদস্য, সব বিভাগের উপ-কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেন কমিশনার মোহা: শফিকুল ইসলাম। মোবাইলে এসএমএস এবং ওয়ারলেসে পাঠানো হয় এ সংক্রান্ত বার্তা। প্রশ্ন দেখা দিয়ে আইন শৃংখলা বাহিনীর এমন নমনীয়ত অবস্থানের পরও  শাহবাগে পুলিশ শিক্ষার্থী পেটাতে এতো উত্তেজনা পেলো কিভাবে?

নেপথ্যে কি থাকতে পারে?

ওপরের এসব ঘটনা নিয়ে জানা গেছে সরকারের শীর্ষ মহলেই চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। সরকারের ভেতরে এনিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলা থেকে নিয়ে শাহবাগের শিক্ষার্থী পেটানো ঘটনায় সরকার বেশ বিব্রত। তবে সরকারের শুভানুধায়ীদের মধ্যে নানান প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এসব ঘটনার পেছনে অন্য হিসেব নিকেশও আছে।

 কেননা সরকারের সামনে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ঘুরপাক খাচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের মাথায় আছে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ’গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা। এটি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এনিয়ে সরকার খুবই উদ্বিগ্ন। এছাড়া জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফরও একটি উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা।

 জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরে আছেন। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম এমন পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা আসছেন। অন্যদিনে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ প্রধানদের তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইজিপি বেনজীর আহমেদ ছাড়াও আছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু হেনা মোস্তফা জামান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব) মু. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ উপমহাপরিদর্শক নাসিয়ান ওয়াজেদ ও সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মাসুদ আলম। এমন সম্মেলনে পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে নানান জল্পনা কল্পনা দেশে। কেননা তবে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বেনজীর আহমেদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন। ২০২১ সালের মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর, বৈদেশিক কার্যক্রম ও এ সংক্রান্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন বিষয়ক আইনের ৭০৩১ (গ) ধারা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

 যদিও জাতিসংঘের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী জাতিসংঘের সম্মেলন বা বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের ভিসা দেয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা আছে। তবুও এনিয়ে দেশে কম গুঞ্জন নেই। প্রশ্ন হচ্ছে এমন সব স্পর্শকাতর মুহূর্তে রাজনৈতিক মাঠে সরকার একটু নমনীয় থাকবে বলেই পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। কিন্তু তা না করে সরকার এমন মারমুখী আচরণ কেনো করবেন তার কোনো সদুত্তর মিলছে না রাজনৈতিক অঙ্গনে। কেননা খোদ বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেই ফেলেছেন যে নির্বাচন সামনে রেখে সরকার বিদেশি চাপে আছে। তাই বেশ কিছুদিন ধরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে কোনো ঝামেলা করছে না।

প্রশ্ন হচ্ছে সরকার চাপে থাকলেতো ভোলায় মিছিল শুরুর আগেই পুলিশ এভাবে গুলি ছুড়তো না। তাহলে কারা এমন করেছে। কি তাদের উদ্দেশ্য? কারা শাহবাগে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচিতে লাঠিপেটা করেছে? বিষয়গুলি এখন পরিস্কার না । অনেকে উত্তর খুঁজে ফিরে বালুতে মুখ গুজেই বলছে এসব ঘটনাগুলি কি সাবোটাজ? কেউ কি কোনো ক্ষেত্র তৈরিতে তৎপর? প্রশ্ন দেখা দিয়েছে  সরকার পতনের দাবি নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে এক তরুণের আট ঘণ্টা অবস্থান নিয়েও। গত তিন আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রায় আট ঘণ্টা অবস্থান করেন ঢাকার এক কলেজ শিক্ষার্থী। তার অভিযোগ, সরকার ভোট চুরি করেছে। 

আমলারা এ ভোট চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই সরকারের অধীন আর যদি একটি নির্বাচন হয়, তাহলে বাংলাদেশ নিরাপদ থাকবে না। বাংলাদেশে গুম, খুন, ধর্ষণ ও লুটপাট চলছে। দেশকে শ্রীলঙ্কা বানানোর চেষ্টা চলছে। এমন বয়সের একজনের এভাবে নিরব প্রতিবাদ অনেকের মনেই নানান প্রশ্ন উঁকিবুকি খাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে ঢাকার শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্টগ্র্যাজুঢেট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির অবুঝ শিক্ষার্থীর এমন প্রতিবাদের পেছনে আসলে কি ছিল? সব মিলিয়েই রাজনৈতিক অঙ্গন নানান ধরনের গুঞ্জনে ছেয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে অনেক অজানা তথ্য। একসময় বলে দেবে কি ছিল এসবের পেছনে।


শেয়ার করুন