৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ১১:০৩:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


নতুন আয়কর আইন নিয়ে ফুঁসছে বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১০-২০২৩
নতুন আয়কর আইন নিয়ে ফুঁসছে বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতীকী ছবি


বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ ফান্ডের ট্যাক্স কর্তন ১০ শতাংশ থেকে ২৭.৫ শতাংশের (সাড়ে সাতাশ) সিদ্ধান্ত ক্রমেই ফুঁসে উঠছে দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। হঠাৎ নতুন আয়কর আইনে এমন সিদ্ধান্তে মুষড়ে গেছেন তারা। পরিতাপের যে বিষয়টি তারা উল্লেখ করছেন, সেটা হলো ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এড়িয়ে শুধুই বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণ ফান্ডে হাত দেওয়া কেন? দেশের উন্নয়নের যদি অর্থের প্রয়োজন হয়, তাতে তো অনেক খাতই রয়েছে। আমাদের সারা জীবনের সঞ্চয়ের অংশ থেকে এমন বিশাল অঙ্কের অর্থ কর্তন হলে চাকরি শেষে কীভাবে আমাদের বেঁচে থাকার প্ল্যান বাস্তবায়ন করবো।’ তাছাড়া একই দেশে দুই আইন কেন হবে? এ প্রশ্ন এখন মুখে মুখে। 

নতুন আয়কর আইনে কী আছে এক্ষেত্রে চলতি অর্থবছর থেকে বেসরকারি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্মচারী কল্যাণ তহবিল থেকে অর্জিত আয়ের ওপর কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। শুধু তাই নয়, এই আয়ের ওপর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। ২০২৩ সালের আইনে প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর করারোপের এই বিধানটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি তহবিল ও শ্রমিকদের লভ্যাংশের তহবিলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক এবং করছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে।

ফলে বেসরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি তহবিল ও শ্রমিকদের লভ্যাংশের তহবিলে করছাড় প্রত্যাহার করা হয়েছে। এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগে বেসরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়ের ওপর ছাড় ছিল এবং আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। ফলে এগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়। এখন থেকে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক হওয়ায় সরকার এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে পারবে। তারা আরো বলেন, মোট আয়করে পে-রোল ট্যাক্সের অবদান প্রায় ৩ শতাংশ। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তা বাড়ানো উচিত। তাই এ ধরনের করারোপের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে আয়কর আইনে সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডগুলোকে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এতে করে সমাজে এমন সিদ্ধান্ত দ্বিধাবিভক্তি তৈরি হয়েছে। এর আগে প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাক্ট, ১৯২৫ অনুযায়ী সরকার পরিচালিত প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়ে করছাড় দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। 

এদিকে বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, কর আদায়ের আরো অনেক উপায় আছে। সাধারণত কর্মচারীরা অবসর গ্রহণের পর প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে উপকৃত হন। তাই অবসরকালীন সুবিধার ওপর সরকারের করারোপ করা উচিত কী। একই সঙ্গে করারোপের বিধানে বেসরকারি ও সরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ডকে সমানভাবে বিবেচনা করা হয়নি জানিয়ে এটা বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করছেন তারা। 

একই সমাজে দুই আইন 

বাংলাদেশের অনেক ফ্যামিলিতেই একজন সরকারি চাকরিজীবী অন্য কেউ রয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। এতোদিন এটাতে তেমন কোনো ভেদাভেদ নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। তাছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এমনিতেই বেশি ফ্যাসেলিটিজ, যা বেসরকারিতে খুবই সীমিত। এবার সরকারের এমন সিদ্ধান্তে বিষয়টা প্রকাশ্যে এসে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি কোনো খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডকে আয়কর দিতে হতো না। ২০১৬ সালের পর থেকে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের মুনাফার ওপর উৎসে কর হিসেবে ৫ থেকে ১০ শতাংশ কর কেটে রাখা হতো। সম্প্রতি অনুমোদিত আয়কর আইন, ২০২৩-এ প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর করারোপের নতুন বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা ওই ২৭.৫ শতাংশ। 

এতে বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী এই অর্থবছর থেকেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে অর্জিত আয়ের ওপর কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এই সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ বলে মনে করছেন বেসরকারি খাতের চাকরিজীবী ও খাতসংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক বলেন, ‘আমি এটার কোনো যৌক্তিকতাই খুঁজে পাইনি।’ এছাড়াও সরকারি চাকরিজীবীদের বাদ দিয়ে কেবল বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এটি কার্যকর করা ‘ভারসাম্যপূর্ণ হয়নি’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় তো সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য যা, বেসরকারিদের জন্যও তা। মাংস, সবজি সব তো একই দামে কিনতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে (নতুন আইনকে) সরকারি চাকরিজীবীদের সঙ্গে তুলনা করলে মনে হবে এক দেশে, দুই আইন। 

সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে দ্বৈতনীতিকে ‘বৈষম্যমূলক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, এনবিআর থেকে আরও ব্যাখ্যার দরকার আছে। কেননা আগে যেখানে সর্বোচ্চ কর ১০ শতাংশ ছিল সেটাকে কোন যুক্তিতে বা কোনো হিসেবে সাড়ে ২৭ শতাংশ করলো, এটা তাদের ব্যাখ্যা করতে হবে, ব্যাখ্যা করা উচিত হবে। 

এদিকে আয়কর বিভাগের ওই সিদ্ধান্তের পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির পর এবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের তাগিদ আসতে শুরু করেছে। এতোদিন যারা ভেবেছেন সরকার হয়তো এটা পরিবর্তনও করতে পারেন, তারা এমন তাগিদের খবর পেয়ে কেউ কেউ মুষরে যেতে শুরু করেছেন। 

অধিকাংশ বেসরকারি অফিসে কাজের ফাকে এ বিষয়ে আলোচনা, প্রতিবাদ। কঠোর সমালোচনায় ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের বিপক্ষে। সামনেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। এমনি মুহূর্তে বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া এমন সিদ্ধান্ত ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের ফ্যামিলির ক্ষোভ ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

শেয়ার করুন