২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১০:৫২:৪১ অপরাহ্ন


ফেব্রুয়ারিতে কারা হেফাজতে ১৯ জনের মৃত্যু
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৩-২০২৪
ফেব্রুয়ারিতে কারা হেফাজতে ১৯ জনের মৃত্যু প্রতীকী ছবি


বাংলাদেশে চলমান বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কারা হেফাজতে মোট ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের মাস জানুয়ারিতেও এর সংখ্যা ছিল ১৯ জন। এ মাসে ৯ জন কয়েদি ও ১০ জন হাজতির মৃত্যু হয়েছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)’র পক্ষ থেকে এবছরের ফেব্রুয়ারির মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। স্থতি মনিটরিং প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপে এসব তথ্য উঠে আসে। এমএসএফ’র দেয়া তথ্যে এসব জানানো হয়। 

এমএসএফ’র পক্ষ থেকে বলা হয় চিকিৎসার অভাবে কারা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর পাশাপাশি এমএসএফ মনে করে, কারা অভ্যন্তরে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি, হেফাজতে মৃত্যুর কারণ যথাযথভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যাক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

বিস্তারিত বিবরণে বলা হয় কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৭ জন, গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ১ জন, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জন, রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জন, বগুড়া জেলা কারাগারে ১ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে ১ জন, নারায়ণগঞ্জ কারাগারে ১ জন, নোয়াখালী জেলা কারাগারে ১ জন, চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে ১ জন, নওগাঁ জেলা কারাগারে ১ জন, ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে ১ জন ও মৌলভীবাজার কারাগারে ১ জন। 

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রুবেল দে (৩৮)’র কারাগারে নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবার দাবি করেছে। অপরদিকে বগুড়া জেলা কারাগারে ধর্ষণ মামলার হাজতি ইকবাল হোসেনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নারায়ণগঞ্জ বন্দরের স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি তুষার নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে একটি খালি ওয়ার্ডে প্রবেশ করে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে। 

অপরদিকে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)’র পক্ষ বলা হয় যে, স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও অবিরত হুমকির সম্মুখিন হচ্ছেন। বলা হয় যে, দেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের ৯টি ঘটনায় ১৩ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে আহত ও আক্রমনের শিকার হয়েছেন ১০ জন, ও হুমকির সম্মুখীন ৩জন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের সময় ছাত্র নামধারী বিবদমান ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন কর্মী সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়ে অশোভন আচরণ ও অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন। এ মাসের ৯টি ঘটনার ৩ টি ক্ষমতাসীন দল, ৩টি ইউপি চেয়ারম্যান, ২টি ব্যবসায়ী ও ১টি ঘটনায় সন্ত্রাসী বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা ছিল। 

যেভাবে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্খিতই নয় বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতার কন্ঠরোধ করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ। এমএসএফ’র পক্ষ বলা হয় যে, সাইবার নিরাপত্তা আইন-ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে নাগরিকদের বাক-স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা বহাল রাখা হয়েছে। সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে নাগরিকের হতাহত ও জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে, সংখ্যালঘু নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে, গণপিটুনিতে হতাহতে সংখ্যা ও অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের মত ঘটনা বেড়েই চলেছে যা মানবাধিকারের চরম লংঘন। সামগ্রিক বিবেচনায় এমএসএফ মনে করে, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও আইনি পরিবেশ উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহার করার পাশাপাশি সব ধরনের সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা ও ভীতিকর পরিবেশ বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ত্বরিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন এমএসএর’র পক্ষ থেকে মনে করা হয়।

শেয়ার করুন