২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০২:১৯:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ফিরে পাবে বাংলাদেশ?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৮-২০২২
সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ  ফিরে পাবে বাংলাদেশ?


সুইজ্যারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড মিথ্যা বলছেন, মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন? পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নাতালি চুয়ার্ডের কথাগুলো মিথ্যা বলছেন। কোনটা সত্য- এটা নিয়ে বিতর্ক করার সময় এখন নেই। ইউরোপের অন্যতম সেরা ও উন্নত দেশ সুইজারল্যান্ড এমন কোনো ফটকাবাজ, মিথ্যুক বা অশিক্ষিত মূর্খকে পাঠায়নি রাষ্ট্রদূত করে। যে কি-না বিশ্বে সে দেশ ও দেশের জনগণকে অসম্মান করবেন। প্রশ্ন উঠতে পারে নাতালিকে আজ যদি ফিরিয়ে নিয়ে যায় সুইজারল্যান্ড সরকার, সেটা কিন্তু পারে। নাতালি অসত্য বানোয়াট বললে সুইস কর্তৃপক্ষ তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতো। অনেক দেশেই এমন হয়ও। কিন্তু নাতালি তো বিদ্যমান যথারীতি। আসলে নাতালি চুয়ার্ডের কি লাভ অসত্য-মিথ্যা বলে? আমরা কী ভুলে যাবো একটা দেশের রাষ্ট্রদূত সে দেশের মত ও ইচ্ছা, স্বার্থ নিয়েই মুখপাত্র হিসেবে কথা বলবে। নাতালি বা সুইজারল্যান্ড এখানে একাকার। কী স্বার্থ সুইজারল্যান্ডের বা নাতালির। তারা বাংলাদেশের একটি পাবলিক প্লেসে মিথ্যা বলবেন? যা মুহূর্তে গোটা বিশ্ব দেখছে, পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ সাংবাদিকদের কারণে মুহূর্তে গোটা বিশ্বে প্রচারিত হয়ে যাবে। গেছেও। তাহলে নাতালির কথা মিথ্যা, অসত্য বলার যৌক্তিকতা আছে কী? কী স্বার্থ তার এখানে। 

বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ বরং সুইসব্যাংকে থাকলে সে দেশেরই লাভ। বিশ্বের প্রতিটা দেশের ইমিগ্রেশন তাদের বাইরের দেশ থেকে যতো পরিমাণ অর্থ নিয়েই আসুক না কেন, তাতে তাদের কোনো বাধা নেই। দেশের স্বার্থ সেটা। তাহলে নাতালি কেন দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশের নীতিবহির্ভূত কাজ করছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরং এ অভিযোগটা নাতালির বিরুদ্ধে করেছেন, সেটা আসলেই কতটা যুক্তিযুক্ত। 

তবে এটাও ঠিক, নাতালি চুয়ার্ড কিন্তু চলে যাননি। তিনি এখনো বাংলাদেশেই। সে যে কথাগুলো বলেছেন, তাকে তলব করে ব্যাখ্যা চাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কী সে কাজটা করেছে? সেটা কী হয়েছে? এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত না। নাতালির সহায়তা নিয়ে সুইজারল্যান্ড সরকারের ওই ব্যাংক ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আলাপ করে বাংলাদেশের গরিব-দুঃখী মানুষের কষ্টের, রক্ত নিংড়ানো অর্থ ফিরিয়ে কী আনার ব্যবস্থা করা যায় না? বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিটা উপলব্ধি করেই সুইজারল্যান্ড ওই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাদের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে। এটাই বাস্তবতা। সব দেশের জন্য হয়তো তারা সেটা করেন না। কিন্তু এটাও তো ঠিক সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ব্যাংক সুইস ব্যাংক। সরকারের নিয়মনীতি তারা মানতে অবশ্যই বাধ্য। তাহলে সুইজারল্যান্ড কর্তৃপক্ষ চাইলে সেটা কী অসম্ভব? একটা চেষ্টা করে দেখা উচিত নয় কি, যদি বাংলাদেশ সরকারের ইচ্ছা থাকে? 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যা বলেছেন

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন বলেন, ‘তিনি (সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড) অসত্য কথা বলেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ফিন্যান্স সেক্রেটারি আমাকে আগে জানিয়েছিলেন, তারা তথ্য চেয়েছিলেন, তারা (সুইস ব্যাংক) উত্তর দেননি। আজকে আমি বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলেছি। উনি আগে ফিন্যান্স সেক্রেটারিও ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘নো, আমরা আগে তথ্য চেয়েছি, তারা কোনো রেসপন্স করেননি। আমি বলেছি, আপনি এটি জানিয়ে দেন জনগণকে। কারণ এভাবে অসত্য কথা বলে পার পাওয়া উচিত নয়।’

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করবে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘আমাদের গভর্নর সাহেব আগে বিবৃতি দিক। আমরা সেগুলো জানি কিংবা অর্থ মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিক, এরপর বলবো।’ 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য অনুসারে সরকারের ইচ্ছাই এখন ফ্যাক্টর। 

সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত

নাতালি চুয়ার্ড কী বলেছিলেন? 

গত বুধবার (১০ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিক্যাব (ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, ডিক্যাব) টকে বাংলাদেশ-সুইজারল্যান্ড বাণিজ্যিক সম্পর্ক, বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড। সে সময় নাতালি চুয়ার্ড বলেন, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিকদের জমা করা অর্থের বেশিরভাগ অবৈধপথে আয় করা হয়েছে এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত সুইস ব্যাংক বা কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি। 

সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বা এসএনবির ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরে বাংলাদেশিরা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা করেছেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি ফ্রাঁ বাংলাদেশি ৯৫ দশমিক ৭০ টাকা হিসেবে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৩৩ কোটি, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।

নাতালি চুয়ার্ড বলেন, ‘তথ্য পেতে হলে কী করতে হবে, সে সম্পর্কে আমরা (সুইজারল্যান্ড কতৃপক্ষ) সরকারকে (বাংলাদেশ) জানিয়েছি। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো তথ্যের জন্য আমাদের কাছে অনুরোধ করা হয়নি। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দুপক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে এ ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব এবং সেটি তৈরি করতে হবে। এটি নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছি।’

ডিক্যাব টকে বাংলাদেশ-সুইজারল্যান্ড বাণিজ্যিক সম্পর্ক, বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড। 

সুইস ব্যাংক সে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের ১০ শতাংশের মতো অবদান রাখে উল্লেখ করে নাতালি চুয়ার্ড বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকগুলো অবৈধ অর্থ রাখার নিরাপদ স্থান নয়। বৈশ্বিক আর্থিক খাতে সুইস ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের সংস্কার করেছে, নতুন ও উন্নত মানদণ্ড তৈরি করছে এবং তারা অবৈধ অর্থ রাখার জন্য প্রলুব্ধ করে।’ এটি ঠিক নয়।

‘বাংলাদেশিরা কত টাকা জমা রেখেছে ওই তথ্য প্রতিবছর সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক দিয়ে থাকে এবং ওই অর্থ অবৈধপথে আয় করা হয়েছে কি না, এটি আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়’ বলেন সুইস রাষ্ট্রদূত।

দু’দেশের মধ্যে গত এক দশকে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বর্তমানে এর পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি ডলার। সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক সুইস কোম্পানির উপস্থিতি রয়েছে এবং আমরা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির চেষ্টা করছি।’ 

সুইস ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশিদের

গচ্ছিত অর্থ ফেরত আনা হবে কী? 

যেহেতু সুইস রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড ক্লিয়ার বলছেন, সুইজারল্যান্ড বা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক কোনো অবৈধ অর্থ গচ্ছিত রাখার নিরাপদ স্থান নয়। যেহেতু তিনি বলছেন, তাদের ব্যাংক সেক্টরের অনেক নিয়ম-কানুন পরিবর্তন করে হালনাগাদ করা হয়েছে। যেহেতু তিনি বলছেন, সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থ কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, কে কে রেখেছে সে তথ্য দিতে সদাপ্রস্তুত। তাহলে বাংলাদেশ সরকারের রিজার্ভ সংকটের এমন কঠিন মুহূর্তে ওই অর্থ ফিরিয়ে আনা বা কে রেখেছে তাদের নাম প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণে কেন দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। তবে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে দীর্ঘমেয়াদি পরিক্রমা করতে হয় বলে জানা গেছে। 

পাচারের সন্দেহভাজন তথ্য পাওয়ার পর প্রথমে এক দেশ থেকে আরেক দেশের প্রাথমিক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিজ দেশে মামলা করতে হয়। মামলা প্রমাণের পর মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের (এমএলএ) আওতায় তথ্য চাইতে হয়। এরপর সেই দেশের আইনে যদি অপরাধ হয়, তখন অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি। কিন্তু কে কে বাংলাদেশ থেকে ওই অর্থ পাচার করেছে সেটার কী কোনো তথ্য আছে। এটা অবশ্য বের করা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন সদিচ্ছার। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির

বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বত্র সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ও পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সত্য-মিথ্যার বক্তব্য নিয়ে তোলপাড়। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, এখন বক্তব্য পাল্টা বক্তব্যের সময় না। দেশের রিজার্ভ সংকট কাটিয়ে উঠতে ওই অর্থ কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সে উদ্যোগ গ্রহণই মুখ্য। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে নীতি ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ সে নীতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এখন উচিত সুইস ব্যাংকের থাকা অর্থ ফিরিয়ে আনা ও দুর্নীতিবাজদের তালিকা জনগণের কাছে প্রকাশ করে দেয়া। যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোনো দুর্নীতিবাজ আর দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের রক্ত নিংড়ানো কষ্টের অর্থ যেনহজম করতে না পারে। 

যেহেতু এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী উদার ও দুর্নীতিবাজ সে যেই হোক না কেন- তাকে শাস্তি প্রদানে দৃঢ়তা দেখান। তাহলে এখন উচিত বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ। আর এতে যদি সংশ্লিষ্টরা গড়িমসি করেন, অবহেলা করে, এ কথা ওই কথা বলে পাশ কাটিয়ে যান- তাহলে বুঝতে হবে- তারা দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নীতিকে শ্রদ্ধা করেন না। তারা দুর্নীতিবাজদের লালন করে দেশকে আজ এ ভয়াবহ পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার তথা, আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক উন্নয়ন সত্ত্বেও তাদের ইমেজ ক্ষুণ্ন করার জন্য দুর্নীতিবাজদের লালন করেছে। দেশের মানুষের স্বার্থটা তারা দেখেন না। যা প্রকারান্তে দুর্নীতিবাজদের পক্ষে থাকারই শামিল। 


শেয়ার করুন