২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৫:০২:১৯ পূর্বাহ্ন


পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে ধস নামতে পারে অর্থনীতিতে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৯-২০২২
পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে ধস নামতে পারে অর্থনীতিতে


এমনিতেই কোভিড সংক্রমণ সূচনা থেকেই বিশ্বমন্দা সৃষ্টি হয়েছিল। ধীরে ধীরে কোভিড আতঙ্ক কেটে সহঅবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি হলে অনিয়ন্ত্রিত গতিতে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা ঘোরা শুরু হলো। পাগলা ঘোড়ার গতিতে বাড়লো বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম। মহাসংকটে পড়লো সেই সব দেশ, যারা একান্তভাবেই জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভশীল। বাংলাদেশ কিন্তু কৃষিনির্ভর অর্থনীতি, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আর মূলত গার্মেন্টস, টেক্সটাইলস রফতানি আয় দিয়ে কোভিড পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছিলো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু দূরদর্শী প্রণোদনা প্যাকেজ খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষদের রক্ষাকবচ হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে অর্থনীতি গতি পেতো। কিন্তু সর্বত্র নিরঙ্কুশ আমলা নিয়ন্ত্রণ থাকায় দুর্নীতির রুই-কাতলাগুলো জাল ছিঁড়ে বাইরে গেলো।

এমনি যখন পরিস্থিতি, তখন শুরু  রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। জ্বালানি বাজারে লাগা আগুনে লাগলো ঘি।  বাংলাদেশ তরল জ্বালানি পুরোটাই, কয়লা, এলএনজি সবে আমদানি শুরু করেছে। অগ্নিমূল্যের জ্বালানি বাজার থেকে জ্বালানি আমদানি বাংলাদেশের জন্য গলার কাঁটা  হয়ে দাঁড়ালো। জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির সার্বিক প্রতিক্রিয়া বিস্তারিত পর্যালোচনা না করেই সরকারি আমলারা ৫১ শতাংশ এবং ৪২ শতাংশ জ্বালানি তেল উপজাতসমূহের দাম বৃদ্ধি করলো। প্রতিক্রিয়ায়- যোগাযোগ ভাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যসহ জীবনযাত্রার সকল ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি যেন জীবনকে বিষিয়ে তুললো। এখন আবার দেখছি শুল্ক সমন্বয় করে জ্বালানি মূল্য ৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। বিপুল পরিমাণ এককালীন মূল্যবৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ হ্রাস কোনো প্রতিক্রিয়া জার্সিটি করবে বলে মনে হয় না।

এদিকে সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টারা বেসামাল হয়ে পরস্পরবিরোধী কথা বলেছেন। কিছু মিডিয়া বুঝে না বুঝে মন্ত্রী, উপদেষ্টাদের মন্তব্য ছেপে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। 

ছায়াযুদ্ধের এক পর্যায়ে রাশিয়া বাংলাদেশকে সুলভমূল্যে অপরিশোধিত তেল এবং পরবর্তীতে জ্বালানি উপজাত বিক্রির প্রস্তাব দেয়। এতে কিছু তথাকথিত জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিভ্রান্তি ছড়াতে থাকে। রাশিয়ার তেল এবং জ্বালানি নিয়ে পশ্চিমা জোটের অবরোধ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ অধিকার আছে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ার। আমি রাশিয়া থেকে জ্বালানি উপজাত সুলভমূল্যে ক্রয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখি না। বরং সুলভমূল্যে জ্বালানি ক্রয় করা হলে বাংলাদেশের জ্বালানি মূল্য কমার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। শুভ প্রভাব পড়তে পারে জীবনযাত্রার সকল ক্ষেত্রে। জ্বালানি বিষয়ে কথা বলবেন জ্বালানিমন্ত্রী বা জ্বালানি উপদেষ্টা। সেখানে আগ বাড়িয়ে অন্যরা কেন কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর উচিত সবাইকে সংযত করা। আগামীদিনে কিন্তু বিশ্ব সংকট ঘনীভূত হবে। বাংলাদেশ পরিকল্পিত পথে না এগোলে অর্থনীতিতে ধস নামতে পারে। এটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের সামনে। অনেকেই এ শঙ্কা করছেনও কিন্তু। ফলে আবারো বলা হচ্ছে সেই পরিকল্পনার কথা, যা সুষ্ঠুভাবে হতে হবে এবং বাস্তবায়নও করতে হবে নিখুঁতভাবেই। তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব। নতুবা বাজে পরিস্থিতির অবতারণা ঘটবে এটা ধরেই নেয়া যায়। যার প্রভাব সঙ্গত কারণেই গিয়ে পড়বে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ওপর। যাতে প্রচ-রূপে সরকার বিব্রত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন