৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৬:৩৩:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৬-২০২২
কথার কথকতা


বাংলা ভাষায় নিউইয়র্ক থেকে যাঁরা সংবাদপত্র প্রকাশ করেন, তাঁদের কাছ থেকে আমি জানতে চাই, আপনাদের পত্রিকাগুলো এখানকার প্রশাসনের লোকজনের হাতে পৌঁছে কিনা আর এগুলোর বিষয়ে ওনারা মনোযোগী কি-না? প্রশ্নটি করলাম এজন্য যে, বাংলা পত্রিকাগুলোতে সাধারণ মানুষের কিছু সমস্যা মাঝেমাঝে কিছু সংবাদের মাধ্যমে উঠে আসে, কিছু আসে সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয় বা নিয়মিত কলামের মাধ্যমে, কিন্তু সেগুলো কর্তৃপরে নজরে আসে কি-না সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে। কারণ কোনো বিষয়েরই কোনো সমাধান পরিলতি হচ্ছে না। এ বিষয়ে পত্রিকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কতটুকু সজাগ বা সচেতন রয়েছেন, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন সমস্যার পরামর্শকৃত সমাধানসমূহ কর্তৃপ ল করেন কি-না বা সেই অনুযায়ী কোনো উদ্যোগ গৃহীত হয় কি-না আর সমস্যাগুলো সমাধান করা হয় কি-না এগুলো কি পত্রিকাসম্পৃক্ত মানুষেরা নিরীায় রাখেন? সুফল দেখা না গেলে তাঁরা কি কর্তৃপরে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন? প্রশাসনের সাথে পত্রিকাসমূহের প্রকাশক বা সম্পাদকদের কোনো সভা বা মতবিনিময় হয়ে থাকে কি? এসব প্রশ্নের উত্তরের েেত্র হ্যাঁ-সূচকতার ব্যাপারে আমি পুরোটাই সন্দিহান। কারণ পত্রিকায় সমস্যা প্রকাশিত হবার পর কোনো সমাধান না হওয়া বা কোনো উদ্যোগ গৃহীত না হবার ব্যাপারে আমি একেবারেই পরিষ্কার। সরকারি দফতরে কোনো বাংলা পত্রিকা পৌঁছে কি? মনে হয় না। পত্রিকা কর্তৃপ পৌঁছানোর চেষ্টা করেন কি? চেষ্টা করেন এরকম কোনো লণ পরিলতি হয় না। যার জন্য সমস্যা চলতে থাকে, পত্রিকা লিখতে থাকে আর সমাধান পরলতি না হওয়াটাও প্রেজেন্ট কন্টিনিউয়াস টেন্স হয়ে জারি অবস্থায় বিরাজ করে। সবার খেয়াল রাখা উচিত, এটি একটি উন্নত দেশ, আপনি উন্নত না হতে পারলে আপনার অযোগ্যতাই প্রমাণিত হবে, আপনি প্রশাসনের মানুষ হোন অথবা পত্রিকার লোক হোন। কথাটা হালকাভাবে নেবেন না।

এবার আজকের লেখার স্টিয়ারিংটা একটু ঘোরাবো। আমেরিকা একটি উন্নত দেশ। এর উন্নতির ভিত্তি হিসেবে অনেকগুলো উপাদানের মধ্যে একটি হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা, এর আবার দুটো দিক আছে, একটি হলো স্থল-জল-আকাশে পরিবহন, অন্যটি হলো ডিজিটাল যোগাযোগ। আরো অনেক উপাদান আছে, কিন্তু আমরা যেটা উল্লেখ করলাম তা যদি বিয়োগ করে দেয়া হয়, তাহলে আমেরিকার যা অবশিষ্ট থাকবে তা আর কোনো দোকানে বিকানো যাবে না। গেলেও লাকড়ির মতো পাউন্ড হিসেবে বেচতে হবে। মোদ্দাকথা হলো, যোগাযোগব্যবস্থা বাদ দিলে আমেরিকা সম্পূর্ণ স্থবির। কিন্তু যোগাযোগের সমস্যাগুলো পত্রিকায় তুলে ধরলেও সেগুলোর সমাধান হয় না কেন? পত্রিকার লোকজন এবং সরকারি লোকজনের মধ্যে কে এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন?

নিউইয়র্কের বাস এবং ট্রেনে চলাচলের সমস্যাগুলো নিয়ে পত্রিকান্তরে অনেক উল্লেখ এবং পরামর্শ মুদ্রিত হয়, কিন্তু এগুলোর সমাধান না হয়ে সবার নজরের আড়ালে পড়ে থাকে কি করে?  আপনারা জানেন, বাস ও ট্রেন ছাড়া নিউইয়র্ক অচল, সমস্যা সমাধানের জন্য পরামর্শ আহ্বানের নোটিশও মাঝেমাঝে নজরে পড়ে, কিন্তু গণমাধ্যম অর্থাৎ সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ কারো নজরে পড়ে না, এ জাতীয় কথা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে?

ইদানীং সাবওয়ে মেরামতের যেই তুফান চলছে তা ট্রেন ব্যবহারকারী মানুষদের বোধগম্যতার বাইরে চলে গেছে। সাবওয়েতে কিছু ঘটলে শোনা যায়, কাছাকাছি স্থাপিত ক্যামেরাটি নষ্ট ছিলো। এরকম অনেক সমস্যা। তাহলে কি আমেরিকার চালকরা একসময় বলে বসবেন: ‘আমরা আর চালাতে পারছি না।’

এক ভদ্রলোক ব্রুকলিনের শেষ মাথা থেকে প্রায়শই জ্যাকসন হাইট যান। আপনারা জানেন, এখান থেকে জ্যাকসন হাইটের দূরত্ব কিন্তু ভৌগোলিকভাবে খুব বেশি নয়, কিন্তু ওইটুকু রাস্তাই ট্রেনে যেতে হয় দুটো ট্রেন পাল্টে, দুনিয়া ঘুরে এক থেকে সোয়া ঘণ্টা লাগিয়ে যেতে হয়। আর বাসেও দুটো বাস ব্যবহার করে প্রায় এক ঘণ্টা লাগে। কোনাকোনি একটা রেললাইন করার চিন্তা করছেন কর্তৃপ, কিন্তু তা যেন কোনো সমুদ্রের পাড় থেকে শুরু হবে যেটা বাস্তব সমস্যার কোনো সমাধানই করবে না। সেটি তো সুদূরের বিষয়, কিন্তু বর্তমানেই তো উনি জ্যাকসন হাইট যেতে পারছেন না। একদিন ওয়েস্ট-৪ গিয়ে দেখেন ই-ট্রেন নেই, আবার এ-ট্রেনে উঠে ৪২-স্ট্রিট গিয়ে আধামাইল হেঁটে ৭ ট্রেন ধরলেন। কিন্তু ট্রেনে যেটাকে জ্যাকসন হাইট লেখা হয়েছে, দেখা গেল ওটা জ্যাকসন হাইট নয়, যেটাকে ই-ট্রেন আর এফ-ট্রেন জ্যাকসন হাইট বলে ওটাকে ডাকা হয়েছে উডহ্যাভেন/৭৪ স্ট্রিট নামে। দুটো ট্রেনই একই দেশের এবং একই কর্তৃপরে নয় কি? আরেকদিন এ-ট্রেন থেকে নেমে ভদ্রলোক ই-ট্রেনে উঠে দেখেন সাবওয়ে কার অন্ধকার। ট্রেন ১৪-স্ট্রিট পৌঁছলে আলো এলো। আরেকদিন এ-ট্রেনে গিয়ে দেখেন ক্যানাল, ওয়েস্ট-৪, ১৪-স্ট্রিট বা ৪২-স্ট্রিট কোথাও ই-ট্রেন নেই। তিনি নোটিশের কাগজ পড়েও বুঝতে পারলেন না কি করতে হবে। নোটিশে রকওয়েতে কি করতে হবে সেই পরামর্শ লেখা আছে।

সমস্যা তো এখানেই শেষ নয়। এই ভদ্রলোক অন্য রাস্তায় বাসযোগে বিকল্প পদ্ধতিতে যখন জ্যাকসন হাইট যাবার চেষ্টা করতে শুরু করলেন, তখন আবার অন্যরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে শুরু করলেন। কয়েকদিন ভালোয় ভালোয় গেলেন। কিন্তু দেখা দিলো আরেক সংকট। তিনি কিউ-৮ বাসে চেপে উডহ্যাভেন বুলেভার্ড গিয়ে কিউ-৫৩ বাসে ওঠেন। কিন্তু মাঝে মাঝে এর সড়ক পাশে সংস্থাপিত টিকেট মেশিনে কাগজ থাকে না। তখন কার্ড থেকে টাকা কাটে কিন্তু মেশিন সাহেব কাগজের অভাবে টিকেট দিতে পারেন না। আরেক সমস্যা হলো, কিউ-৮ বাসের সিনিয়র সিটগুলো প্রায়শই ইয়াংরা দখল করে রাখে আর আমার বর্ণিত সত্তর বছর বয়েসী হার্টের রোগীকে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। চালক এ ব্যাপারে মনোযোগ দেন না, না কি ইচ্ছে করে উদাসীন থাকেন, না কি বর্ণ কাজ করে, তা তিনি আমাকে স্পষ্ট করে বলতে পারেননি। তবে এটা বলতে পেরেছেন যে, মেশিন যখন টিকেট দিতে পারে না, তখন পুরো ভ্রমণটাই ওনার জন্য এক কঠিন টেনশনে কাটে এই ভেবে যে, এই বুড়ো বয়সে টিকেট চেকারের হাতে বেইজ্জতি হতে হয় কি-না?

আমরা জানি, এমটিএ’র কোনো কর্মীর সাথে কেউ দুর্ব্যবহার করলে তা ফেলোনির পর্যায়ে পড়ে অর্থাৎ আমেরিকায় এটা প্রথমসারির অপরাধ বলে গণ্য হয়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, সরকার এমটিএর কর্মীদের মাধ্যমে সুষ্ঠু যোগাযোগব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এটা শুভ লণ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের উল্লিখিত সিনিয়র ভদ্রলোকের বাধাহীনভাবে চলাচলের েেত্র যেসব প্রতিক‚লতার মুখোমুখি হচ্ছেন ওগুলো কোনে পর্যায়ের অপরাধের মধ্যে পড়ে? সেগুলোর জন্য কে দায়ী হবে? এই বুড়ো ভদ্রলোকের আরেক দিনের অভিজ্ঞতার আমি চাুস সাী, সেটি বর্ণনা করে সব কিছুর বিচার আপনাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে আমি আজকের লেখা শেষ করবো।

একদিন তিনি ট্রেনে উঠলেন। বসার আরাম পাচ্ছিলেন না, পাশে তাকিয়ে দেখলেন খালি, বাম পা’টি ডান পায়ের ওপর দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে রইলেন। হাতে রয়েছে ওনার সেলফোনটি। হঠাৎ মেয়ে কণ্ঠের চেঁচামেচিতে ওনার তন্দ্রা টুটে গেলো। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলেন, পাশে এক রমণী বসা এবং তিনি উচ্চৈস্বরে কথা বলে যাচ্ছেন। আসলে তিনি চিৎকার এবং শীৎকার করছেন। মুরুব্বি ওনার পা নামিয়ে বসলেন, একেবারেই গা-ঘেঁষে এক রমণী বসেছেন দেখে হাতের ফোনটা অন করে ওটার দিকে তাকালেন। মহিলাটি কামরাভর্তি লোকজনকে উদ্দেশ্য করে ইংরেজিতে যা বললেন তার অর্থ হলো, তোমাদের মধ্যে কে আছো যে, আমাকে খুশি করতে পারো? কেউ নেই? তাহলে আমার কি হবে? আমি এখন কি করবো? কার কাছে যাবো? এই আগুন আমি কীভাবে নেভাবো? তাকিয়ে দেখলাম, ভদ্রলোক পুরো পাথরের মতো টাইট হয়ে গেছেন। বুদ্ধি করে চোখ পরিপূর্ণ নিবদ্ধ রাখলেন ফোনের ওপর। মহিলাটি ওনার গায়ে আঙুল দিয়ে গুঁতো মেরে প্রশ্ন করলো, তুমি কি আমার জন্য কিছু করতে পারো? বুদ্ধিমানের কাজ করেছেন তিনি, তাকাননি মোটেও। আমি ভাবছিলাম, কাছের ভিজিল্যান্স ক্যামেরাগুলো ঠিক আছে কি? না হলে তো এই বুড়ো মানুষটি মুশকিলে পড়ে যাবে। ভাগ্য ভালো, পরবর্তী স্টেশন আসার সাথে সাথে অম পুরুষদের গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে মহিলাটি নেমে গেলেন।

প্রিয় পাঠক, আমি আর কিছু কি বলবো? এই প্রবীণ ভদ্রলোকের স্বাভাবিক জীবনযাপন বিঘিœত করা ফেলোনির পর্যায়ে পড়ে কিনা আর এর জন্য কার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যায়, আমাকে গোপনে হলেও জানাবেন।


শেয়ার করুন