২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ১১:৫৩:৩৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বর্তমান সংকটের নেপথ্যে গণতন্ত্রহীনতা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১১-২০২২
বর্তমান সংকটের নেপথ্যে গণতন্ত্রহীনতা


নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর উদ্যোগে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আমাদের বর্তমান সংকটটি শুধু অর্থনৈতিক সংকট নয়, এর সঙ্গে আরও দুটি বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি হলো কার্যকর গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি তথা ‘ডেমোক্রেটিক ডেফিসিট’। অপরটি সুশাসনের অভাব বা ‘গভার্নেন্স ফেইলিউর’। এই তিনটি সংকটের মধ্যে গভীর যোগসূত্র আছে, বস্তুত এগুলো একইসূত্রে গাঁথা।  

নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর উদ্যোগে ১ অক্টোবর মঙ্গলবার ‘অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের পূর্বশর্ত রাজনৈতিক সংস্কার’ শীর্ষক একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে অনুষ্ঠিত হয়। সুজন সহসভাপতি সাবেক বিচারপতি এম এম মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থপন করেন সুজন স¤পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সুজন নেতৃবৃন্দের মধ্যে নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. আহসান এইচ মনসুর, ড. তোফায়েল আহমেদ, জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন প্রমুখ যুক্ত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। 

বদিউল আলম মজুমদার আরো বলেন, গণতন্ত্রের প্রধানতম অনুষঙ্গ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি একতরফা ও ব্যর্থ জাতীয় নির্বাচনের কারণে সরকার আর জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়। যেহেতু প্রতি পাঁচবছর অন্তর অন্তর ক্ষমতাসীনদের আর জনগণের কাছে ‘ভোট ভিক্ষার’ জন্য যাওয়ার প্রথা ভেঙে গিয়েছে অর্থাৎ ‘নির্বাচিত’ হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীনদের আর জনগণের ভোটের প্রয়োজন হয় না, তাই সরকারের আর জনগণের স্বার্থে ও কল্যাণে কাজ করার দায়বদ্ধতা নেই। যারা তাদেরকে ক্ষমতায় এনেছেন ও ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছেন এবং পরবর্তী সময়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে যাদের ওপর নির্ভর করতে হবে, সরকারকে সেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকেই সন্তুষ্ট রাখতে হয়। অর্থাৎ ভোটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ‘নিম্নমুখী’ দায়বদ্ধতার অতি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো আমাদের দেশে ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের আজকের এই ভয়াবহতার জন্য দ্বিতীয় যে বিষয়টি প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে তা হলো গভার্নেন্স ফেইলিওর বা সুশাসনের অভাব। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের অভাব থেকে শুর “করে ন্যায়পরায়ণতার অনপুস্থিতি, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা ও জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণের অভাব। সরকারের আশীর্বাদপুষ্টরা যে যেখানে পারছে গোষ্ঠীতন্ত্র কায়েম করে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। এমতাবস্থায় আইএমএফ প্রদত্ত ঋণ ‘ফুটো কলসি সিনড্রম’ বা ছিদ্রযুক্ত কলসিতে পানি ঢালার মতোই হতে পারে। অর্থাৎ ফুটে কলসিতে পানি যতই ঢালা হোক তাতে যেমন কলসি ভরবে না, তেমনি রাজনৈতিক তথা গণতন্ত্রের ঘাটতি পূরণ অর্থাৎ  জনগণের ভোটাধিকার ফেরত প্রদান এবং দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের লাগাম টানা সম্ভব না হলে অর্থনৈতিক সংকট থেকেই যাবে। কেননা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট সমাধান পর¯পরের সঙ্গে স¤পর্কিত, একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটি সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট সমাধান করতে হলে কিছু কার্যকর রাজনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংস্কারের প্রথম ও আবশ্যকীয় পদক্ষেপ হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। তবে শুধু নির্বাচিত সরকারই গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট নয়। কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ব্যক্তি ও কোটারি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জনস্বার্থে  রাষ্ট্র পরিচালনা করা। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সব সিদ্ধাস্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না করা, ব্যক্তিতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, দলতন্ত্র ও ফায়দাতন্ত্র পরিহার করা। পরিচ্ছন্ন ও জনমুখী শাসন কাঠামো গড়ে তোলা। বাক-স্বাধীনতাসহ নাগরিকদের সব অধিকার সমুন্নত রাখা। পাশাপাশি  সব রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার চর্চা করা, যথাযথ আইনি কাঠামো প্রণয়ন ও তা পরিপূর্ণভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। সব কাজে সবার অন্তর্ভুক্তিকরণ, সমতা ও ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করা। সর্বোপরি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।

ড. বদিউল আলম মজুমদার  সুজন-এর পক্ষে ২১ দফা রাজনৈতিক সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবগুলো হলো: রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, নির্বাচনী সংস্কার, নির্বাচনকালীন সরকার, কার্যকর জাতীয় সংসদ, স্বাধীন বিচার বিভাগ, সাংবিধানিক সংস্কার, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল, স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, দুর্নীতি বিরোধী সর্বাত্মক অভিযান, প্রশাসনিক সংস্কার, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংরক্ষণ, একটি নতুন সামাজিক চুক্তি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িক মানসিকতার অবসান। তরুণদের জন্য বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন ও পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন।  

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের এখন সর্বাত্মক চেষ্টার মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি কমিয়ে আনা, রিজার্ভ কমে যাওয়া ঠেকানো, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার জন্য জরুরিভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সামনে নির্বাচনের কথা চিন্তা করে হলেও সরকারকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে হবে। ফিসকাল পলিসিতে পরিবর্তন আনতে হবে, বিশেষ করে সরকারি ব্যয়ে সুশাসন আনতে হবে। সরকারি ব্যয়ে অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে, তা কমানোর জন্য সংস্কার করতে হবে। আইএমএফের দেওয়া শর্ত আমাদের জন্য কিছুটা হলেও সংস্কার কাজ শুরু করতে সাহায্য করবে বলে আমি মনে করি।    

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দলের জনসমর্থন প্রায় সমান, তাই সমঝোতা না হলে আমাদের অনেক কঠিন পরিস্থির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা আছে।   

বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, আজকের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি খুবই সময়পোযোগী। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক সমঝোতার বিকল্প নেই। রাজপথের সংঘাত কিংবা মারামারিতে এর সমাধান হবে না। আমাদের ঋণখেলাপীদের সংখ্যা বাড়ছেই। কিন্তু কোনো ধরনের প্রতিকার পাচ্ছি না। আমাদের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ নেই। এই দায়িত্বটা কার? বাংলাদেশের মানুষের এটি জানার অধিকার আছে। মূল্যস্ফীতির প্রকোপে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। এসব সংকট দূরীকরণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় সমঝোতা এখন সময়ের দাবি।

শেয়ার করুন