২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ৬:৪৪:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


রাজনীতি সংঘাতে রূপ নিচ্ছে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৯-২০২২
রাজনীতি সংঘাতে রূপ নিচ্ছে


বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক স্রোতের মধ্যে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দ্রুত রক্তক্ষয়ী রূপ নিচ্ছে। বর্তমান সরকারের উপর্যুপরি তৃতীয় টার্মস শেষ হবার লগ্নে এই ধরনের দ্বন্দ্ব আর সংঘাত দেশ-জাতি আর সমাজের জন্য আদৌ সুখকর নয়, এটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ না বুঝলে সবার জন্য অমঙ্গল। এমনিতেই বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে দেশে চলছে নিদারুণ জ্বালানি সংকট। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণহীন না হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অগ্নিমূল্যে জনজীবন অস্বস্তিতে। এমতাবস্তায় রাজনৈতিক সংঘাতকে ঈশান কোণে মেঘ ভেবে শঙ্কিত হচ্ছেন অনেকে।

ভালো লাগুক আর নাই বা লাগুক, ২০১৪ আর ২০১৮ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। যদিও সরকারি দল দাবি করে গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছে, তবুও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে বলতে হবে নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন হয়নি। ২০১৪ সনের নির্বাচনে মূলধারার বিরোধীদল নির্বাচন বয়কট করায় সরকারি দলের সিংহভাগ সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার অর্থাৎ ২০১৮ সনে অনেকেই বলেন প্রশাসন আর পুলিশের সহযোগিতায় রাতের আঁধারে ভোট জালিয়াতি করে নির্বাচনী ম্যান্ডেট ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। তাই রাজনীতি চলে গেছে দুর্নীতিবাজ আমলা আর সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের কাছে। বিরোধী রাজনীতি পথভ্রষ্ট। তাই সংকট সময়েও যেন স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে রাজপথে আন্দোলন নেই। সব দল নিজ দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থ নিয়েই ব্যতিব্যস্ত।

২০২৩ শেষভাগে  বা ২০২৪ শুরুতে হবে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন। অনেক জল গড়ানোর পর একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। গঠন প্রক্রিয়ার কোনো পর্যায়ে প্রধান বিরোধীদল অংশ না নেয়াটা সঠিক কি বেঠিক সেই বিতর্কে যাবো না। তবে এতোটুকু বলা যায়, সরকারবিরোধীরা এতে অংশ নিলে ভিন্ন কিছু হতেও পারতো। নতুন নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ওদের অধীনে নির্বাচন কতটুকু স্বচ্ছ হবে, আগাম বলা মুশকিল। কারণ ওই চিন্তাভাবনার সমীকরণে অনেক কিছুই বাঁধা পড়েছে। নির্বাচন পর্যন্ত সুস্থ পরিবেশ বজায় থাকবে কিনা সন্দেহ। তবে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিশ্বসমাজের আগ্রহ তীব্র। প্রতিবেশী ভারত সবসময় প্রচ্ছন্ন প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পশ্চিম ইউরোপীয় জোট, চীন, জাপান এমনকি রাশিয়ার আগ্রহ আছে বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে। ডিজিটাল যুগ। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক আর সোশ্যাল মিডিয়া অনেক সক্রিয়। তাই এবারে অন্তত যেন তেন প্রকারে নির্বাচন করে পার পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। 

সরকার তিন টার্মে অনেক সময় পেয়েছে। খাদ্য উৎপাদনে সাফল্যের কারণে খাদ্য সংকট নেই। অনেক দুর্নীতি থাকলেও করোনা অতিমারী ভালোভাবে সামাল দিয়েছে। দেশে অনেক মেগা প্রকল্প চালু থাকায় মানুষের কাজের জন্য হাহাকার করতে হচ্ছে না। পুরো দেশকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হলেও সার্বিক ভ্রান্ত জ্বালানি নীতির কারণে এখন তীব্র জ্বালানি সংকট। জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটের কারণে রফতানি শিল্প রুগ্ণ হয়ে পড়ছে। আশু সমাধানের পথ সরু হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে অবিলম্বে বৈদেশিক বাণিজ্যে সংকট সৃষ্টি হবে। সরকারের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নেই। একশ্রেণির বেনিয়াগোষ্ঠী সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। জ্বালানি সেক্টরে সীমাহীন সিস্টেম লসের নামে রাহাজানি চলছে, অদক্ষতার কারণে রয়েছে অপচয়। নিজেদের জ্বালানি সম্পদ মাটির নিচে রেখে কিছু কায়েমি স্বার্থবাদীদের স্বার্থে জ্বালানি আমদানিকে প্রাধান্য দেয়ার কারণে সংকট ত্বরান্বিত হয়েছে। বিশ্ববাজরে জ্বালানির অগ্নিমূল্য থাকায় স্থগিত হয়েছে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়। বিশ্ববাজারে কয়লা, জ্বালানি তেলের অগ্নিমূল্য। বাংলাদেশ সংকটে জ্বালানি ক্রয় নিয়ে, অথচ এখনো কয়লা উত্তোলনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। গ্যাস-তেল অনুসন্ধান কার্যক্রম সীমিত। আমলানিয়ন্ত্রিত পেট্রোবাংলার সক্ষমতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন। পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলোতে দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্য। জ্বালানি সংকট সাহস মিটবে বলে মনে হয় না। নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ সংকট বজায় রেখে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়।

বিরোধীদল কিন্তু জনঘনিষ্ঠ বিষয় নিয়ে আন্দোলন করছে না। তাই তাদের আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই। সন্ত্রাস করে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। সরকারি দলকেও বুঝতে হবে জনজীবনে সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে যে কোনো মুহূর্তে জনবিস্ফোরণ হতে পারে। জনগণকে চিরদিন বোকা বানিয়ে রাখা যাবে না। প্রযুক্তির কারণে কিন্তু জনগণ সবার ভূমিকা বিষয়ে অবহিত। দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ কারা পাচার করেছে, তাদের সবাইকেই সাধারণ মানুষ চেনে। শাক দিয়ে দীর্ঘদীন মাছ ঢাকা যাবে না।

সংকটময় পরিস্থিতিতে অবিলম্বে বহুল ব্যয়ের মেগা প্রকল্পসমূহের বিপুল ঋণের কিস্তি পরিষদ শুরু হলে বেকায়দায় পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এই পর্যায়ে জ্বালানি সংকটের কারণে রফতানিমুখী শিল্পের সংকট দীর্ঘায়িত হলে মুদ্রাস্ফীতি এবং আর্থিক সংকট হলে বিস্মিত হবো না। 

তাই তো জাতীয় স্বার্থে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক মহলকে সচেতন হয়ে সুস্থ রাজনৈতিক ধারা বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। বিরোধীদলসমূহকে সুস্থ রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টিতে সরকারি দলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে গণতান্ত্রিক পন্থায়। সরকারকেও নির্বতনমূলক ধারা থেকে বেরিয়ে সমঝোতার পথে এগোতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ওরাই ফ্রাঙ্কেস্টাইন হয়ে সরকারকে বিপদে ফেলবে। এতে করে সরকার প্রধান সংকটের সময় কাউকে পাশে নাও পেতে পারেন। ফলে এক্ষুনি সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে দক্ষ হাতে সামাল দেয়া।

শেয়ার করুন