২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৫:৪৯:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট
মুহূর্তেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে অর্থ ও জিনিসপত্র
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১০-২০২২
মুহূর্তেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে অর্থ ও জিনিসপত্র যাত্রীদের ব্যাগ স্কেনিং হচ্ছে


ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যাত্রী হয়রানি নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করে একটি অসাধু চক্র এই কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে প্রবাসী যাত্রীদের লাগেজ চুরি ও লাগেজ কাটা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। হালে যোগ হয়েছে হ্যান্ড লাগেজ ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র স্কেনিং-এ কারচুপি। হ্যান্ড লাগেজ বা পকেটে থাকা জিনিসপত্র প্রতিটি যাত্রীকে স্কেন করতে হয়। এয়ারপোর্টে নামার পর এই হ্যান্ড লাগেজ এবং পকেটে থাকা জিনিসপত্র স্কেন করা হয়। স্কেন করার সময়ই যাত্রীদের হ্যান্ড লাগেজে থাকা জিনিস পত্র, মানি ব্যাগে থাকা অর্থ এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সরিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রের সাথে জড়িত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাও। অনেকেই বাংলাদেশে এয়ারপোর্টে নামার পর একটু আপ্লুত থাকেন। আবার অনেক যাত্রী এই সব কারসাজি বুঝে না। এয়ারপোর্টে নেমে তারা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। স্কেন করা সময় একটি দুষ্টু চক্র যে তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছে তা যাত্রীরা খেয়াল করেন না। আবার অনেক সময় কৌশলে হ্যান্ড লাগেজ থেকে অর্থসহ জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছে, মানি ব্যাগ থেকে অর্থ সরিয়ে নিচ্ছে। যে কারণে ভুক্তভুগীরা বলেছেন, হ্যান্ড লাগেজ এবং ব্যাক্তিগত জিনিসপত্র স্কেন করার সময় সাবধান হওয়া উচিত এবং লাগেজ বা যে বাক্সে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রাখা হয় তা থেকে চোখ সরিয়ে রাখাও উচিত নয়। আপনি অন্য মনস্ক হলেই বিপদে পড়বেন।

প্রবাসী সৈয়দ জুয়েল। তিনি নিউইয়র্ক প্রবাসী। তার দেশের বাড়ি বাংলাদেশের মৌলভীবাজারে। মৌলভীবাজার কলেজের সাবেক জিএস। নিউইয়র্ক প্রবাসী সৈয়দ জুয়েল বাংলাদেশী কম্যুনিটিতে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। তিনি তার পরিবার নিয়ে ৪ জুলাই আমিরাত এয়ারলাইন্সে বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সাথে ছিলেন তার স্ত্রী সামিয়া কোরেশি, প্রবাসে জন্ম নেয়া তার সন্তান শিমাজ সাঈদা, জানান সাঈদা এবং জায়ান সাঈদ। সৈয়দ জুয়েল জানান, বিমান ধকল শেষে আমরা স্কেন করতে যাই আমাদের হ্যান্ড লাগেজ, সেই সাথে আমাদের মানিব্যাগ ও পকেটে থাকা অন্যান্য জিনিসপত্র। হ্যান্ড লাগেজ দেয়ার পর অন্য একটি বাক্সে আমাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র দিতে বলা হয়। নিয়ম অনুযায়ী আমরা তা দিই। এই সব জিনিসপত্রে সাথে ছিলো বেল্ট, মানিব্যাগ, আইফোন, দামি ট্যাগ ঘড়িসহ অন্যান্য জিনিস। আমাদের ব্যক্তিগত জিনিসগুলো দেয়ার পর আমাদের স্কেন মেশিনের অপরপান্তে চলে যেতে বলা হয়। আমরা চলেও যাই। তখন মনের মধ্যে কোন সন্দেহ ছিলো না। প্রতিটি এয়ারপোর্টেই এভাবে স্কেন করা হয়। সেই চিন্তা মাথায় রেখেই আমরা অন্যপ্রান্তে অপেক্ষা করছিলাম। আমার ম্যানিব্যাগে ৭ শত ডলারের মত ছিলো। সরল বিশ্বাসে অপেক্ষা করছি। আমরা দেখলাম সুইস টিপতেই স্কেনিং মেশিনে সব কিছু ঢুকে যাচ্ছে। যা কম্পিউটারে দেখা যাচ্ছে। একজন মহিলা অফিসার তা মনিটরিং করছেন। দুই জন লোক স্কেনিং মেশিনের সামনে। আমরা অপেক্ষা করছি কিন্তু আমাদের হ্যান্ড লাগেজ এসেছে, অন্যান্য জিনিস আসেনি। অপেক্ষা করতে করতে এক সময় তাদের বিষয়টি জানাই। তারা কোন উত্তর দিতে পারেনি। মহিলা অফিসারকে বললে, তিনি অবাক হয়ে বলেন, এটা কিভাবে সম্ভব? আপনার জিনিসপত্র চলে গিয়েছে। আমারতো অবস্থা খারাপ। আমি প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। মহিলা অফিসারকে বললাম- আপনি ভিডিওতে দেখেন। কোথায় গেল আমার জিনিসপত্র? আমি জানি আপনারা সব দুর্নীতিবাজ। এভাবেই আপনারা প্রবাসীদের অর্থ হাতিয়ে নেন এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র সরিয়ে নেন। অনেক সময় অনেকেই কয়েক শত ডলার বা কিছু জিনিসের জন্য কিছু বলেন না। আমি কিন্তু সেই ধরনের যাত্রী নই।

এ দিকে আমার স্ত্রী ঠিই আমাদের জিনিসপত্রের দিকে নজর রেখেছেন। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, আমাদের বক্সটি নিচে নামিয়ে রাখা হয়েছে। স্কেনিং ব্যাল্টে তুলে আমরা অন্যপ্রান্ত যাওয়ার সময় সাথে সাথেই ব্যাল্ট থেকে নিচে নামিয়ে রাখা হয়েছে। আমি মহিলা কর্মকর্তাকে আমাদের বাকেট মাটিতে দেখানো পর তা ফেরত দেয়া হয়। জনাব জুয়েল বলেন, আমি যদি চিৎকার না করতাম বা ক্যামেরা দেখতে না বলতাম তাহলে আমাদের জিনিস হয়ত ফেরত পেতাম না। যে কারণে আমি প্রতিটি প্রবাসীকে বলতে চাই- এয়ারপোর্টে সাবধান থাকবেন, স্কেন করার সময় চোখ কান খোলা রাখবেন। তা নাহলে অর্থ এবং জিনিসপত্র হারাতে পারেন। সুতরাং সাধু সাবধান। তিনি বলেন, আমার সাথে পরিবার না থাকলে হয়ত এয়ারপোর্ট ম্যানেজারকে বলতাম বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলতাম। কিন্তু ঝামেলা এড়াতে তা করতে যাইনি। তবে সবাইকে সাবধান করা উচিত বলে আমি মনে করি।

শেয়ার করুন