০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০১:১১:৩৬ অপরাহ্ন


বাংলাদেশে কী হতে যাচ্ছে
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৬-২০২৩
বাংলাদেশে কী হতে যাচ্ছে


বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বড় পরিবর্তন। আষাঢ়ের মেঘবৃষ্টির চিত্র এখন সর্বত্র। শুধু বৃষ্টি নয়, ঝুম বৃষ্টি। মেঘের তর্জন গর্জন। ক’দিন আগেও প্রচণ্ড লোডশেডিং ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছিল দেশ। সবার প্রত্যাশায় ছিল শান্তির পরশ বোলাতে স্বস্তির বৃষ্টি। এখন স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ তাপমাত্রা নেই। লোডশেডিংয়ে কিছুটা উন্নতি, অন্তত আগের তুলনায়। 

সামনেই ঈদুল আজহা। মানুষের মধ্যে বিশেষ করে মধ্যবিত্তদের হাপিত্যেশ বেড়ে গেছে। বাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচের পরিমাণটা যেভাবে বেড়েছে, তাতে পশু কোরবানিতে শরিক হতে পারবে কি না সেটা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা। সংসার, স্ত্রী সন্তানের কথা ভেবে কখনো মনস্থির হয় কোরবানিতে অংশ নিতে। পরক্ষণেই হিসাবের টালি মেলাতে গেলে সম্ভব হয়ে উঠছে না অনেকেরই।

অন্যদিকে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ রাজনীতিতে। সময় ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ। জানুয়ারি ২০২৪-এর পর আর নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই। ফলে ওই হিসাব ধরলে তার ৯০ দিন পূর্বে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে ক্ষমতাসীন সরকারের। সংবিধান মোতাবেক ক্ষমতায় না থেকেও ক্ষমতা প্রয়োগের কিছু বিধিবিধান রয়েছে। আপত্তিটা সেখানেই বিরোধীদলসমূহের। দীর্ঘদিন ধরেই যে আল্টিমেটাম তাদের, তাতে ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগ করে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে একটি নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে। কিন্তু দেশের সংবিধানে এমনটা নেই। আগেও ছিল না। কিন্তু বিএনপিকে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত মিলে রাজি করিয়েছিল তুমুল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এবার আওয়ামী লীগ সে প্রথা বাতিল করার ফলে সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এখন বিএনপিসহ বিরোধীদলসমূহের, যা জোরালো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। 

ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলের বিরোধ এখানেই। সরকারি দলের বক্তব্য সংবিধান মেনেই হবে সব। বিরোধীদলের বক্তব্য সংবিধানমতে এ সরকার ক্ষমতা ধরে রেখে তার অধীনেই জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৮ সনে এমন নির্বাচনে সুখকর চিত্র নেই। ফলে তত্ত্বাবধায়ক হতেই হবে। 

দিন যত গড়াচ্ছে, ততই দুই পক্ষ শক্তিশালী অবস্থানে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে ভিসানীতি। সেটা নিয়েও তুমুল সমালোচনা এবং রাজনীতি। কেউ বলছে এটা অমুক দলকে শাঁসানোর জন্য। আরেক দল বলছে, অমুক দলকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্যই আমেরিকার ভিসানীতি। মাঝে সাধারণ মানুষ নির্বোধের মতো সব হজম করছেন। অথচ খেলার খেলোয়াড় কিন্তু সাধারণ জনগণই।

ভিসানীতির প্রভাব

উল্লেখ্য, গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচনব্যবস্থায় জালিয়াতি ও অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে, সেই ব্যক্তিকে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। এই নীতির আওতায় থাকবেন বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য। আইনপ্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও এর আওতাভুক্ত হবেন। এছাড়া বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীলসমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রকাশে বাধা দিলেও ভিসা পাবে না জড়িত ব্যক্তি।

ভিসানীতিতে সাধারণ মানুষের কিছু যায় আসে না। তবে এটাতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর। সমস্যার মূলেই সেখানে। প্রধান বিরোধীদল বলছে এটা দেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে লজ্জাজনক ঘটনা। একই সঙ্গে এ ভিসানীতি আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০১৪ ও ২০১৮-এর মতো না হতে পারে, তার পক্ষে কাজ করবে। আওয়ামী লীগ বলছে, দীর্ঘদিন বিএনপি সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এটাতে বিএনপি এখন বাধ্য হবে নির্বাচনে অংশ নিতে। না নিলে এ ভিসানীতি তাদের ওপর বর্তাবে। তবে আসল ঘটনা সাধারণ মানুষ যা বুঝেছে সেখান থেকে সরানো যাবে না। কারণ ডিজিটাল যুগে বিভিন্ন মাধ্যমে ওই ভিসানীতিতে কারা ক্ষতিগ্রস্ত সেটা ইতিমধ্যে জেনে গেছে সাধারণ মানুষ। 

ওবায়দুল কাদের  

সেতুমন্ত্রী গত শনিবার (১৭/৬/২৩) গাজীপুরের টঙ্গীতে বিআরটি প্রকল্পের সাড়ে চার কিলোমিটার নির্মাণকাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মার্কিন ভিসানীতিতে তারা বলছে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, তাদের ক্ষেত্রে এই ভিসানীতি প্রয়োগ হবে। এই নীতি এখন অন্ধ, বধির হয়ে থাকবে; না বাস্তববাদী হবে আমরা দেখবো।

তিনি (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে) বলেন, ভিসানীতি করায় তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। ভিসানীতি আমাদেরও থাকতে পারে। আমরাও করতে পারি। অপেক্ষায় থাকুন। সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, দুর্নীতি, দুঃশাসন বললেই বিএনপির নাম বলতে হবে। যারা দুর্নীতি, দুঃশাসন করে তারা কোন মুখে এতো বেশি কথা বলছে জানি না। তিনি বলেন, ‘সরকার থাকতে পারবে না, বিদায় নিতে হবে’ বিএনপির এমন কথা ১৪ বছর ধরে শুনে আসছি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই ১৪ বছরে তাদের নেত্রীর মুক্তির জন্য দৃশ্যমান কোনো আন্দোলন তারা করতে পারেনি। আর তারা সরকারের বিদায় করবে আন্দোলন করে? তিনি বলেন, বিদেশে পলাতক কোনো নেতার রিমোট কন্ট্রোল আহ্বানে বাংলাদেশের আন্দোলন এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন করার সুযোগ নেই। আন্দোলন যাকে বলে এখন পর্যন্ত তারা সেটা প্রমাণ করতে পারেনি। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর 

গত ১৮ জুন রোববার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদের বলছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি করেছে, করুক, আমাদের কিছু যায় আসে না। ভিসানীতি আমরাও করতে পারি। উত্তর কি দেবো বলেন? এখন আপনারাও ভিসানীতি করেন না দেখি। ঠিক আছে। প্রশ্নটা সেটা না। প্রশ্নটা হচ্ছে যে, এটা ভিসানীতিরও প্রশ্ন না। প্রশ্ন হচ্ছে যে, আপনার বিবেকের প্রশ্ন, জাতির বিবেকের প্রশ্ন ‘আই অ্যাকাউন্টেবল ইউএসএ না’, ‘আই অ্যাকাউন্টেবল টু মাই পিপল’। আমার জনগণের কাছে অ্যাকাউন্টেবল কি না বলেন, এটাই যথেষ্ট। জনগণ কি বলছে? আমি ভোট দিতে পারছি না। জনগণ কি বলছে যে, আমার ওপর অত্যাচার হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে, অন্যায়ভাবে আমার কাছ থেকে ট্যাক্স আরোপ করে টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে, কোর্টে গেলে আমি ন্যায়বিচার পাই না-এ বিষয়গুলো আমাদের আজকে বড় সমস্যা করছে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এরা কি করে গণতন্ত্র দেবে? এরা বারবার করে বলে যে, আমরা নির্বাচন দিচ্ছি তো একটা ভালো নির্বাচন হবে কথা দিচ্ছি। আরে মানুষ বিশ্বাস করবে কী করে তোমাদের, তোমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবে। কোন দিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে ভালো নির্বাচন করেছে? কোনো দিন না। দেখুন প্রত্যেকটা নির্বাচন ইভেন কি ’৭৩ সালে তারা একই ঘটনা ঘটিয়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে তোমরা একদলীয় বাকশাল করেছো, তখনো তোমরা ৩০ হাজার মানুষ রক্ষীবাহিনী দিয়ে গুলি করে হত্যা করেছো, তোমাদের দুঃশাসনের কারণে সেদিনও দুর্ভিক্ষ হয়েছে, মানুষকে খাবার দিতে পারোনি। এখন কি করছে? গত ১৪ বছর ধরে স্টিমরোলার চালাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের ওপরে। সো-কল্ড ডেমোক্রেসি ফর দি ইলেকশনের কথা বলে। এখন আবার নতুন ধূয়া তুলেছে যে, উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এবং গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য তাদের নাকি থাকা উচিত।’

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে নিয়ে নানা আলোচনা 

বাংলাদেশের একটি আইনশৃখলা বাহিনী ও তার সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আলোড়ন হয় বিশ্বে। এরপর এলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি। বিশেষ করে মার্কিনিরা আগামী দিনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া একটা জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য তাদের দেশে অগ্রিম ভিসানীতি প্রদান এটা গোটা বিশ্বে নতুন কিছু। এটা নিয়েও তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। এর সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নও নানাভাবে বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংঘটনের উদ্বেগ আসন্ন ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এগুলো নিঃসন্দেহে বর্হিবিশ্বে দারুণ ইমেজ সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। 

অনাগত দিনে কী ঘটতে যাচ্ছে 

অজানা এক শঙ্কা! কী হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। যেমনটা স্থানীয় রাজনীতিতে প্রচ- বিরোধ। তেমনি বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লেও ভূরাজনীতি ব্যাপক। পরাশক্তির কেউ বিএনপিসহ বিএনপির পক্ষে। যারা বিগত দুই জাতীয় নির্বাচনের ন্যায় এক তরফা, অনেকটাই ভোটারবিহীন কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেবে না বলে দৃঢ়তা দেখাচ্ছে। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকা কোনো কোনো দেশ, এমনকি যারা আন্তর্জাতিকভাবেও বিভক্ত তারাও বাংলাদেশ ইস্যুতে দুই মেরুতে। এমন অবস্থাতে, বাংলাদেশের মানুষ ভুগছে এক অজানা আতঙ্কে। কারণ বাংলাদেশের নীতি কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, বন্ধুত্ব সবার সঙ্গে। সে নীতিতে পরাশক্তিগুলো দ্বিধাবিভক্ত হলেও সে বিভক্তি কেউ চান না। কারণ এতে হয়তো একপক্ষ ক্ষমতায় বসবে। কিন্তু অন্যপক্ষ পরাস্ত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর প্রচ- চাপ পড়ার সম্ভাবনা। বিশেষ করে পশ্চিমাগোষ্ঠী। যে মেরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান প্রমুখ। অন্যপক্ষে চীন, রাশিয়া এবং কেউ বাতাসে উড়াচ্ছে সেখানে রয়েছে ভারতের নামও। বাংলাদেশের জনগণের কাছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব ভীষণ গুরুত্ব। কেননা সবার সঙ্গেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক সম্পর্ক। 

এমনিতেই করোনা পরবর্তী অর্থনীতি সংকটময় হওয়ার পর ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে বাংলাদেশের মতো দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামোর দেশসমূহ মূলত শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশসমূহের সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত। সেখানে কেউ নারাজ হওয়া বা সম্পর্ক ছিন্ন করার অর্থ বাংলাদেশের রিজার্ভ, পোশাকশিল্পসহ নানা খাত মহাসংকটে পড়ে যাবে। 

সমাধান আছে কিছু? 

বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতি একসঙ্গে আসেনি। এসেছে তিলে তিলে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের মধ্যে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নেই। ক্ষমতায় যারা থাকেন তাদের কিছুটা নমনীয় হতে হয় এটাই যুগ যুগ ধরে দেখে আসছে মানুষ। কারণ তারা তো এমনিতেই ক্ষমতাধর। কিন্তু কই ওই সৌজন্যবোধ দেখা যায়নি। এমতাবস্থায় কী সমাধান সেটা কেউ বলতে পারছে না। অনেকেই বলবেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। কিন্তু এখানে শেষটা দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। যেখানে শুধুই রাজনৈতিক অনৈক্য। সমাধান একটাই অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ঐকমত্য। সেটার ব্যতিক্রম মানেই উপরোক্ত সংকট। অথচ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছা একেবারেই অসম্ভব। দুই পক্ষ দুই মেরুতে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ নীরব দর্শক। শঙ্কা বড় ধরনের এক আন্দোলন ও তা প্রতিহত হওয়া নিয়ে দেশজুড়ে অশান্তি। অথচ সাধারণ মানুষের পরিচালনার দায়িত্বলাভের জন্যই এতোকিছু! কিন্তু সেই সাধারণ মানুষের এখন কিছুই বলার নেই। শুধু চেয়ে দেখা এবং দেশের অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ ভেবে বাংলাদেশের আকাশে তারা দেখছেন, এক মহাসংকটের ঘনঘটা!

শেয়ার করুন