২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:১১:৩২ পূর্বাহ্ন


দেশকে মাহমুদুর রহমান মান্না
জনগণ বিএনপি থেকে লিফলেট কর্মসূচি আশা করে না
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০২-২০২৪
জনগণ বিএনপি থেকে লিফলেট কর্মসূচি আশা করে না মাহমুদুর রহমান মান্না


নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপি’র চুপচাপ নিরবতা প্রসঙ্গে বলেছেন, আসলে আপনাকে ফাইটটা লাগাতারভাবেই করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি কতখানি গ্যাপ দিবেন-দেবেন কি-না? কবে চূড়ান্ত আঘাত করবেন কি-না? আপনারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভারসাম্য সামঞ্জস্য কতখানি আছে? এগুলো সব দেখেই করবেন। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ 

দেশ: রাজনৈতিক অঙ্গনে চারিদিকে সুনশান নিরবতা। আন্দোলনে নিরবতা। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত বিশেষ করে বিএনপি একদম নিরব নিথর। আসলে কি হচ্ছে? কেনো বিএনপি এমন নিরবতায় আছে..

মাহমুদুর রহমান মান্না: একটু মৃদু হেসে কিছুক্ষণ নিরবতা..। যা বললেন তাই-তো..। 

দেশ: আবারও চুপ থাকলেন.. কিছুক্ষণ..। তারপর প্রশ্ন। আসলে কি মনে করে এর কারণ?

মাহমুদুর রহমান মান্না: একদম যে নেই সে-টা কিন্তু না। যেমন ধরুন গতবছর রাজধানীতে বিএনপি’র ২৮ আক্টোবরে সমাবেশকে ঘিরে যে ঘটনাটি ঘটে গেলো। এর পরে ২৯ তারিখ তো বিএনপি হরতাল দিয়ে দিলো। এই কর্মসূচিটি দেয়া হলো একপক্ষীয়ভাবে। এবং মিটিং থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে। আনুষ্ঠানিক না। অনেকটা পলাতক অবস্থার মধ্যেই। আর আমরা যেহেতু একসাথে আন্দোলন করছি তা-ই এটা আমরা মেনে নিলাম। ২৯ অক্টোবরের হরতালটা ভালোই হলো। এই ২৯ তারিখ থেকে আমরা মাঠেই আছি। আমরা মানে আমার দল নাগরিক ঐক্য...আমরা যে জোট করি সে-ই গণতন্ত্র মঞ্চ। কিন্তু বিএনপি ২৮ তারিখের পর থেকে মাঠে ছিল না। তারপর আমরা যখন মাঠে আছি হরতাল করছি, পুলিশের সাথে মাঠে ধাক্কাধাক্কি করছি তখন একটা চাপতো তৈরি করা যেতো? আমরা বসে আছি...তারা আর মাঠে আসলো না। তাদের বেশির ভাগ নেতারা নামে মামলা ছিল। এখন তারা মনে করছে তাদের নেতাদের ছাড়িয়ে নিতে হবে। তারা এখন কর্মসূচি থেকে বিরত। পত্র পত্রিকায় বেরিয়েছে তারা সামনে তিন চার মাস কোনো কর্মসূচি দেবে না। এর মধ্যে তারা দেখবে তাদের নেতারা ছাড়া পায় কি-না? তো শরিকরা বসেই আছি। কিন্তু আমরা আমাদের প্রোগ্রাম চালিয়েই যাবো এবং যাচ্ছি। 

দেশ: তো আপনারা আপনাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না: হ্যাঁ। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সোমবারও সকালে প্রোগাম ছিল, বিকালে গণতন্ত্র মঞ্চের মিটিং ছিলো। সামনেও আছে। 

দেশ: বিএনপি একটি কর্মসূচি দিয়েছে। বিএনপি তাদের চলমান এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে সপ্তাহব্যাপী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৩-১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ দেশের সব মহানগরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ। সব জেলা শহরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ। ১৮-১৯ ফেব্রুয়ারি সব উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ ইত্যাদি..

মাহমুদুর রহমান মান্না: একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন...

দেশ: আচ্ছা যাই হোক বিএনপি’র সাথে এরই মধ্যে কোনো আলোচনা হচ্ছে না। 

মাহমুদুর রহমান মান্না: না এর মধ্যে আর হয়নি। 

দেশ: আসলে এসব কিছু দেখে আপনি কি মনে করেন? আপনি তো একজন শুধু রাজনীতিবিদই না। একজন কলামিস্ট..তো আপনার চোখে এগুলো কেমন লাগে? আপনার মধ্যেওতো একটা কিউরিসিটি আছে? 

মাহমুদুর রহমান মান্না: কিউরিসিটি মানে দিনের পর দিন এটার মধ্যে তো আছি। তারা আন্দোলন সম্পর্কে আসলে দলটিতে এখনো পোড় খাওয়া মানুষ কমই আছে। বুঝতে পারছে না যে কোন সময় কি হওয়া উচিত। এই বসে থাকাটা বা চুপচাপ থাকাটা..। এটাতো আন্দোলনে ক্ষতি করছে। 

দেশ: বিএনপি’র সাথে দীর্ঘদিন আন্দোলনে ছিলেন..। কিন্তু আপনারাওতো পোড় খাওয়া মানুষ..সেক্ষেত্রে বিএনপি কি আপনাদের শরিকদের কোনো কথা বা পরামর্শ নেয়নি? এই শরিকদের মধ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আছে..কিন্তু বিএনপি কি নিজেকে বেশি বড় ভেবে আপনাদের মতামততে গুরুত্ব দেয়নি বা না দেয়ার পথে হেঁটেছে? 

মাহমুদুর রহমান মান্না: না না ওরা ওদের মতোই করে। 

দেশ: এই একলা চলার অহমিকায় কি এমন সমস্যা হয়েছে? 

মাহমুদুর রহমান মান্না: একটু ভেবে..না না ওরা তো ওদের মতোই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে..সব সময় তো ঠিক হচ্ছে না। এই যে এখন লিফলেট কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে, এটা দেশের জনগণ বিএনপি’র থেকে আশা করে না। 

দেশ: আচ্ছা এই পর্যন্ত যে সব কথা বললেন তাতে তো মনে হচ্ছে আপনাদের মধ্যে বিশেষ করে বিএনপি’র সমমনা বলে বলা হচ্ছে তাদের মধ্যে একটা মতভেদ বা অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে? এটাই কি প্রশ্ন উঠে আসে না?

মাহমুদুর রহমান মান্না : না না দ্বন্দ্বের ব্যাপার না। বিষয়টা হচ্ছে আপনি এর বেশি এগুতো সাহস পাচ্ছেন না, যেভাবেই বলি। আর আমার মনে এই ব্যাপারটা ঠিক মনে হচ্ছে না। তারা তাদেরটা করছে, আমরা আমাদেরটা করছি। তারাতো আমাকে জিজ্ঞাসা করে করছে না। তারা বড়ো দল, শক্তি বেশি..তারা যদি এখন আমাকে বলে যতো অত্যাচার আমরা সহ্য করছি অতটা আপনাদের ওপর দিয়ে যায়নি। এটা আপনাদের বেলায় হলে বুঝতে পারতেন..। তো এসব বলে ফেললে মুশকিল না? এমন করে তো অবশ্যই বলেনি, তবুও তাদের মধ্যে তো এই চাপ আছে। 

দেশ: আসলে এমন মুহূর্তে আপনার সঠিক নির্দেশনাটি কি? বা যদি বলি পরামর্শটা কি? 

মাহমুদুর রহমান মান্না: পরামর্শ তো আছেই। কিন্তু সেটাতো তারা বলেনি। আসলে আপনাকে ফাইটটা লাগাতারভাবেই করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি কতখানি গ্যাপ দিবেন..দেবেন কি-না? কবে চূড়ান্ত আঘাত করবেন কি-না? আপনারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভারসাম্য সামঞ্জস্য কতখানি আছে? এগুলো সব দেখেই করবেন।

শেয়ার করুন