২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৩:৪৮:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৮-২০২২
কথার কথকতা


একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, তাহলো ‘সবকিছু ঠিকঠাক মতো চললে এই হবে ওই হবে’ কিন্তু সবকিছু আদৌ কি ঠিকঠাক মতো হয়? আবার আরেকটা কথা শোনা যায় এই রকম যে, ‘মানব সভ্যতার দিকে তাকালে আমরা এই দেখি ওই দেখি’ কিন্তু মানব জাতির ইতিহাসের দিকে তাকালে মানব সভ্যতার চেয়ে মানব অসভ্যতার ইতিহাসই বেশি দেখতে পাওয়া যায়! এরকম কেন? মানুষ না কি সৃষ্টির সেরা প্রাণি! তাহলে রহস্যটা কোথায়? এ রহস্য উন্মোচন কি সহজ কাজ? মোটেই না। কোনো সচেতন মানুষকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তিনি হয়তো বলবেন, দেখো রাশি খারাপ হলে দুইয়ে দুইয়ে ফলাফল চার না হয়ে শূন্য হয়ে যায়। দুটোর মাঝখানে যোগচিহ্ন দিতে গেলে এক টান দেয়ার পর সংশ্লিষ্ট লোক যদি আরেক টান দেয়ার সুযোগ না পান, তাহলে কাম শেষ! ইংরেজি সংখ্যার ক্ষেত্রেও এরকম মুশকিল দেখা দিতে পারে।


ভাগ্যে শনি ভর করলে ‘নাইনটি নাইন’ হয়ে যেতে পারে ‘সিক্সটি সিক্স’! কপালের না সূচকতার জন্য বাতাসে কাগজটা ঘুরে গেলেই হলো। নাইনটি নাইন হয়ে গেলো সিক্সটি সিক্স! উৎসুক মানুষ হয়তো প্রশ্ন করবেন, এরকম কেন হয়? আমাদের উত্তর হলো, ‘উত্তরটা তো এতো সহজ নয়।’ মানুষের জীবনে এরকম অদ্ভুত ভোগান্তির জন্য সংশ্লিষ্ট মানুষটাই কি দায়ী। কেউ বলবেন, একটু সাবধান হলে জীবনে এ সমস্যাগুলো হয় না আর আমরা দেখি যে, যা হবেই তা রোখানোই যায় না! তাহলে মূল সংকট কোথায়? উত্তরটা কে দেবে? প্রকৃতির নিয়মগুলো নাকি নির্ধারিত, তাহলে অসামঞ্জস্যটা কোথায় নিহিত? কোনো প্রবীণ মানুষ হয়তো বলে উঠবেন, ‘মূল সমস্যাটা বাবা কপালে! কপালে দুঃখ থাকলে সুখ হেঁটে আসার সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়।’ প্রশ্ন অবশ্যই আসতে পারে যে, সুখ হেঁটে আসার সময় কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো কিনা? এ প্রশ্নের উত্তরইবা আমরা কেমন করে দেবো? সবই তো অদৃশ্য!

তাহলে মানব ইতিহাস কি সমস্যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে? এরকম হলে মানুষকে সৃষ্টির সেরা বলা হবে কীসের ওপর ভিত্তি করে! বিশ্বের প্রথম মানব যিনি ওনার এক ছেলে আরেক ছেলেকে হত্যা করে ফেললো! কিংকর্তব্যবিমূঢ় হত্যাকারী ভাইটি আপন ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে কি করবে দিশা পাচ্ছিলো না। অবশেষে তা শিখতে হলো পাখির কাছ থেকে।

বলা হয়, রোম যখন পুড়ছিলো নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলো। কি করতে পারতেন তিনি? তিনি কি জ্বলমান শহরে আরো কিছু আগুন বা জ্বালানি ছিটিয়ে দিতে পারতেন! বেচারা প্রেমিক অবশেষে শুধু বাঁশিই বাজাচ্ছিলেন। ভাগ্যিস তাঁর বাঁশিটি রোমের আগুনে পুড়ে যায়নি।

ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইতিহাস আমাদের কি দেখালো? অশুভ শক্তির হাতে শুভ শক্তির এই করুণ ও মর্মান্তিক পরিণতি ব্যাখ্যা করার কি কোনো সুযোগ আছে! যারা রইলো তাদের হাতে মানব জাতির কল্যাণ প্রত্যাশা করা বোকামির বিষয় নয় কি?

দুটো বিশ্বযুদ্ধ কি মানব সভ্যতার ইতিহাস, নাকি মানব অসভ্যতার ইতিহাস? রাশিয়া এবং ইউক্রেনে কোন মানব ইতিহাস রচিত হচ্ছে? বিশ্বব্যাপী চলমান স্নায়ুযুদ্ধে কি মানব সভ্যতার ইতিহাস রচিত হচ্ছে? হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক, আপনারা হয়তো বলবেন, সমাধানটা তুমিই দিয়ে দাও। আরে ভাই, সমাধান খুঁজে পেলে কি আর আপনাদের শরণাপন্ন হই! জানি না, কোথায় গেলে সৃষ্টির সেরা মানুষের সন্ধান পাওয়া যাবে।

আমার এক পরিচিত মানুষ বললেন, এতো সব জটিল বিষয় নিয়ে লেখার চেষ্টা না করে তোমার জীবন কাহিনি ছেলেবেলা থেকে বর্ণনা করো। আমি বললাম, সেসব যদি লিখতে যাই, তাহলে দেখা যাবে এমন সব বিষয় এসে যাচ্ছে যেগুলো আমাদের সমাজ বহন করতে পারবে না। আর সব বিষয়ে কি লেখা যায়? কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও সব বিষয়ে লেখা যায় না। আমার জীবনের অভিজ্ঞতা লিখতে গেলে হাতেগোনা কয়েকটা হ্যাঁ সূচক বিষয় ছাড়া এতে বেশিসংখ্যক নেতিবাচক ঘটনা উঠে আসবে যে, আপনারাই বিস্মিত হয়ে যাবেন। ‘লা মিজারেবল’ পুস্তক তো আর কেউ শখ করে লেখে না!

বিজ্ঞজনেরা বলেন, মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ভালো প্রাণি কিন্তু পরিবেশ ও পরিস্থিতি তাকে খারাপ করে তোলে। এই খারাপ হয়ে যাওয়া থেকে মানুষকে কীভাবে রক্ষা করা যায়? আমরা বিস্মিত হয়ে দেখি, সিনেমা হলে কল্যাণের ঝান্ডাধারী নায়ক যখন শেষ দৃশ্যে বদ মানুষগুলোকে মেরামত করতে থাকে, তখন হলভর্তি সব দর্শক নায়ককে উচ্চৈস্বরে বাহবা দিতে থাকে।

তাহলে প্রমাণিত হয় যে, মানুষ খারাপ লোক পছন্দ করে না, অর্থাৎ মানুষ ভালো প্রাণি। তাহলে এরা যখন বেরিয়ে জীবনের কর্মকাÐে প্রবেশ করে, তখন এদের বেশিরভাগ মানুষই ভালো কাজ করতে পারে না কেন? জানি, এটা খুবই জটিল প্রশ্ন। তাই কেউই এই বিষয়ের কোনো উত্তর দিতে আগ্রহী হবে না। হয়তো কেউ বলবেন, স্বার্থের প্রতিযোগিতায় নামলে অনেকেই ভালো বা সৎ থাকতে পারে না, সৎ থাকতে গেলে স্বার্থ হাসিল হয় না। আমরা বলবো, যে কোনোভাবে স্বার্থ হাসিল করা মানব সমাজের জন্য কল্যাণকর নয়

এ বিষয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। ন্যূনতম একটা নীতি যদি মানুষ অনুসরণ না করে, তাহলে মানব সমাজ কখনোই মানব সভ্যতার ইতিহাস রচনা করতে পারবে না, যা রচিত হবে তাহলো অসভ্যতার ইতিহাস। সভ্যতার ইতিহাস হচ্ছে সভ্য মানুষদের ইতিহাস। মানুষের যে কোনো কাজ যদি মানবতাবিরোধী হয়, তাহলে অবশ্যই তা অসভ্যতা। এটা চলতে থাকলে পরিণতি ভালো হবার কোনো কারণ নেই। আমাদের শুধু মনে রাখতে হবে যে, আমরা মানুষ, প্রাণিকুলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। যেচে বাণী দেয়ার জন্য বিনয়ের সাথে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। মানুষ ও মানবতার ব্যাপারে আপনার কাছে আরো চমৎকার বাণী থাকলে আমাকে জানাবেন, আমি যথাযোগ্য সম্মানের সাথে তা পাঠ করবো। আসুন, আমরা সিনেমা হলের দর্শকদের মতো বাস্তব জীবনেও ভালো কাজকে সমর্থন করি। অসভ্যতার নয়, মানুষের ইতিহাস হোক সভ্যতার ইতিহাস।


শেয়ার করুন