২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১১:০৪:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন
তিলোত্তমা ঢাকা কেন বসবাসের অযোগ্য?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৪-২০২২
তিলোত্তমা ঢাকা কেন বসবাসের অযোগ্য? সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট এভাবে তলিয়ে যায় বৃষ্টি ও ড্রেনের পানিতে, /ফাইল ছবি


চির চেনা ভালোলাগা, ভালোবাসার ঢাকা শহর ক্রমাগত বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। কষ্ট লাগে, দুঃখ পাই যখন এ খবরটা কানে আসে। নানা কারণে প্রবাসে জীবন যাপনে সিদ্ধান্ত নেয়া সত্ত্বেও নানা ভাবে ঢাকা তথা বাংলাদেশের উন্নয়নে নানা ভাবে অবদান রাখতে চেষ্টা করি। জানি অন্যান্য মহানগরী থেকে অনেক ক্ষুদ্র আয়তনের ঢাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষ থাকে। গোটা শহরকে কংক্রিটের বস্তি বানানো হয়েছে প্রাকৃতিক বায়ু চলাচল বিঘ্নিত করে। ঢাকার চারপাশে বহমান চার চারটি নদী ( বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা, বালু,তুরাগ) এবং শহরের বুক জুড়ে বিদ্যমান এক সময়ের খাল গুলো জবর দখল করে, দূষণ করে প্রায় মেরে ফেলা হয়েছে। সবুজ বৃক্ষরাজি ক্রোম ক্ষয়িষ্ণু।

দুই কোটি মানুষের ব্যবহারের জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ,পানির অবকাঠামো অপ্রতুল,যানজট,জলজটে প্রতিনিয়ত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে জীবন যাত্রা স্থবির হয়ে পরে। বাতাস,পানি সুস্থ জীবন ধরণের জন্য দ্রুত অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। নাই পর্যাপ্ত সবুজ মাঠ, বিনোদন সুবিধা ক্রমান্বয়ে সীমিত হয়ে সংকুচিত হয়ে পড়ছে। ভূগর্ভস্থ গ্যাস লাইন লিকেজ হয়ে নিয়মিত মারাত্মক জীবন হানির দুর্ঘটনা হচ্ছে। ক্রমাগত ব্যাবহারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে ঢাকায় ভূমিকম্পে মহাপ্রলয় ঘটার আশংকা করা হচ্ছে। কিভাবে সমাধান হবে এতো কিছুর? 

অথচ ঢাকায় পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত আমলা, পেশাদার আছেন, তথাকথিত বাঁচাল অনেক রাজনীতিবিদ আছেন। প্রায় ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জ্ঞানগর্ভ টক শো অবাক হয়ে শুনি। এতো উর্বর মস্তিষ্কের মানুষ থাকতে কেন অসহায় মহানগরী ঢুকে ঢুকে মরছে?  কেন একসময়ের তিলোত্তমা ঢাকা এখন বসবাসের যোগ্য হতে এতো চ্যালেঞ্জের মুখে? অনেকেই মনে করেন মেট্রো, এলিভেটেড এক্সপ্রেস, রেপিড বাস লেন সমাধান দেবে। আসলেও কি তাই? 

প্রাণের শহর ঢাকায় কেটেছে সোনালী কৈশোর,দুরন্ত যৌবন। দেখেছি সবুজ, সুন্দর, ঐতিহাসিক নগরীর বিবর্তন।  ১৯৬০ দশকের মাঝামাঝি থেকে অনিয়মিত থাকা হলেও ১৯৭২ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ঢাকা বড় শহর থেকে মহানগরীতে রূপান্তর দেখেছি।  ২০০৫ থেকে দেশান্তরী হবার পর ২০০৯ পর্যন্ত যাওয়া হয় নি। কিন্তু ২০০৯ -২০১৮ প্রতি বছর অন্তত দুইবার কখনো ৩-৪ বার গেছি নানা কাজে।  অপরিকল্পিত ভাবে পরিবর্তিত ঢাকা এখন শুনছি ক্রমাগত বসবাসের  অযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে। আমি দীর্ঘ দিন ১৬ বছর ২০০৫-২০২১  বসবাসের জন্য  বিশ্বের অন্যতম সেরা মেলবোর্ন শহরে কাটিয়েছি। আমি অতি সহজেই দুটি শহরের মাঝে তুলনা করতে পারি। 

একটি শহর বসবাসের জন্য উত্তম হতে হলে অবশ্যই প্রাকৃতিক আলো, বাতাস, জল প্রবাহ, উন্মুক্ত রাখতে হয়, শিক্ষা,সাস্থ্য সুবিধাদি সবার জন্য সহজ লব্ধ রাখতে হয়, যাতায়াত ব্যবস্থা আধুনিক হতে হয়, যানজট, জল জট নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, গ্যাস, বিদ্যুৎ,পানি সরবরাহও ব্যবস্থা সুনিশ্চিত রাখতে হয়, সেবামূলক প্রস্টিশানগুলোকে জনবান্ধব হতে হয়, বিনোদনের স্বতঃস্ফূর্ত ব্যবস্থা থাকতে হয়। বর্তমান ঢাকায় এগুলোর কি অবস্থা সবাই জানে। 


এমন জ্যাম এটা এখনকার নিত্যঘটনা/ফাইল ছবি 


সমাধান কোথায়? 

প্রথম প্রয়োজন ঢাকাকে বর্তমান এবং বর্ধিষ্ণু জনগোষ্ঠীর চাপ মুক্ত করার জন্য আবাসিক এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা শিল্প কারখানা, স্কুল, কলেজ, ক্লিনিকগুলো গুলো সরিয়ে নেয়া। কেন ঢাকায় আবাসিক এলাকা গার্মেন্টস, শিশু, কিশোরদের স্কুল, কলেজ, ক্লিনিক থাকবে? এগুলো একদিকে জীবন গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ অবকাঠামো গুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করছে, ঠিক তেমনি যান জটে অবরুদ্ধ করে রাখছে শহরতলি।

প্রতিদিন অনেক শ্রম ঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। সরকার কি পারবে পিলখানা থেকে বিজেবি হেড কোয়ার্টার ঢাকার বাইরে কোথাও স্থানান্তর করে ধানমন্ডি, লালমাটিয়া,  মোহাম্মদপুর, আজিমপুরের সকল স্কুল, কলেজ, ক্লিনিকগুলো সেখানে স্থানান্তর করতে? সরকার কি পারবেন পুরাতন এয়ারপোর্ট এলাকাটির বর্তমান ব্যবহার পরিবর্তন করে গুলশান, বনানীর শিক্ষা   প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থান করে দিতে ? 

আমি মনে করি ডিজিটাল যুগে ঢাকার কেন্দ্র স্থলে সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট দরকার নেই। মন্ত্রণালয় গুলো ঢাকার সংলগ্ন গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, কেরানীগঞ্জ, এমনকি টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ফরিদপুর, কুমিল্লা স্থানান্তর করা যায়। ঢাকা, বিশ্ববিদ্দালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল, জগন্নাথ বিশ্ব বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় আবাসিক ক্যাম্পাস ঢাকার বাইরে গড়ে উঠতে পারে।  ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের আবাসন ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রেখে সামরিক স্থাপনাগুলো ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করে যাতায়াতের জন্য       উন্মুক্ত করা যায়। 

ঢাকা থেকে অন্ত ২০-৩০% জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তর করতে হলে ঢাকার বাইরে গার্মেন্টস পল্লী স্থাপন, সেক্রেটারিয়েট সহ,ব্যাঙ্ক,বীমা,সরকারি অফিস গুলো ক্রমান্বয়ে ঢাকার বাইরে সরিয়ে নিলে। মূল শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোর দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ঢাকার বাইরে নেয়া সম্ভব হলে, ঢাকার সাথে পার্শবর্তী শহরগুলোর দ্রুত রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে পার্শবর্তী শহরে চলে যাবে। পূর্বাচল, বা পদ্মা। সেতুর ওপর পারে যেন পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন স্যাটেলাইটে নগরী গড়ে উঠে সেই দিকে যত্নশীল হতে হবে। আশা করি উঅচ চূড়ান্ত করার সময় বিষয় গুলো দেখা হবে। 

ঢাকার চারপাশের নদী খালগুলো দখল মুক্ত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সরকার নিয়েছে।  কিন্তু কাজগুলো নানা কারণে গতি পাচ্ছে না। নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী বর্তমান সরকার যদি এই কাজ করতে না পারে কেউ পারবে না। নদীগুলো দখল মুক্ত করে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে জলযানে যোগাযোগ ব্যবস্থা করা হলে যান জট মুক্ত হতে পারবে, সারা বছর জল সঞ্চয় থাকায় সারফেস ওয়াটার ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হবে, হটাৎ অতি বর্ষণে জল জোট সৃষ্টি হবে না। ঢাকার খালগুলো মুক্ত হলে ভেনিস বা আমস্টার্ডামের মতো শহর জুড়ে জলযানে যাতায়াত সুবিধা সৃষ্টি হবে। দুনিয়ার সব বারো শহর একটি নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। ঢাকার চারপাশে চার চারটি যদি কেন ঢাকার পুনর্জাগরণে ভূমিকা রাখতে পারবে না। 

আমি জানিনা আমাদের জীবন থাকতে ঢাকার পরিবর্তন দেখবো কিনা। হয়তো মেট্রো রেল, এলেভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে। গাজীপুর-বিমানবন্দর বাস রাপিড ট্রানজিট ঢাকার যানজট উন্নয়নে কিছুটা ভূমিকা রাখবে। কিন্তু ঢাকা শহরে পাতাল রেলের মতো অতি খরুচে অতি বিলাসী কর্মকান্ড না করে উপরের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করলে তিলোত্তমমা ঢাকা অন্তত বসবাসের অজ্ঞ হবার কলঙ্ক থেকে রক্ষা পাবে। হয়তো চাল্ল্যেগুলোকেও সহজ নয়। কিন্তু জনসম্পৃক্ততা থাকলে অর্জন অসম্ভব নয়। 




শেয়ার করুন