২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৯:১৬:৩১ অপরাহ্ন


বিপর্যস্ত ভারত ১০ উইকেটে হেরে বিদায়
ইংলিশদের কাছে টীম ইন্ডিয়ার আত্মসমর্পণ
সালেক সুফী, অস্ট্রেলিয়া থেকে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১১-২০২২
ইংলিশদের কাছে টীম ইন্ডিয়ার আত্মসমর্পণ ১০ উইকেটে পরাস্ত হওয়ার পর ভারতীয় ক্রিকেট দল/ছবি সংগৃহীত


যেমনটি লিখেছিলাম আজ সকালে- মানুষ ভাবে এক, ঈশ্বর নির্ধারণ করেন অন্য। আজ অ্যাডিলেড ওভালে টি২০ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অনেকটাই ভারতকে তুলোধুনা করে বিপর্যস্ত করে ফাইনালে উন্নীত হয় ইংল্যান্ড। এ ম্যাচে ১০ উইকেটে জিতে ইংলিশরা। ক্রিকেটের হেভিওয়েট ভারতের টি২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় দশ উইকেটে হার। এর আগে গত বিশ্বকাপে একবার দশ উইকেটে হেরেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। 

গালারীভর্তি ভারতীয় দর্শকদের গগনবিদারী উল্লাসের মধ্যে টস জয় করে ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করতে দেয় ভারতকে। অপেক্ষাকৃত ধীর গতির গ্রিপিং টার্নিং উইকেটে ইংলিশ বোলিং লাইনআপ কিপ্টে বোলিং এ ১০ ওভার এমনকি ১৫ ওভার পর্যন্ত বেঁধে রেখেছিলো ড্যাসিং সব ভারতীয়দের ব্যাটসম্যানদের, বজ্র আঠুনিতে। বিরাটের ৫০, আর শেষদিকে হার্দিক পান্ডিয়ার মারকুটে ৬৩ রানের সুবাদে শেষাব্দি ১৬৮/৬ সংগ্রহ করে ভারত তুলে তৃপ্তির ঢেকুর।


কিন্তু টি২০ ক্রিকেটের দুই মারকুটে ওপেনার আলেক্স হেলস (৮৬*) আর যশ বাটলার ( ৮০*)  যে কোনো উইকেটে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ পার্টনারশীপ গড়ে ১০ উইকেটে হেসে খেলে জয় করলো ম্যাচ। উইকেটে মনে হচ্ছিল ভারতীয় বোলাররা বলই রাখতে পারছিল না। মুহুর্তেই ফিল্ডিংয়ের ফাক গলিয়ে সেটা আছড়ে পড়ছিল বাউন্ডারীতে। এমন ইংলিশ ব্যাটিং সহসাই দেখা যায়নি। দুই ওপেনার যেন ছবির মত একটা ব্যাটিং উপহার দিয়ে মুগ্ধ করছিল সবাইকে। তাদের ব্যাট যেন শিল্পীর মনে আকা ছবির মতই খেলে তৃপ্তি দেয়।  


জয়ের পর দুই ইংলিশ ব্যাটসম্যানের এমন অভিব্যক্তি/ছবি সংগৃহীত 


আইসিসির হয়তো স্বপ্ন ছিল ভারত এবারে অন্তত ফাইনাল খেলবে। পরিচ্ছন্ন খেলার যেয়েও ব্যাবসাটাই মনে হচ্ছিল আইসিসির বেশী জরুরী। তাইতো ওই চাওয়া। পরিস্থিতি আর প্রেক্ষাপট আরো একটি ভারত পাকিস্তান ব্লকবাস্টার দৈরথের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। বাটলার ম্যাচের আগেই ঘোষণা দিয়েছিলো- অনেকের স্বপ্ন ভারত পাকিস্তান ফাইনালের পথে কাটা বিছিয়ে দিবে ইংল্যান্ড। বাস্তবে হলো তাই। এখন এমসিজিতে ১৯৯২ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালের পুনরাবৃত্তি হবে। ইংল্যান্ড খেলবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।

নিরপেক্ষ ক্রিকেট প্রেমিকরা টুর্নামেন্ট জুড়ে ভারতের পক্ষে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে রাগান্বিত ছিল। অনেকের ধারণা ছিল ঈশ্বরের বিচারে বঞ্চিত হবে ভারত। হলো তাই। আজ অ্যাডিলেড ওভালের ৮০% ভারতীয় সমর্থকদের কাঁদিয়ে লজ্জাজনক হার উপহার দিলো ভারতকে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ ফাইনাল এখন ভারতীয়দের শুধুমাত্র দর্শক হয়েই দেখতে হবে। 

দিনের প্রথম বল থেকে ইংল্যান্ড দলের শরীরী ভাষা অনেক সুদপ্রসারী কিছু ছিল। টস জয় করে অনেক হিসাব নিকাশ করেই ভারতীয়দের বাটিঙে আমন্ত্রণ জানালো বাটলার। ম্যাচ ফিট না থাকায় মালান আর উড খেলেনি ম্যাচ। বলতেই হবে ইংল্যান্ড দলনায়ক অত্যন্ত সুচারু ভাবে বোলিং সম্পদ ব্যাবহার করেছে। শুরুতেই ফর্মে থাকা রাহুলকে গতি আর সুইঙের মিশালে ফিরিয়ে দেয় ওকস। বিরাট আর কোহলি দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪৭ রান যোগ করলেও খুব একটা স্বস্তিতে খেলেনি। বিশেষত ইংলিশ স্পিনার আদেল রাশিদ ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ২০ রান দেয়।  এছাড়াও ইংল্যান্ডের অণ্য বোলাররাও চমৎকার নিশানায় বল রেখে  ১৫ ওভার পর্যন্ত অনেকটাই আটকে দেয় ভারতের রানের চাকা। সূর্য কুমার যাদব আজ আদৌ সুবিধা করতে পারে নি বিরাট বিরাটের মতো খেলে আউট হয়ে যায়, আরো একটি ৫০ করে। তবে স্লো ছিল তার ইনিংস। যা কিছু খেলেছে হার্দিক পাণ্ডিয়া। ওর মারকুটে ৬৩ রানের সুবাদে ১৬৮/৬ উইকেটে করতে পেরেছিলো ভারত।

আজ বিশ্ব ক্রিকেট দেখলো কিভাবে পেশাদার ইংলিশ ওপেনার যুগল উঁচু মার্কের ব্যাকরণ সম্মত ক্রিকেট খেলে ভারতের দম্ভ চূর্নও করলো। হেলস (৪৭ বলে অপরাজিত ৮৬ ) আর বাটলারের (৪৯ বলের অপরাজিত ৮০ ) ১৭০ রেকর্ড পার্টনারশিপ ১০ উইকেটের জয় এনে দিলো ভারতকে। 

আজ অ্যাডিলেডে উপস্থিত ৮০% ভারতীয় স্বপ্নেও ভাবেনি চোখের সামনে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে এভাবে নাস্তানাবুদ হবে। 

অনেকেই মনে করেন এমন একটি নাকানি চুবানি , ক্রিকেট পরিভাষায় বাটারিং ভারতের প্রাপ্য ছিল। খেলার শেষ পর্যায়ে সুনীল গাভাস্কার , রবি শাস্ত্রীদের কণ্ঠ অনেকটাই মাঠজুড়ে ভারতীয় দর্শকদের মতোই ম্রিয়মান ছিল। জানিনা কোন বিবেচনায় এই টুর্নামেন্টে চাহালকে খেলানো হয় নি। ব্যাটিং যাই হোক, ভারতের বোলিং ছিল নিম্ন মানের। ওদের বোলিং রীতিমত ছেলে খেলা করে ছেড়েছে ইংল্যান্ডের ওই দুই ওপেনার। এবার অপেক্ষা এমসিজিতে- ইংল্যান্ড পাকিস্তানের মধ্যে তুখোড় এক ফাইনাল দেখার। ১৩ নভেম্বর সে ম্যাচ।  


শেয়ার করুন