৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ১১:৪৫:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


দখল-দূষণকারীরা জাতীয় শত্রু
নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২৩
দখল-দূষণকারীরা জাতীয় শত্রু


দেশে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণা করা জরুরি। যারা নদী দখল করে দেশের মাটি বায়ূ ও পরিবেশ দখল-দূষণ করে ধ্বংস করছে তারা এ দেশের জাতীয় শত্রু নড়াই নদীর রক্ষা করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিস্কার বক্তব্য না পেলে আমার আমাদের কঠোর অবস্থান জানান দেবো। নদী ও প্রাণ প্রকৃতি সরক্ষা সামাজিক সংগঠন নোঙর বাংলাদেশ এর আয়োজনে গত ১৪ অক্টোবর শনিবার রাজধানীর রামপুরা বনশ্রী সংলগ্ন নদীর তীরে ‘নড়াই নদী’র নাম ফলক উন্মোচন এবং নৌকা র‌্যালি-সমাবেশে এসব কথা বলেন পরিবেশবাদিরা। নড়াই নদীর নাম ফলক উন্মাচন শেষে ৩০টি নৌকা বিভিন্ন রঙের পাল তুলে রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরাদিয়া হাটে গিয়ে শেষ করে। নদীতে ভেসে  গান নদীর গান গাইতে গাইতে গণসচেতনতামূলক র‌্যালিতে  অসংখ্য স্থানীয় মানুষ অংশগ্রহণ করে।

শুরুতে নোঙর বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান সুমন শামস আগত আতিথিদের সাথে নিয়ে ঢাকা ওয়াসার ’রামপুরা খাল’ লেখা ফলকে লাল রঙের ক্রসচিহ্ন একে দেন। তিনি বলেন, নোঙর বাংলাদেশ’র দাবিতে মহামান্য আদালতের ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তুরাগ নদীসহ দেশেরে সকল নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণার পর দেশের  সকল  নদী এখন জীবন্ত সত্তা হিসাবে গণ্য হচ্ছে। এ সময় সরকারি নথিতে নড়াই নদীকে রামপুরা-বেগুনবাড়ি খাল উল্লেখ করা মানে হচ্ছে জ্যান্তনদী খুন করা। নড়াই নদীর এই প্রতীকী আয়োজনের মাধ্যমে আমরা মৃতপ্রায় নদীকে রক্ষার জন্য ৯ দফা দাবিতে নড়াই নদীর নাম ফলক স্থাপন এবং নৌকা র‌্যালির আয়োজন করেছি। এবার নড়াই থেকে শুরু হলো, এর পর বালু, তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা নদীসহ পর্যায় ক্রমে দেশের সকল নদী রক্ষায় নৌকা র‌্যালি অব্যাহত থাকবে।

নদী ও প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষায় নোঙরে ৯ দফা দাবি সমূহ: ২৩ মে, সরকারি ভাবে ‘জাতীয় নদী দিবস’ গেজেটভূক্ত করা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইস্তেহারে রাজধানীসহ দেশেরে সকল নদী, খাল, বিল, পুকুর, জলাশয় এবং প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষার অঙ্গীকার করা। সিএস নকশায় নড়াই নদীর ৯টি খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে করে সীমানা পিলার স্থাপন করা এবং নদীর সাথে খালের প্রবাহ নিশ্চিত করা। নড়াই নদীসহ ৯টি খালে যুক্ত করা ইস্টার্ণ হাউজিংয়ের বর্জ্য শোধন ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা। রামপুরা নড়াই নদী থেকে হাতিরঝিল এবং গুলশান লেকের সাথে সংযোগ করা। কাওরান বাজার থেকে নড়াই, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা পর্যন্ত নৌপরিবহণ ব্যবস্থা চালু করা। কাওনার বাজার থেকে কলাবাগান লেক, পিলখানা লেক থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর সাথে সংযুক্ত করা এবং ধানমন্ডি লেক থেকে রায়ার বাজার হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর সকল বাঁধা অপসারণ করে প্রবাহমান করা। রামপুরা ব্রিজ, গুলশান ১-২ লেকের লিংক সড়ক ভেঙ্গে নৌপরিবহন উপযোগী সেতু নির্মাণ করা এবং দেশেরে নদী খেকো, বালু খেকো, সকলভূমি দস্যুদের প্রতি কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নদী গবেষক তোফায়েল আহমেদ এ সময় বলেন, নদী মানুষ নদী সৃষ্টি করতে পারে না, খাল বানাতে পারে। যে কোন দেশের ভূগোল এবং ইতিহাস আছে। একটা দেশের ভূগোল এবং ইতিহাস দেহের ডান চোখ এবং বাম চোখের মতো। কাজেই নড়াই নদীর ভূগল এবং ইতিহাস কেউ পরিবর্তন করতে পরবে না। নড়াই নদী আমার অধিকার এ অধিকার আদায়ে আমরা নোঙর করেছি এই নদীতে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্স সেন্টার (আরডি আরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, বর্তমানে নদীর সংখ্যা নিয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন থেকে যে তালিকা প্রকাশ করেছে সেখানে অসংখ্য নদীর নাম নেই। অবিলম্বে ভুল সংশোধন করে বাদ পড়ে যাওয়া নদীর নাম অর্ন্তভুক্ত করার আহবান করেন। চেইঞ্জ ফর ইনিশিয়েটিভ চেয়ারম্যান এডভোকেট শফিকুর রহমান, নদীমাতৃক বাংলাদেশে ২৩ মে, জাতীয় নদী দিবস ঘোষণা করা জরুরি। যারা নদী দখল করে দেশের দেশের মাটি বায়ূ ও পরিবেশ দভল-দূষণ করে ধ্বংস করছে তারা এ দেশের জাতীয় শত্রু। নড়াই নদীর রক্ষা করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিস্কার বক্তব্য না পেলে আমার আমাদের কঠোর অবস্থান জানান দেবো।

নড়াই নদী ইউনিটের আহবায়ক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৭ নং ওর্য়াড কাউন্সিলর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নড়াই নদীর তীরেই আমার বেড়ে ওঠা, এ নদী আমার ছোট বেলার নদী। এ নদী রক্ষার জন্য আজকের নোঙর এর একজন প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব আমার কাজের আরো গতি বাড়িয়ে দিলো। আমার এলাকার সকল নদী এবং খাল রক্ষায় আমার সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে চাই।

নদী গবেষণা ইনিস্টিটিউট এর গবেষক ডা. আলাউদ্দীন আহমেদ বলেন, নদী থেকে খালে পরিচিতি পাওয়ার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখল ও দূষণের কবলে দিন দিন সংকুচিত হয়ে এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে ঢাকার মধ্যাঞ্চলের প্রধান নদীটি। অথচ প্রাচীনকাল থেকে আশির দশকের শুরু পর্যন্ত ঢাকার চারদিকে মধ্যাঞ্চলের প্রধান নৌপথ ছিল নড়াই নদী। কাজেই নড়াই নদী রক্ষার কোন বিকল্প নেই। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, নিরাপদ ডেভলপমেনন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়্যারম্যান ইবনুল সাইদ রানা, পরিবেশবিদ আব্দুল ওহাব, ফজলে সানি, সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটি, নোঙর বাংলাদেশ, নড়াই ইউনিটের সদস্য সচিব রিপন শামস, আহমেদুর রাহমান, আকা আজাদ, মীর মোকাদ্দেস আলী শান্ত, বাপ্পী খান, আমিনুল হকসহ আরো অনেকে।

শেয়ার করুন