২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:৩৮:০৩ অপরাহ্ন


‘মুজিববাদী গণতন্ত্র’ জনগন মানবে না- মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০১-২০২৩
‘মুজিববাদী গণতন্ত্র’ জনগন মানবে না- মির্জা ফখরুল


‘মুজিববাদী গণতন্ত্র’ জনগন মানবে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘কথায় কথায় বলে, আজকেও বলেছে। আমার কথা শুনে একটু আকর্ষন করেছে.. কথাটা যে, আমাদের গণতন্ত্র আমাদের মতো করে করব। গণতন্ত্র এখন তাদের হয়ে গেছে। কোন গণতন্ত্র? সেই মুজিববাদের গণতন্ত্র, বাকশালের গণতন্ত্র, একদলীয় শাসন ব্যবস্থার গণতন্ত্র। না, এদেশের মানুষ তা হতে দেবে না।’ 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ সত্যিকার অর্থে জনগনের গণতন্ত্র, একটা মুক্ত বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে, আমাদের সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি আমরা অবশ্যই এই সংগ্রামে জয়ী হবো এবং বাংলাদেশকে একটা কল্যাণমূলক সুখী সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারব, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।”


শহীদ আসাদের আত্মত্যাগ ও বর্তমান আন্দোলনের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, ‘‘ শহীদ আসাদের আত্মত্যাগ একে ছড়িয়ে দিতে হবে আমাদের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে যে, কিভাবে একজন মানুষ মানুষকে ভালোবাসলে, দেশকে ভালোবাসলে, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে উঠলে সে আত্ম ত্যাগ করতে এতটুকু কোনো দ্বিধাবোধ করে না। কোনো দূর্ঘটনার জন্য নয়, একেবারে পুরোপুরি সচেতনভাবে লড়াই করে সংগ্রাম করে মিছিলের মধ্যেই মানুষটি প্রাণ দিয়েছিলেন। আমি বলব, আমাদের আশার কথা যে, এবারোও আমাদের ১৫ জন কর্মী তারা প্রাণ দিয়েছেন রাস্তায়, তারা প্রাণ দিয়েছেন মিছিলে পুলিশের গুলিতে। সেজন্য আমি অনেক বেশি আশাবাদী, আমি অনেক বেশি আত্ম প্রত্যয়ী যে, আমরা এবার যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামে নেমেছি অবশ্যই আমরা এই দেশকে এই ফ্যাসিবাদীদের হাত থেকে, এই ভয়াবহ দানবদের হাত থেকে মুক্ত করে সত্যিকার অর্থেই একটা কল্যাণমূলক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করতে সক্ষম হবো।’’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে আন্দোলনে শুধুমাত্র আমরা নই, আমাদের সঙ্গে কিন্তু সমস্ত দলগুলো যারা দেশকে ভালোবাসে, যারা বর্তমানে বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই পরিবর্তন করে একটা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চান। আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনকে দমন করবার জন্য তারা(সরকার) যত রকমের নিপীড়নমূলক কাজ করছে, গুম করছে, হত্যা করছে, নির্যাতন করছে।এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক মুক্তি করার জন্য আমাদেরকে আরো বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এদেরকে পরাজিত করতে হবে।”


‘নিত্যপণ্যের দাম

বৃদ্ধি প্রসঙ্গে’


মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আমরা সবাই জানি কিভাবে প্রত্যেকটা দ্রব্যমূল্য অস্বাভা্বকি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে বলেন, রাশিয়া, ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য দাম বেড়েছে, অনেকে বলে কোভিডের জন্য দাম বেড়েছে। আর যে চুরিটা করেছো, যে ডাকাতিটা করেছো সেটার পার্থক্য হিসাব করো তাহলে বেরিয়ে যাবে। যেকথা মান্না (মাহমুদুর রহমান মান্না) বলেছেন, ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট ৩০ হাজার কোটি টাকায় শেষ হচ্ছে।ওই চুরিটা বন্ধ করলে তো ওখানে কাভার হয়ে যেতো। গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসে যে চুরিটা করেছো সেটা বন্ধ করলে তো এই দামটা কমিয়ে নিয়ে আসা যেতো।ওয়াসার চেয়ারম্যান তার কি হয়েছে এখন পর্যন্ত আমরা জানি না। পত্রিকায় বলছে যে, তার আমেরিকারতে কতগুলো বাড়ি আছে, সম্পদ কত বানিয়েছে, বেতন কত নেয় এই বিষয়গুলো তুলে এসেছে।”



নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ আমরা এমন একটা শাসকের সামনে আছি যার সামনে কোনো মূল্যবোধ নাই, এমন একটা শাসকের সামনে আছি যারা দানবের মতো, যারা পশু শক্তি পাশবিক শক্তি প্রয়োগ করে ক্ষমতায় থাকবার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। এই লড়াইয়ে যখন করছি তখন আমাদের ওইভাবে লড়াইটা করতে হবে যাতে ব্যাপক জনগনকে সামনে নিতে পারি, সেই লড়াইয়ের যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়, সেই লড়াইয়ের স্বপক্ষে রাজনৈতিক বয়ান তৈরি হয় এবং আমরা সত্যিকার অর্থে জনগনকে আশাবাদী করতে পারি যে, আমরা একটা পরিবর্তন করতে পারব। মানুষের মধ্যে লড়াই করবার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে।’’


তিনি বলেন, ‘‘আমরা আজকে ঐক্যবদ্ধ, জনগন ঐক্যবদ্ধ। ১০ ডিসেম্বরের পর আমরা যুগপতের কথা বলেছি। সমস্ত রাজনৈতিক দল এখন কোনো না কোনোভাবে, কোনো না কোনো ফরমেটে কমন একটা লক্ষ্যে একসাথে লড়াই করছে। এটা একটা বিজয়ের চিহ্ন তো বটে। এখন বিরোধী দল আন্দোলন করে আর ওরা(আওয়ামী লীগ) পাহারা দেয়। পাহারাই দিতে হবে এবং একসময় পাহারা দেবার লাঠিও হাতে থাকবে। দেখবেন পাহারা দেবার মানুষও সব উদাও হয়ে যাবে।আমরা ওই জায়গা তৈরি করবার জন্য মানুষকে আকৃষ্ট করতে একটি রেজিমের পরিবর্তনই শুধু  নয়, তার জায়গা প্রতিস্থাপন করতে সেইরকম একটা সরকার, সেই রকম একটা সিষ্টেম যেটা মানুষ চায় সেই অঙ্গীকারের কথা আমরা বলেছি।”


 গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘ সাধারণ মানুষ আজকে নাভিশ্বাস অবস্থায় আছে তারা আবার দিন গুনছেন কবে সেই দিন আসবে, কবে আরেকটি ২৪ জানুয়ারি তৈরি হবে ঢাকার রাজপথসহ সারাদেশের রাজপথ জনতার উত্তাল টেউয়ে প্রকম্পিত হবে। সেই লড়াইয়ের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। এটা হচ্ছে আমাদের জন্য বাঁচার লড়াই। এই বাঁচার পথ আমাদের তৈরি করতে গেলে অবশ্যই শহীদ আসাদের আত্মত্যাগের আলোক সৈনিকের আত্মত্যাগের প্রতি তাকাতে হবে। ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, তারা যতই আন্দোলনকে কালিমা লিপ্ত করার চেষ্টা করুক, যতই ভয় দেখাক কোনো লাভ হবে না। তারা এখন সবচেয়ে ভীত ক্ষমতা হারানোর ভয়ে।”

জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলের শহীদ আসাদ পরিষদের উদ্যোগে ৬৯ সালের শহীদ আসাদুজ্জামান ৫৪তম শাহাদাত দিবস উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়।

১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ছাত্র নেতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। পরবর্তিতে এই স্বৈরশাসন বিরোধী চলমান আন্দোলনকে বেগবান করে। পরবর্তিতে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর সভাপতিত্বে ও হাবিবুর রহমান রিজুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বাক জহির উদ্দিন স্বপন ও শহীদ আসাদের ছোট ভাই নুরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।


শেয়ার করুন