২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৬:৫০:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


রহস্যেঘেরা রাজনীতিতে কী হচ্ছে
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৮-২০২৩
রহস্যেঘেরা রাজনীতিতে কী হচ্ছে


রাজনীতির ধারাবাহিকতার বড্ড অভাব। দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে মুহূর্তে! একেক সময় একেক ইস্যুতে উত্তাল। আজ যা হচ্ছে। পরক্ষণেই সেটা চাপা পড়ছে। আগের চেয়ে নতুন ইস্যুই মনে হয় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোথাও কোনো কিছুর ধারাবাহিকতা নেই। মানুষের মধ্যে একটা সন্দেহের দোলাচাল। কী ঘটতে যাচ্ছে? কিছু সম্ভবত হচ্ছে। কিন্তু আসলেই কী হচ্ছে? সাধারণ জনমনে লাখো প্রশ্ন। উত্তর নেই। ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে যে যারমত একটা উত্তর দাঁড় করানো। কিন্তু সেটাতেও তার নিজেরও আস্থা ক্ষীণ। এতটা অনিশ্চয়তার রাজনীতি আর কখনও দেখা যায়নি।

পূর্বের ইতিহাসে। রাজপথে মারমার কাটকাট। কিন্তু সেটা নেই। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। অদ্ভুত ব্যাপার এ জন্য এখন পর্যন্ত একদিন হরতাল ধর্মঘট ডাকেনি। অথচ এ দাবি সেই ২০১৪ সনের আগ থেকেই। ঢিমেতালে চলছে আন্দোলন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অতীত ঘাটলে এটাকে আন্দোলন বলা যায় না। বিএনপি তার দাবিতে অটুট। শুধু এটুকু জানান দিতে কখনও পথ সভা। কখনও পদযাত্রা, কখনও মেগা জনসভা। কখনো ইনডোরে সভা। 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এটা প্রতিহত করতে রাজপথে মানুষের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তার অজুহাতে মাঠে শান্তি মিছিল, শান্তি সভার নামে মাঠে থাকা। তবে এতে বড় ধরনের কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। পুলিশের সঙ্গে বিএনপির একটু আধটু এই আর কী। এমন আন্দোলন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থ্রোয়াই কেয়ার। যে আওয়ামী লীগ আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১১৩ দিন হরতাল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে বাধ্য করেছিলেন বিএনপিকে। সে দলটিকে ক্ষমতায় থেকেও কোনো হরতাল হজম করতে হচ্ছে না। অথচ এতেও প্রচণ্ড চাপ। একটু রহস্যজনক নয় কি? 

সামনেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। মাঝে চার মাস বাকি। কিন্তু নির্বাচনী সেই উত্তাপটাই ছুইছে না কাউকে। অথচ এ সময় নমীনেশন প্রত্যাশীদের থাকে দৌড়ঝাপ। এলাকায় ব্যস্ত সময়ের পাশাপাশি নমিনেশনের দেন দরবার। নির্বাচন কমিশনেরও ঘুম হারাম হওয়া ব্যস্ততা। কিন্তু এর কিছুই নেই। প্রকাশ্যে কিছু কথা বার্তা হয়। ক্ষমতাসীন দল আসন্ন নির্বাচনটা সংবিধানের অধীনেই হবে। কেউ বাধা দিলে তাদের প্রতিহত করা হবে এ কথাগুলো বলার যে স্পিরিট সেটা কমিয়ে দিয়েছে। 

বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না সে আলোচনাও তেমন নেই। তবে সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে ভাসছে অনেক খবর। মূল চিত্রটা ফুটে উঠছে সেখানেই। যেখানে বিএনপি ও সমমনা নেতৃবৃন্দের মধ্যে একটা সরল হাসি পরিলক্ষিত হয়। যে হাসি দিয়ে ছবি পোষ্ট হয়, তাতে প্রশান্তি। মির্জা ফখরুল এক জনসভায় বলেছেনও, দেখবেন মুখ শুকিয়ে গেছে। চকচকে ভাব কমে গেছে। আসলেই ক্ষমতাসীন দলের মুখে সে দৃঢ়তা আর নেই। বারবার বলছেন, ভোট বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বিএনপি সে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, আমাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না বিদেশী পরাশক্তি। এদের উদ্দেশ্য এ দেশে বসে ইন্দো প্যাসেফিক জোন কন্ট্রোল করা। অন্য দেশের উপর হামলা করা। নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এগুলো তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। এমন কথাবার্তায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মাঝে পিনপতন নীরবতা। 

পার্শ্ববর্তি ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রচন্ডরকম প্রভাব বিস্তার করে আসছে। বিগত দুই তিন নির্বাচনে তাদের আনুকূল্যতা ছিল, যা নির্বাচন পরবর্তি কার্যক্রমেও স্পষ্ট। কিন্তু এবার ভারত যেন অনেকটাই দর্শক। এমনকি ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্য হওয়া নিয়েও ভারত প্রধান নরেন্দ্র মোদীর যে বক্তব্য সেটা বাংলাদেশকে আহত করেছে। অনেকেই বিভিন্ন ক্যালকূলেশন টেনে বলতে চান, ব্রিকসে সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের বিরোধীতা ছিল। বাংলাদেশ সদস্য হতে আবেদন করেও ব্যর্থ। ব্রিকসে নরেন্দ্র মোদি একবার বলেন, যাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে, তাদেরকে ব্রিকসে নেয়া হবে না। এ কথাটা বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাজোট যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে। এরপর বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মার্কিন কংগ্রেসবৃন্দ একের পর এক নিষেধাজ্ঞা প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছে, তাতে প্রবল সন্দেহ। বাংলাদেশের মানুষের মাঝে এক রকম হতাশা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির জটিলতা অনুভব করা যাচ্ছে। র‌্যাবের উপর স্যাংশনের পর ভিসানীতি আরো একটি ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত মার্কিনীদের। এর বাইরেও নুন থেকে চুন খসলে যেভাবে বিবৃতি দিচ্ছে জাতিসংঘ, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো, সেটা নজীরবিহীন। এমনকি পুলিশের কী আচরন হবে সেটা পর্যন্ত উল্লেখ করে দিচ্ছেন তারা। 

ভারতের সমর্থন আছে, ভারতের সমর্থন নেই 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাজোট যখন নিশ্চিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে অপছন্দের তালিকায় রেখেছে, তখন ভারতের অবস্থান জানতে মরিয়া মানুষ। কারো বিশ্লেষণ ভারত মার্কিনীদের সঙ্গেই, কেউ না। এমন প্রেক্ষাপটে দু’বার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় মুখপাত্রের বক্তব্য অস্পষ্টই ছিল। এরপর আসলে ভারতের তিন প্রভাবশালী পত্রিকার রিপোর্ট। 

এতে ভারতের অবস্থান কিছুটা ক্লিয়ার হওয়া গেছে যে তারা মার্কিনীদের পরামর্শ দিয়েছেন, হাসিনা সরকারই বাংলাদেশ, ভারত মার্কিনীদের জন্য স্বস্তির। এরপর তুমুল বিশ্লেষণে বেড়িয়ে আসে ওইসব খবর সূত্রবিহীন যা অনেকাংশে মনগড়া। যে বক্তব্য সেখানে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ভারত সরকারের নীতির সঙ্গে মিল নেই বলেও খবর প্রকাশ পাচ্ছে। যদিও এর কিছুটা স্পষ্ট হয় ব্রিকসে। কারণ প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু যে বাংলাদেশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সেই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক হয়নি। হয়েছে অনুষ্ঠানের একটি মুহূর্তে সাক্ষাত, কুশলাদি বিনিময়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন মোদী নিজেই এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। 

ব্রিকস সম্মেলন 

ব্রিকসে বাংলাদেশকে সম্মান জানিয়েছে ব্রিকসের নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের যে আবেদন সদস্য হওয়ার সেটা তারা আমলে নেয়নি। ৬টি দেশকে তারা সদস্যপদ দিয়েছে যাতে ইথিওপিয়ার মত দেশও আছে। কিন্তু নেই বাংলাদেশ। তবে সদস্য হতে আবেদন হওয়া দেশের সংখ্যা ছিল নাকি প্রায় চল্লিশ। বাংলাদেশ সদস্যপদ না পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের মানুষও মর্মাহত। তবে পরের আসরে বাংলাদেশ সদস্যপদ পাবে এমন একটা আশ্বাস দেয়া হয়েছে জানা গেছে। কিন্তু কেন বাংলাদেশ পেল না, এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষল। যেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাবার্তায় ঠাহর করা গেছিল বাংলাদেশ সদস্যপদ পাচ্ছে। সেখানে না পাওয়া কেন? কেউ বলছেন, এটা কূটনৈতিক ব্যর্থতা। যে দেনদরবার প্রয়োজন ছিল, সেটা করতে পারেনি বাংলাদেশ। বিপক্ষেও আছে যুক্তি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে জানিয়েছেন, সদস্যপদ নেয়ার তেমন ইচ্ছাই ছিল না বাংলাদেশের।  

তবে ব্রিকসে সবচে কষ্টদায়ক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রস্তাবনায়। 

ব্রিকসের ওই অধিবেশনের পরই এ বিষয়ে একটি চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সূত্রগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স বলছে, নতুন সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন কয়েকটি মানদণ্ড উত্থাপন করেন। এতেই ব্রিকস সম্প্রসারণ চুক্তি বিলম্বিত হয়। রয়টার্স আরো জানিয়েছে, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক শক্তি এবং সরকারগুলো ভিন্ন বিদেশি নীতির লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে ব্যাপকভাবে ভিন্ন। যে সংগঠন বা ব্লকের প্রতিটি সদস্যের একই সমান ভেটো ক্ষমতা রয়েছে সেখানে এটি একটি জটিল ফ্যাক্টর। এই ব্লকে সবচেয়ে হেভিওয়েট চীন পশ্চিমাদের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্রিকসকে সম্প্রসারণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আহ্বান জানিয়ে আসছে। 

ওদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর মধ্য দিয়ে তিনি পশ্চিমা শক্তিগুলোকে দেখাতে চান, বিশ্বে এখনো তার বন্ধু আছে। পক্ষান্তরে পশ্চিমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে ব্রাজিল এবং ভারত। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা ডা সিলভা যুক্তরাষ্ট্র এবং জি৭-এর প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে ব্রিকস এমন ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। 

ব্রিকসের সদস্য দেশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নতুন সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রস্তাব করা মানদণ্ডের মধ্যে রয়েছে- যেসব দেশ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার টার্গেটে আছে তাদের সদস্য করা যাবে না। এর মাধ্যমে ইরান এবং ভেনিজুয়েলার আবেদন নাকচ হয়ে যায়। এছাড়া মাথাপিছু সর্বনিম্ন জিডিপি নির্ধারণের প্রস্তাব দেন মোদি। ওই কর্মকর্তা বলেন, নরেন্দ্র মোদি এসব বিষয় বুধবার উত্থাপন করলে এ নিয়েই কিছুটা বিভক্তি দেখা দেয়। বাংলাদেশের সদস্যপদ ভূ-রাজনীতি, আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গসহ এসব জটিলতার মারপ্যাচেই কী আটকে গেল? এ নিয়ে বিশদ আর আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। 

বিএনপি নেতাদের সিঙ্গাপুর সফর 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বেশ কিছুদিন থেকেই সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন। এরপর চিকিৎসার জন্য সেখানে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার স্ত্রী। একই পথে যান মির্জা আব্বাস ও মহিলা দলের নেত্রী আফরোজা আব্বাস। সকলের উদ্দেশ্য চিকিৎসা। 

কিন্তু এ নিয়ে ফিসফাস চলছে সামাজিক যোগাযোগ। বলা হচ্ছে, তিন বছরের জন্য একটি স্বল্পকালীন সরকার গঠিত হবে। যার পরামর্শক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাজোট। ওই সরকারের প্রধান করতে চায় বিএনপি প্রফেসর ইউনুসকে। অথবা তিনি যাকে মনোনীত করবেন সেই ব্যক্তি। ওই সরকার তিন বছর ক্ষমতা চালিয়ে এরপর দেবেন নির্বাচন- এমন বহু আজগুবি টাইপের কথা ভাসছে যোগাযোগ মাধ্যমে। যার আসলেই কোনো ভিত্তি নেই। অস্পষ্টতায় ভরা।  

মুহাম্মদ ইউনুস প্রসঙ্গ 

সর্বশেষ, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের ইস্যুতে বার বার বিশ্ববরেণ্যদের তৎপরতা বেশ চোখে পরার মত। কিন্তু হঠাৎই বিশ্বের বহু নেতা প্রফেসর ইউনুসের বিরুদ্ধে চালিত মামলা স্থগিতকরণ ও তাকে হেনস্থা করার প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে চিঠি দিচ্ছেন। সর্বশেষ অমন এক খোলা চিঠি প্রকাশিত হয় ওয়াশিংটন পোস্টে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্বোধন করা হয়েছে। যে চিঠিতে ১০০ এর উপর রয়েছে নোবেল বিজয়ী। সাবেক বিশ্ববরেণ্য নেতা, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদসহ ১৬০ জন। এরা প্রফেসর ইউনুসের মামলাকার্য স্থগিতই শুধু নয় কথা বলেছেন বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গেও। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দেখার প্রতীক্ষা তাদেরও।   

মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাইডেন প্রশাসনের একজন কাছের প্রচণ্ড প্রভাবশালী পরামর্শক এটা সবারই জানা। সেই বারাক ওবামাও একই ভাষায় চিঠি দিয়েছেন প্রফেসর ইউনুসকে নিয়ে। 

এতে প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এখন বিশ্বের প্রায় প্রতিটা জোনেই ইন্টারেস্ট বিদ্যমান। 

সবশেষে

রাজপথ নীরব। এটা সাধারণ মানুষের জন্য বড় একটা স্বস্তি। যদিও বিএনপি সেই সূচনা থেকেই বলে আসছে তাদের এবারের আন্দোলন হবে অহিংস। সে ধারাতেই তারা এখনও। তবে এতদিন ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তারা যেভাবে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করতেন, সেগুলো এখন আর তেমন নেই। শুধু মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিভিন্নস্থানে নানা প্রোগ্রাম নিয়ে যোগ দেন। কথা বলেন। 

অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশে কী ঘটতে যাচ্ছে সেটা ইতিমধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে। যে কোনো একটা ডেটলাইনে চলে গেছে সেসব। ফলে সবাই এব্যাপারে এখন নিশ্চুপ। আন্দোলন ফেলে বিএনপি নেতারা সিঙ্গাপুর। দেশেও যারা তারাও নীরবে পথ চলছেন। সাধারণ নেতাকর্মীদেরও ঝুট ঝামেলা এড়িয়ে, অহিংস থাকতে পরামর্শ। মাঠে বিএনপির আন্দোলন চাঙ্গা না থাকলে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মাঠে নামার আর প্রয়োজন কী। তারা তো ক্ষমতায়ই। তবে প্রশাসনে এক রকম দুশ্চিন্তা ভর করেছে এটা ঠিক। 

গত (৩১ জুলাই) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক-২০২৩’ প্রদান অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটু আন্দোলন সংগ্রাম দেখলে ভয় পাবেন না; ভয় পাওয়ার কিছু নেই। জনগণ যতক্ষণ আমাদের সঙ্গে আছে, যারা আন্দোলন করতে চায়, জ্বালাও-পোড়াও করতে চায়, জ্বালাও পোড়াও করাটা আমরা সহ্য করব না। সেটা কখনই মেনে নেওয়া যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম যাই করুক তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আমরা আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা আমাদের সমর্থন করেনি, তাদের মনের বৈরিতা কিন্তু এখনও কেটে যায়নি। কিন্তু সেটা অতিক্রম করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’ প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারো মুখ গোমরা আমি দেখতে চাই না। সবাইকে হাসিখুশি দেখতে চাই। যেটুকু মানুষের জীবনে সমস্যা আসে কিন্তু সেটা অতিক্রম করবার মতো মনোবল দরকার হয়, শক্তি দরকার হয়। সেই শক্তি নিয়ে চললে বাংলাদেশ ইনশাআল্লাহ এগিয়ে যাবে। সেটাই আমি বিশ্বাস করি।’

প্রধানমন্ত্রীর এমন কথায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা আশ্বস্ত হওয়ারই কথা। কিন্তু ভয়টা অন্যখানে। সেই যে মার্কিন ভিসানীতি। মার্কিনীদের বেঁধে দেয়া গাইডলাইন অনুসারে দ্বাদশ নির্বাচনটা না হলে ভিসানীতির একটা খড়গ ঝুলছে তাতে আটকে যেতে পারে চাকরি শেষে বউ-পোলাপান নিয়ে উন্নত দেশে থিতু হওয়ার স্বপ্ন। যা আমলা ও তাদের আশপাশে থাকাদের বেশিরভাগের সুপ্ত বাসনা যুগ যুগ ধরে।

শেয়ার করুন