০৪ মে ২০১২, শনিবার, ০২:২৩:৪৬ পূর্বাহ্ন


দেশকে মোঃ জহিরুল ইসলাম জহির
আমরা যে শক্তিশালি জিএম কাদেরের বক্তব্যে তা ফুটে উঠেছে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৬-২০২৩
আমরা যে শক্তিশালি জিএম কাদেরের বক্তব্যে তা ফুটে উঠেছে জহিরুল ইসলাম জহির


জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লায়ন মোঃ জহিরুল ইসলাম জহির বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ভালো না। অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপ। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক দিক থেকেও দেশের অবস্থা ভালো না। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবেও আমরা কম শক্তিশালি না। আমরা যে শক্তিশালি তা-তো আমাদের দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। 

মোঃ জহিরুল ইসলাম জহির ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাংগাইল-৭ (মির্জাপুর নির্বাচনী এলাকা) থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। ৯ম জাতীয় সংসদ (২০০৮) নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন পান। দশম জাতীয় সংসদ (২০১৪ইং) নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন পান। এর পাশাপাশি তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ (২০১৮ইং) নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। তার পিতার  মরহুম আমছের আলী। মাতা মরহুম লালমন বেগম। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে এমএসএস  করেছেন। দেশ পত্রিকার জন্য তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

দেশ: দেশের সার্বিক অবস্থা কেমন বলে মনে করেন?

মো: জহিরুল ইসলাম জহির:  দেশের রাজনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ভালো না। অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপ। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক দিক থেকেও দেশের অবস্থা ভালো না। আমেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হেফাজার্ড (এলোমেলো) অবস্থা বিরাজ করছে দেশে। যেটা দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের কাম্য না। দেশের আমাদের মতো রাজনৈতিক দলের আশা দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। মানুষ নিজের ভোট নিজে দেবে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে যা হচ্ছে ভোটে নামে- বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা অনীহা হতাশার ভাব লক্ষ্য করা গেছে। জনগণ এখন নির্বাচনে ভোট দিতে চায় না। কারণ আমরা চাই আমার ভোট আমি দেবো। কিন্তু আমরা তো নিজের ভোট নিজে দিতে পারছি না। দিনের ভোট রাতে হয়ে যায়। ১৫৩ টা আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়ে যায়- এগুলা তো ইতিহাস। সেকারণে আসলে মানুষের মধ্যে আস্থা নেই। সেজন্য বলবো আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে বলতে হবে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে না। এটা সুষ্ঠু হবে না। 

দেশ: যে সব নির্বাচনের কথা বললেন বিশেষ করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন, তাতে তো জাপা ঠিকই অংশ নিয়েছিলো। এভাবেই নির্বাচন করে সরকারের সাথে ক্ষমতায় শক্ত শরিক হয়ে আছেন- এটা কি দ্বি-চারিতা না? 

মো: জহিরুল ইসলাম জহির : না এটা এভাবে বলা ঠিক না। আমরাতো ভেবেছিলাম যে এসরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিলে সেটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষই হবে। আর সেই আশা নিয়েই আমরা একটা জোট বেধেছিলাম। কিন্তু ক্ষমতায় যেহেতু আওয়ামী তারা তো সেই অবস্থা বা বলা চলে কথা রাখেনি। কথা ও কাজে কারা প্রমাণ করতে পারেনি যে তারা স্বচ্ছতায় আছে। অথচ ২০০৮ সাল থেকে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গী। আমরা দেখেছি আমাদের যে আসন তারা দেয়ার কথা তা দেয়নি। বরং অঙ্গীকার করেও বেশ কয়েকটি আসনে তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেয়। তারা আমাদের সাথে ২০০৮ সাল থেকেই বিমাতাসূভল আচরণ করে আসছে। ২০১৪ সালে তো আমাদের সাথে নিয়ে মহাজোট করেছে, ছিল নির্বাচনী মহাজোট। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনেও একিই রকম অচরণ করেছে তারা। আশ্বাস দিয়েছিল অনেক আসন দেবে। কিন্তু অধিকাংশ আসনে তারা তাদেরই প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেয়। সেজন্য জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যানের বক্তব্য হচ্ছে আমরা আদৌ জোট করবো কি-না? এর পাশাপাশি এ সরকারের অধীনে নির্বাচন করবো কি-না? সেব্যাপারে আমরা নির্বাচনের ঠিক আগেই সিদ্ধান্ত নেবো? তিনি বলেছেন দেশের রাজনৈতিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করি আগে। 

দেশ: আপনারা কি এসরকারের দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন?

মো: জহিরুল ইসলাম জহির : (একটু ভেবে) অনেকাংশেতো তা-ই হয়েছি। 

দেশ: তো সে-ই প্রতারণার জবাব কিভাবে দিতে চান? কেনোনা আপনাদেও তো বিভিন্নভাবে সরকারের চাপে রাখার কৌশল নিচ্ছে বলে বলা হচ্ছে-সে-ই চাপ কি সামলাতে পারবেন?

মো: জহিরুল ইসলাম জহির : চেষ্টা করবো। আমাদের মাননীয় চেয়ারম্যান অত্যন্ত শক্তিশালি। মানসিকভাবে তিনি অত্যন্ত শক্তিশালি।

দেশ: রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালি কি-না?

মো: জহিরুল ইসলাম জহির : রাজনৈতিকভাবেও আমরা কম শক্তিশালি না, আমরা যে শক্তিশালি তা-তো আমাদের দলের চেয়ারম্যানের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। 

দেশ: মাঝেতো আপনাদের পার্টির চেয়ারম্যানকে বেশ চুপচাপ থাকতে দেখা গেছে। বলাবলি হতো ক্ষমতাসীন সরকার আপনাদের চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে। যেনো মাঠে জাতীয় পার্টি গর্জে উঠতে না পারে।

মো: জহিরুল ইসলাম জহির : না এটা ঠিক না। তার বিরুদ্ধে একটা মামলা ছিল। কোর্টে পার্টি সংক্রান্ত একটি নির্দেশ ছিল। নিশেধাজ্ঞা ছিল। সেটা প্রত্যাহারের পরেতো উনি এখন সরব। উনার বক্তব্য পরিষ্কার। উনি কি কি করতে চান।  উনি যেভাবে এখন নির্দেশ দেবেন আমরা সেভাবেই চলবো। আগামীতে জাতীয় পার্টি কিভাবে চলবে? কিভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে সেটা একভাবে হবে কি-না, তা আমাদের মাননীয় চেযারম্যান সিদ্ধান্ত নেবেন। 

দেশ : জাতীয় পার্টি আসলে কার? সাবেক প্রেসিডেন্ড হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের না অন্য কারো, নাা-কি রওশন এরশাদের?

মো: জহিরুল ইসলাম জহির : জাতীয় পার্টি মূলত পল্লী বন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের। তার তরফ থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাহেবকে। তাছাড়া আমাদের পার্টির যে কাউন্সিল হয়েছিলো তাতে তিনি নির্বাচিত চেয়ারম্যান তিনি। অতএব জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হচ্ছেন জিএম কাদের সাহেবই। 

দেশ: তো এসব বিষয়ে কি অবগত নন রওশন এরশাদ?

মো: জহিরুল ইসলাম জহির : অবশ্যই জানেন। উনি (রওশন এরশাদ) যে দলের পৃষ্ঠপোষক থাকবেন এটাতো উনি জানেনই। রওশন এরশাদ পার্টির কি বিষয়ে থাকবেন তাতো বলাই আছে। উনি (রওশন এরশাদ) কোনো সভা সমাবেশে উপস্থিত থাকলে মর্যাদা পাবেন চেয়ারম্যানের উপরে। তবে দলের সব ধরনের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত দেয়ার সাংবিধানিকভাবে থাকবে মাননীয় চেয়ারম্যানের। 

দেশ: সম্প্রতি ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির রওশন পন্থী নেতা কাজী মামুনুর রশিদকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এটা কি করে সম্ভব হলো?

মো: জহিরুল ইসলাম জহির : দেখেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ যেটা করেছন (একটু চিন্তা করে..)..আমার বিশ্বাস রওশন এরশাদ দল ভাঙ্গনে চাইবেন না। অনেক বক্তব্য বা কথা বলে দেখেছি রওশন এরশাদ দল ভাঙ্গার পক্ষে নন। এরপর উনিতো অসুস্থ। বয়স হয়েছে। অনেক কিছু মনে রাখতে পারেন না। রওশন এরশাদের এমন অবস্থাকে কিছু কুচক্রীমহল ব্যবহার করছে। উনার ছেলেকে ব্যবহার করে এসব কথা হচ্ছে। উনি (রওশন এরশাদ) এব্যাপারে জানেন কি-না সন্দেহ। দেখা যাবে রওশন এরশাদ জানেনই না। অথবা উনাকে মিস গাইড করা হচ্ছে। 

দেশ: রওশন এরশাদকে নিয়ে এধরণের কনফ্লিক্টের পরও মনে করেন জাতীয় পার্টি শক্তিশালি?

মো: জহিরুল ইসলাম জহির : জাতীয় পার্টি শক্তিশালি এই সেন্সে বলা হচ্ছে যে কোনো নির্বাচনে দলটি (জাতীয় পার্টি) একটা ফ্যাক্টর। জাতীয় পার্টিকে বিএনপিও টানে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগতো আমাদের ছাড়ছেই না। জাতীয় পার্টি ফ্যাক্টর না হলে এতোগুলো রাজনৈতিক দল আমাদের টানাটানি করে কেনো?

দেশ: জাতীয় পার্টি ফ্যাক্টর হলে আওয়ামী লীগ আপনাদের সাথে অতীতে দেয়া কথা রাখেনি কেনো? যে যে আসন চেয়েছিলেন তা-তো দেয়নি আওয়ামী লীগ-এমন ফ্যাক্টর হয়ে লাভ কি?

মো: জহিরুল ইসলাম জহির : দেয়নি বলেই তো একটু আগে বললাম যে আওয়ামী আমাদেরকে প্রতারিত করেছে। ছলচাতুরি করেছে। 

দেশ: এই কারণে কি আপনারা এখন কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না?

মো: জহিরুল ইসলাম জহির: অবশ্যই এটা একটা কারণ। আমাদের সাথে প্রতিটি নির্বাচনে তারা কমিটমেন্ট করেছিল। তারা কিন্তু সেই কমিটমেন্ট রাখেনি।

শেয়ার করুন