২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০১:৩৩:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


ভোটের আগে ‘অখ্যাত’ সংগঠনকে নিবন্ধন
আসছে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৭-২০২৩
আসছে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি নির্বাচন কমিশন ভবন


নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ‘অখ্যাত’ দুইটি সংগঠনকে নিবন্ধন দিয়েছে বলে অভিযোগ করে নিবন্ধন না পাওয়া ১০ দল আগামী ২৬ জুলাই ঘেরাও কর্মসূচি দিতে পারে। এনিয়ে আলোচনা হচ্ছে সংশ্লিস্ট দলগুলি মধ্যে। একসাথে কর্মসূচি দিতে না পারলেও যুগপৎভাবেও তারা কর্মসূচি দেয়ার কথা ভাবছে। 

গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল আগামী ২৬ জুলাইয়ের আগেই নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনার কথাও বলেছেন ১৭ জুলাই সোমবার অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে। এব্যাপারে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয় ২৬ জুলাই কমিশন এই দুইটি দলের নিবন্ধনের গ্যাজেট প্রকাশ করবে। তাই সেদিন কর্মসূচি।

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে দশ দলের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনের নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারাই(সাংবাদিকরা) বলুন এই যে, এতোগুলো সুপরিচিত, সক্রিয় এবং রাজপথের সংগ্রামরত রাজনৈতিক দল বাদ দিয়ে যাদের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে তাদের নাম আপনারা ক‘জন শুনেছেন। তাদের কি আদৌ কোন অফিস, নেতা-কর্মী আছে? আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশন রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে পরিচিত ও স্বীকৃত ক্রিয়াশীল দলগুলোকে নিবন্ধন না দেয়ার মাধ্যমে তারা নিজেদের সাথে আত্মপ্রতারণা এবং নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত্র সমস্ত আইন-কানুনকে ভঙ্গ করেছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রেসক্রিপশনে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে পরিচিত ও স্বীকৃত ক্রিয়াশীল দলগুলোকে বাদ দিয়ে অখ্যাত অপরিচিত দুইটি দলকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে।’

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আহ্বান জানিয়ে মান্না বলেন, যার যার জায়গা থেকে আপনারা এই সরকার ও তার ঘৃণ্য দালাল নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। তাদের মুখোশ খুলে দিন। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এবং যার যার দলীয় প্ল্যাটফর্ম থেকে এই অন্যায়, অন্যায্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলব। আমরা হয়ত শিগগিরই সকল দল নিয়ে বসবো এবং পরবর্তি কর্মসূচি নির্ধারণ করব।

গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল আগামী ২৬ জুলাইয়ের আগেই নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনার কথাও বলেন। কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয় ২৬ জুলাই কমিশন এই দুইটি দলের নিবন্ধনের গ্যাজেট প্রকাশ করবে।

গত ১৬ জুলাই রোববার নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)’ ও ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)’ নামের দুটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নিবন্ধনের জন্য ১২টি দলের সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছিলো কমিশন। তার থেকে এই দুইটি দলকে নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তালিকাপ্রাপ্ত ১২টি দল হচ্ছে : নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি), গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএসইচপি), ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজিপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), বাংলাদেশ সনাতন পার্টি, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)।

জাতীয় প্রেসক্লাবের হলে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রেসক্রিপশনে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে পরিচিত ও স্বীকৃত ক্রিয়াশীল দলসমূহকে বাদ দিয়ে অখ্যাত অপরিচিত ভুঁইফোড় দুইটি দলকে নিবন্ধন প্রদানের প্রতিবাদ’ শীর্ষক ব্যানারে নিবন্ধন না পাওয়া ১০টি দল এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার কতখানি অন্যায় করছেন কেবল মাত্র নিজেদের একটা ষড়যন্ত্রের জাল যেটা বিছিয়েছেন সেটাকে দিয়ে তার শিকার ধরার জন্যে। এই নির্বাচন কমিশনের বিন্দুমাত্র নিরপেক্ষতা নেই। সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের পরিণত হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কিছু সরকারি কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করার জন্য এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে আরো বড় পুরস্কারের লোভে তারা তস্য দালালের মত ফ্যাসিস্টদের স্বার্থে যেকোনো বা সকল বেআইনি কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে পারে এবং হয়। আপন হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মতলবাজ এমন গণবিরোধী সরকারি কর্মকর্তাগণ দেশে জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার টিকিয়ে রাখতে বেহায়া ও নিলর্জ্জ আচরণ করেন।

নিবন্ধন প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গত ১ বছর ধরে যাচাই বাছাই এর নোটিশ দিয়ে আবার কোথাও কোথাও আচমকা ভিজিট করে আমাদের দলসমূহের কেন্দ্রীয় অফিস, জেলা-উপজেলা অফিস পরিদর্শন করেছে। পরির্দশনের নামে তারা যেভাবে আমাদের তৃণমূলে অফিসের দলিল, সাইনবোর্ড, আমাদের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তাতে মনে হয়েছে তারা যেন রাজনৈতিক দল নয় বরং আসামীদের তালিকা হাল-নাগাদ করেছেন।

‘ওদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি’

এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, যে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের পথ রুদ্ধ যারা করবে তাদের ব্যাপারে আপনারা জানেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির একটা শর্ত দেয়া হয়েছে। আপনারা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে যদি এই ভিসানীতির পরে একটা সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকে গণতন্ত্র এবং সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থার পথ রুদ্ধ করেছে এই স্যাংশনের কার পড়া উচিত সর্বপ্রথম। এসসময় সংবাদ সম্মেলনে আসা নেতা-কর্মীরা ‘সিইসিসহ বর্তমান নির্বাচন কমিশন’ বলে শ্লোগান দিতে থাকে। তিনি বলেন, আমরা সুস্পষ্টভাবে এখান থেকে দাবি করছি এই সমস্ত বিবেকহীন লোকদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে জাতীয়ভাবে সারা বাংলাদেশে প্রত্যেকটা জনপদে এদের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত।

‘ইসি ঘেরাও করতে হবে’

গণঅধিকার পরিষদ(নূর) সভাপতি নূরুল হক নূর বলেন, নির্বাচন কমিশন দফা দফা আমাদের অফিস ভিজিট করেছে। আমাদের ৫৩টি জেলা কমিটি থাকলেও ২৮ জেলা কমিটির (ইসির রিকোয়ারমেন্ট এক তৃতীয়াংশ) তথ্য কমিশনকে দিয়েছি, উপজেলায় ইসির রিকোয়ারমেন্ট ১‘শ সেখানে আমরা দিয়েছে ১১১টি। অন্যান্য দলেরও একইভাবে কমিশনকে তাদের রিকোয়ামেন্ট থেকে বেশি দিয়েছে। তারপরেও কেনো আমাদেরকে নিবন্ধন দেয়া হলো না কেনো?

’ওদের অফিস নেই, ওরা এজেন্সির সৃষ্টি’

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আমাদের প্রতি নির্বাচন কমিশন জুলুম করেছে। যে দ্ইুটা দলকে নিবন্ধন দিয়েছে তার মধ্যে একটি দলকে কেনো দেয়া হয়েছে তার সকলে বলেছেন। তবে আরেক দলকে যে নিবন্ধন দিয়েছে সে সম্পর্কে বলব, একটি গোপন সংগঠনকে ইসি প্রমোট করেছে। এই বিএনএম-এই দলের সভাপতিকে আমি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ১৯৮৯ সাল থেকে আছি- আমি তাকে চিনি না। যাদেরকে নিবন্ধন দিয়েছে তাদের ব্যাপারে সাংবাদিকরা খোঁজ নেবেন।

বিএলডিপির চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন আল আজাদ বলেন, নিবন্ধনের এই আইন একটা তলাক্ত বাঁশ। আমি ২০০৮, ’১৪, ’১৮ এবং ’২৩ এই চার বার আবেদন করেছি নিবন্ধনের জন্য। বার বার এই বাঁশটা দিয়ে মনে হয় উঠে গেলাম-আবার শা করে নিচে নেমে এলাম। আর উঠা যাচ্ছে না, ক্লান্তি।

বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সর্দার চাখারী বলেন, এই নির্বাচন কমিশন ছাত্রলীগ, যুব লীগ নিয়ে আমাদের অফিস ভিজিট করতে যায়। এটা ভাবা যায়। আমরা এই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করব। এই যে বিএনএমকে নিবন্ধন দেয়া হলো এটা সভাপতি ও সেক্রেটারি কে? কেউ বলতে পারবে। সাংবাদিক যদি কেউ বলতে পারে যে, আমি চিনতে পারে তাহলে আজ থেকে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেবো। এই বিএনএম বিএনপিকে ভেঙে বিভক্ত করার জন্য সরকারের নীল নকশার অংশ হিসেবে এই দলকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন