৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৭:৩৯:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


শেষের দিকে জামায়াতের না, তবে ‘মৌখিক’
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৪-২০২৪
শেষের দিকে জামায়াতের না, তবে ‘মৌখিক’


জামায়াতে ইসলামী আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথমে অংশ নেয়ার কথা বললেও তারা হঠাৎ করে পিছপা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে দলটি সরে দাঁড়িয়েছে। তবে একেবারে শেষে নেয়া এধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে নানা গুঞ্জন দেখা দিয়েছে। কেননা উপজেলা নির্বাচনের যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলেও কেন্দ্রীয়ভাবে অর্থ্যাৎ অফিসিয়ালি দলটি কিছুই জানায়নি। বলা হচ্ছে যারা ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে দেড়শ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনটি পদের বিপরীতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদেরকে মৌখিকভাবে না করে দেয়া হয়েছে। অর্থ্যাৎ তারা যেনো সরে দাঁড়ায় নির্বাচন থেকে। এর বাইরে বিস্তারিত কিছুই দলটি বলেনি বা বলতে চাচ্ছে না। 

বিএনপি’র অবস্থান পরিষ্কার করলো

উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপি অনেক আগ থেকেই। কিন্তু দলের এমন সিদ্ধান্ত অফিসিয়ালি ঘোষণা করা হয়নি। উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হতে থাকলেও বিএনপি হাই কমান্ড থেকে তেমন উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি। তবে বিভিন্ন সময়ে এমনকি সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল সোমবারে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপির আগের সিদ্ধান্ত অর্থাৎ অংশগ্রহণ না করাই বহাল আছে। সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। অর্থাৎ উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার প্রশ্নে আপোষহীন বিএনপি। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়ার প্রশ্নে দলের অবস্থান নিয়ে দোটানায় থাকেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটি গত সোমবার রাতে বৈঠক করে বর্তমান সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট বর্জনের ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলটির স্থায়ী কমিটির গত রাতের ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রহসনের অংশীদার হতে চায় না বিএনপি। 

তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে দেখা গিয়েছে প্রথম ধাপে দেড়শ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনটি পদের বিপরীতে ১ হাজার ৮৯১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬৯৬, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ৪৭১ জন। আর এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির ৩৫ ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জড়িত অন্তত ২৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে বিএনপি’র সাথে বলা যুগপৎ আন্দোলনে ধাকা গণতন্ত্র মঞ্চও উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে ‘না’ তেই আছেন বলে জানিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম প্রধান নেতা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।

জামায়াতের না

এদিকে এই নির্বাচনে প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মাত্র ৩৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বলে শোনা গেছে। অথচ আর এর বিপরীতে স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরুও করে দেয়। কিন্তু এখন এদেরকে সরে দাঁড়াতে মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেনো সরে দাঁড়াল জামায়াত? জানা গেছে, রমজান মাসে বিএনপি’র একটি শক্তিশালি প্রতিনিধি দল জামায়াতে ইসলামী’র বেশ কয়েকজনকে সাথে আলাপ করে উপজেলা নির্বাচন এবং এর পাশাপাশি ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে রাজি করাতে তৎপরতা শুরু করে। অনেক দেন-দরবারের পর জামায়াত শেষ মেষ শুধু উপজেলা নির্বাচন বর্জন প্রশ্নে কিছু ক্ষেত্রে একমত হয়। সেটি হলো তারা মৌখিকভাবে উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যেতে বলবে। তবে আরেকটি সূত্র জানায় ভিন্ন কথা। যদিও দলটি এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে না বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বলা হচ্ছে এব্যাপারে দলের স্থানীয় দায়িত্বশীলরা দেখবেন। এখানে কেন্দ্রীয় জামায়াত কেন্দ্রয়িভাবে কোনো সিদ্ধান্ত দেবে না। 

চরমোনাইয়ের পীরের না : বিরাট ফ্যাক্টর 

তবে অন্য একটি সূত্র দাবি করেছে যে জামায়াতও উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এর পেছনে অন্য কারণ কাজ করেছে, মূলত এটিও প্রধান কারণ। জানা গেছে, সবচেয়ে বড় কারণ হলো বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আর্দশে বিশ্বাসী ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অন্যতম হচ্ছে চরমোনাইয়ের পীরের ইসলামী আন্দোলনও সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চরমোনাইয়ের পীরের এমন সিদ্ধান্ত স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে বেকায়দায় ফেলে দেয়, দেখা দেয় অস্বস্তি। এপর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতা এবিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অগ্রসর হন। তারা মত দেন যে এখন আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে সাময়িক রাজনৈতিক স্বস্তি পেলেও পরে বড়ো ধরনের মাসুল গুণতে হবে। তাই দ্রুত তারা বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অধীনে উপজেলা নির্বাচনেও অংশগ্রহণ থেকে দূরে থাকে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয় উচ্চ পর্যায়ে। তবে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার মতো সিদ্ধান্তটি মৌখিকভাবে নেয়ার কথা বলে আগামীতে কতটা এতে স্থির থাকবে তা সামনের দিনগুলিতে বোঝা যাবে। কারণ ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাচনে অংশ জামায়াতে ইসলামী প্রায় অর্ধশত নেতা মাঠে নেমে গেছে।

শেয়ার করুন