২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১০:৫৬:৫৮ পূর্বাহ্ন


জাতীয় প্রবাসী দিবসে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০১-২০২৪
জাতীয় প্রবাসী দিবসে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান


প্রবাসে বাংলাদেশ দূতাবাস, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট এবং বিশ্বের বিভিন্ন দূতাবাসে প্রথমবারের মতো জাতীয় প্রবাসী দিবস পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশের স্মাট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এই অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণ করেন।

ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাস

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে উন্নত ও সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে গত ৩০ ডিসেম্বর শনিবার জাতীয় প্রবাসী দিবস-২০২৩ পালিত হয়েছে। 

প্রথম জাতীয় প্রবাসী দিবস উপলক্ষে দূতাবাস সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওয়াশিংটন ডিসি এবং পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্যে বসবাসরত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি এতে যোগ দেন।

এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন মিনিস্টার (কনস্যুলার) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ডিফেন্স অ্যাটাচে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শাহেদুল ইসলাম, মিনিস্টার (পলিটিক্যাল) মো. রাশেদুজ্জামান এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি অহিদুজ্জামান নুর।

পরে দিবসটির তাৎপর্য এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় প্রবাসীদের অবদান তুলে ধরে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বাগত ও সমাপনী বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। সেমিনারে দূতাবাসের মিনিস্টার (ইকোনমিক) ড. মো. ফজলে রাব্বি এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি (পাসপোর্ট ও ভিসা উইং) মুহাম্মদ আবদুল হাই মিলটন পৃথক দুটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন।

মিনিস্টার (ইকোনমিক) তার পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ, বিনিয়োগ আবহ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনা যেমন সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্ট, বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্ট খোলা ও সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ওপর আলোকপাত করেন।

ফার্স্ট সেক্রেটারি (ভিসা এবং পাসপোর্ট উইং) তার পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে দূতাবাসের কনস্যুলার পরিষেবাসমূহ তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে এনভিআর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ও ট্রাভেল পারমিট প্রদান। সেই সঙ্গে তিনি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ও দ্বৈত নাগরিকত্বের আবেদন গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ের কথা উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান তার বক্তব্যে জাতীয় প্রবাসী দিবস উপলক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তাদের অসামান্য অবদানের প্রশংসা করেন। প্রবাসীদের দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী এবং অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রাষ্ট্রদূত ইমরান যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও বিনিয়োগ কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত উন্নত ও সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বহুমাত্রিক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। তিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করার পাশাপাশি এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিদেশের মাটিতে তুলে ধরতে প্রবাসীদের কাজ করার আহ্বান জানান। 

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিভিন্ন পেশার প্রবাসী বাংলাদেশিরাও আলোচনায় অংশ নেন এবং দূতাবাসের পরিষেবা আরো উন্নত করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান শামীমা ইয়াসমিন স্মৃতি।

নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট 

‘প্রবাসীদের কল্যাণ, মর্যাদা-আমাদের অঙ্গীকার; স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় তারাও সমান অংশীদার’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে আজ নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে ‘জাতীয় প্রবাসী দিবস-২০২৩’ উদ্যাপন করা হয়। দিনের শুরু থেকেই কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা কনস্যুলেটের অন্যান্য কর্মকর্তাসহ আগত সেবা প্রার্থীদের অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা জানান। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। এ উপলক্ষে ঢাকা থেকে প্রাপ্ত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। 

দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় কনসাল জেনারেল কনস্যুলেটে আগত সব সেবাপ্রার্থীকে জাতীয় প্রবাসী দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার মাধ্যমে বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। নিউইয়র্ক কনস্যুলেট কর্তৃক প্রদত্ত কনস্যুলার ও কল্যাণ সেবার সংখ্যা ও মানের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশ দূতাবাস ও কনস্যুলেটসমূহ প্রবাসীদের দ্রুত সেবা প্রদানে সচেষ্ট ও বদ্ধপরিকর বলে তিনি মন্তব্য করেন। কনসাল জেনারেল আরো বলেন, অভিবাসীরা বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করার পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি কনস্যুলেটে আগতদের বৈধ চ্যানেলে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণের আহ্বান জানান। বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনার বিষয়ে তিনি সবাইকে অবহিত করেন। বাংলাদেশ সরকার প্রবর্তিত পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্যও তিনি সবাইকে অনুরোধ জানান। বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের ধারাকে আরো বেগবান করার জন্য প্রবাসীদের অধিকতর বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রযুক্তি হস্তান্তর, দক্ষতা উন্নয়নসহ-সার্বিক আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ডে আরো জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করেন কনসাল জেনারেল। এ সময় তিনি বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং মূল্যবোধকে নতুন প্রজন্মের কাছে সক্রিয়ভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানান। 

কনস্যুলেটে আগত সেবাপ্রার্থীদের ‘জাতীয় প্রবাসী দিবস-২০২৩’ উপলক্ষে মিষ্টিমুখ করানো হয়। উপস্থিত সেবাপ্রার্থীরাও এ উপলক্ষে তাদের অভিমত এবং অনুভূতি ব্যক্ত করেন। সেবাপ্রার্থীরা কনস্যুলেটের সেবায় তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এ বিশেষ আয়োজনের জন্য কনস্যুলেটকে ধন্যবাদ জানান।

ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাস

দক্ষিণ আমেরিকাতে বাংলাদেশের একমাত্র দূতাবাস, ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়াতে অত্যন্ত আনন্দমুখর পরিবেশে এবং যথাযথ গুরুত্ব সহকারে জাতীয় প্রবাসী দিবস-২০২৩ পালিত হয়েছে। ‘প্রবাসীর কল্যাণ মর্যাদা আমাদের অঙ্গীকার, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় তারাও সমান অংশীদার’-স্লোগানকে উপজীব্য করে স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম জাতীয় প্রবাসী দিবস পালন করছে সরকার। 

অনুষ্ঠানের শুরুতেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সব শহিদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ বুদ্ধিজীবী ও ভাষাশহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জাতীয় প্রবাসী দিবস ২০২৩ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন দূতালয় প্রধান ফুয়াদ হাসান পরাগ। দিবসটি উপলক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত একটি বিশেষ ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়।

রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা তার বক্তব্যে দেশ গঠনে প্রবাসীদের অসামান্য অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে ৩০ ডিসেম্বর তারিখকে জাতীয় প্রবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করায় সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান এবং ১৭০টি দেশে বসবাসরত প্রায় দেড় কোটি প্রবাসীদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

রাষ্ট্রদূত ভূমি ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম, দ্বৈত নাগরিকত্ব ইত্যাদি ছাড়াও সব প্রকার ডিজিটালাইজড কনসুলার সেবা সম্পর্কে ধারণা দেন এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রবাসীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়। রাষ্ট্রদূত এ সময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থ সংরক্ষণে সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ বিশেষ করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেন। দক্ষিণ আমেরিকাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আরো অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত উপস্থিত প্রবাসীদের তাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন এবং ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, পর্তুগিজ ও স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষালাভের মাধ্যমে দক্ষিণ আমেরিকাতে কর্মসংস্থানের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

আমন্ত্রিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সমবেতভাবে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে দূতাবাস কর্তৃক আয়োজন সমাপ্ত হয়।

শেয়ার করুন