২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৫৪:১২ পূর্বাহ্ন


ব্রিকসে সদস্যপদ না পাওয়ার নেপথ্যে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৮-২০২৩
ব্রিকসে সদস্যপদ না পাওয়ার নেপথ্যে


সদ্য সমাপ্ত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়াসহ পাঁচ সদস্যের সংগঠনে পূর্ণ সদস্য হয়নি। এটা বাংলাদেশের ব্যর্থতা কি না সেটি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে। ব্রিকস-এশিয়া, ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকার পাঁচ দেশ  ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার একটি রাজনৈতিক সংগঠন। বহুমত এবং বিপরীতমুখী দর্শনের পাঁচ দেশের এই দেশগুলো সম্মিলিতভাবে বিশ্বের ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত হলেও বিকল্প বাণিজ্যিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এবারের শীর্ষ সম্মেলনে সৌদি আরব, ইরান, ইউএই, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, ইজিপ্ট, ইথিওপিয়া এবং বাংলাদেশসহ ৪০টি দেশ সংস্থাটির সদস্য হওয়ার আবেদন করেছিল। বেশ কয়েকটি দেশ নতুন সদস্য হলেও বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়া এবার সদস্য হয়নি।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে নানা ধরনের প্রচার প্রচারণা চলতে থাকায় ব্রিকস সদস্য না হওয়ার বিষয় নিয়েও নানা কথা হচ্ছে। কেউ বলছেন, ভূরাজনীতির কারণে নিষেধাজ্ঞা পেতে পারে-এমন দেশকে ব্রিকসের সদস্য করা হয়নি। আবার কারো মতে বাংলাদেশ এখনো উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উপনীত হয়নি, বিধায় বাংলাদেশের সদস্য হওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে গেছে। 

যা হোক, বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু এটা নিয়ে একটা তুমুল সমালোচনার ক্ষেত্র তৈরি করে রেখেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। আব্দুল মোমেন কেন বলেছিলেন আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ব্রিকস সদস্য হতে চলেছে। এখন কেন হতে পারেনি তার ব্যাখ্যা হয়তো তার কাছে আছে। বিষয়টি জনসমক্ষে পরিষ্কার করা সমীচীন। তাহলে এটি নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টির অবকাশ থাকবে না। সবাই জানে ভূরাজনীতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বাংলাদেশের পক্ষে এখন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বের সমান্তরাল কোনো জোটে সরাসরি যুক্ত হওয়া কৌশলগতভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না।

কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ অর্থনীতি এবং এক পঞ্চমাংশ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকারী দেশগুলোর সংগঠনে যোগদান বাংলাদেশের ব্জন্য আর্থিক এবং অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক সুবিধা দেবে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামফোসা বলেছেন, ২০২২ সালে  ব্রিকস  সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ১৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দেশগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করেছে।’

বিগত ২০ বছরে ব্রিকস সদস্য দেশগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সংরক্ষণবাদ, নিষেধাজ্ঞা এবং প্রতিক্রিয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এমতাবস্তায় বিকল্প অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সংগঠন হিসেবে ব্রিকস অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ উন্নয়ন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করলে বিশ্ব অর্থনীতি নতুন গতি পাবে। 

বাংলাদেশ পূর্ণ সদস্য হলে ২০২৬ উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ হিসাবে উন্নীত হওয়ার পর ভারত এবং চীনের মতো বিশাল বাজারে আরো সহজে বাণিজ্যের সুযোগ পাবে। বাংলাদেশ কিন্তু ২০২১ থেকেই ব্রিকস নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রাথমিক সদস্য। যদি অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের বিকল্প হিসেবে ব্রিকস মুদ্রার আবির্ভাব বা বিকাশ ঘটে, সেটি বাংলাদেশের মতো বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য অনেক সুবিধা সৃষ্টি  করবে বলে প্রতীয়মান হয়। অদূর ভবিষ্যতে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে স্বল্পসুদে সুবিধাজনক শর্তে ঋত পাওয়া গেলে সেটি বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। সবকিছুই এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় এবং বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা শক্তিগুলো নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করায় বাংলাদেশ এই মুহূর্তে পূর্ণ সদস্য না হওয়াটা ভালো হয়েছে বলে মনে করি। রাশিয়া, ভারত, চীন তিনটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক আছে। ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকাও বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র। দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা উচিত। বড় চ্যালেঞ্জ হলো সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন। যদি সেটি করা সম্ভব না হয়, তাহলে সংগঠনটি বাণিজ্য সংগঠনে রূপান্তর হওয়া কঠিন হবে। এটাও ঠিক, অদূর ভবিষ্যতে অভিন্ন মুদ্রা চালুর বিষয়টি বাস্তবভিত্তিক নয় বলে মনে করি।  

সার্বিক বিবেচনায় এবং বর্তমান বাস্তবতায় ব্রিকসে যোগদান বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না, কেননা এটা রাষ্ট্রীয় ইস্যু। যদিও কিছু বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ বলার চেষ্টা করছেন, বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হয়ে গেলে সেটাকে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের একটা সফলতা হিসেবে প্রচারের সুযোগ পেতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ব্রিকসে বাংলাদেশ সদস্যপদ পেলে সেটা রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের জনগণের কল্যাণ। এখানে ব্যাক্তি বা দলের ক্রেডিটটা কোথায় সেটা বোধগম্য নয়।

শেয়ার করুন