২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০২:১৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী শ্রমিক প্রচণ্ড তাপে শ্রম দেয়
নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৬-২০২৩
মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী শ্রমিক প্রচণ্ড তাপে শ্রম দেয় রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট’র প্রতিবেদন প্রকাশ


মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী কর্মীরা প্রচণ্ড তাপে কাজ করে। এতে করে তাপজনিত নানা রোগে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হন তারা। প্রচন্ড তাপের কারণে তাদের শুধু কিডনিই না, মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকরিতা তিলে তিলে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তাঁদের প্রতি দু’জনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর পেছনে মূল কারণটি পাওয়া যায় না। অনেক ক্ষেত্রে এসব মৃত্যুকে প্রাকৃতিক কারণ বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হিসেবে মৃত্যুসনদ দেওয়া হয়। বিপজ্জনক ঝুঁকি সত্ত্বেও কর্মীদের ওপর তাপের প্রভাব সম্পর্কে কোনো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কাছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব দেশে তাপ আরও বাড়বে। ফলে অতিরিক্ত তাপ মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের মৃত্যুঝুঁকি আরো বাড়বে।

প্রাণঘাতী তাপ: ’উপসাগরীয় অঞ্চলে অভিবাসী কর্মীদের ওপর চরম তাপমাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) রাজধানীর একটি হোটেলে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সম্প্রতি। রামরুর এবং অভিবাসন ও উন্নয়নবিষয়ক বাংলাদেশ সংসদীয় ককাস যৌথভাবে এটি আয়োজন করেছে।

প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন রামরুর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে বড় বিষয়। এতে অভিবাসী শ্রমিকেরা বড়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তাঁদের চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত হয়নি।  এদিকে কর্মীদের আবাসন, পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে রামরুর প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, লাখো প্রবাসী কর্মী মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, তাই তাদের সুরক্ষায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর তদন্ত প্রক্রিয়া উন্নত করতে হবে। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা। তাপ থেকে সুরক্ষার জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাতে হবে।

এদিকে রামরুর প্রতিবেদনে বলা হয়, উপসাগরীয় অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) ছয়টি দেশে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে বছরে ১০ হাজার প্রবাসী মারা যান। তাঁদের প্রতি দুজনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণ বিস্তারিতভাবে কার্যকরভাবে ব্যাখ্যা দেয়া হয় না। প্রাকৃতিক কারণ বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হিসেবে মৃত্যৃসনদ দিয়ে চালিয়ে দেয়া হয়। বিপজ্জনক ঝুঁকি সত্ত্বেও কর্মীদের ওপর তাপের প্রভাব সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। তাপসংক্রান্ত কারণে প্রাণহানি বা কোনো মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্যের কোনো নিবন্ধন নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয় চরম তাপ ও সূর্যালোকে দীর্ঘ সময় কাজ দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে পরিচালিত করে, যার জন্য আজীবন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এর ফলে অকালমৃত্যু ও অক্ষমতা হয়। দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি শরীরে ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করে এবং শ্বাসতন্ত্র ও হৃদরোগ, বহুমূত্র রোগ, কিডনি রোগের প্রভাবকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। কুয়েতের একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গ্রীষ্মের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির জন্য ঝুঁকি গড়ে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

অনুষ্ঠানে সৌদি আরবে চিকিৎসক হিসেবে মো. মনিরুল ইসলাম ৩৩ বছর কাজ করার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন তিনি। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, হৃদ-যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়েই মানুষ মারা যান। এটা মৃত্যুর কারণ নয়। এর পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। কিন্তু সেই কারণ মৃত্যুর সনদে দেয়া হয় না। অন্যদিকে অব্যক্ত মৃত্যুর উচ্চহারও উপসাগরে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে অভিবাসী শ্রমিকরা যে পদ্ধতিগত বাঁধার সম্মুখীন হন, তার একটি কারণ। যেমনটি পূর্বে ভাইটাল সাইন্স পার্টনারশিপ তার দ্বিতীয় প্রতিবেদনে নথিভুক্ত করেছে।

সংসদীয় ককাসের সদস্য ও সংসদ সদস্য খোদেজা নাসরিন আক্তার বলেন, অধিকাংশ কর্মী বিদেশে যান দালালের মাধ্যমে। গিয়ে তাঁরা আর কোনো সহযোগিতা পান না। মধ্যপ্রাচ্যের অসহনীয় গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে প্রবাসীরা জীবন যাপন করছেন। 

বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন অনুষ্ঠানে বলেন, নারী কর্মীরা মানসিক চাপ নিয়েই যান। তাঁদের কর্মস্থলে থাকার জায়গা ভালো নয়। পুষ্টিকর খাবার পান না। প্রবাসে মৃত্যুর যথাযথ কারণ জানা যায় না, দূতাবাস সহায়তা করে না বলে। অথচ সৌদি আরবে মৃত্যুসনদের জন্য হাসপাতালের ফরমে সব ধরনের তথ্য দেওয়া থাকে। সব কারণ বলা থাকে। এ কারণ জানার অধিকার সবার আছে। তাই দূতাবাসের উচিত এটা পরিষ্কার করে জানানো।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগের দিলদার হোসেন বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে পানির দাম বেশি। কর্মীরা পানি কম খান। আবার কাজের চাপে হয়তো সময়ও পান না। কিন্তু প্রচুর ঘাম হয়। এতে শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হয়। কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আবার অনেকে নানান কারণে নিয়মিত প্রস্রাব না করায় সংক্রমণ হয়।

শেয়ার করুন