২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:১১:৫৩ পূর্বাহ্ন


২০২২-২৩ বাজেটে ভর্তুকি নির্ধারণ সুবিবেচনাপ্রসূত বাঞ্ছনীয়
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৫-২০২২
২০২২-২৩ বাজেটে ভর্তুকি নির্ধারণ   সুবিবেচনাপ্রসূত বাঞ্ছনীয়


বিশ্বব্যাপী  মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি সংকট, খাদ্য সংকট,আর্থিক মন্দার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ২০২২-২৩ বাজেট প্রণয়ন আর বাস্তবায়নে গভীর চিন্তার অবকাশ আছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি মূল্য আকাশছোঁয়া, সহসা কমার স্বভাবনা নেই বললে চলে।  জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়িয়েছে। আর এই দুটির কারণে শিল্পখাত ও কৃষিখাত উৎপাদন হুমকিতে। 

আন্তর্জাতিক বাজারে কৃষির জন্য অপরিহার্য স্যারের মূল্য তরতরিয়ে বেড়েছে। যুদ্ধলিপ্ত ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে সার রফতানি সীমিত হয়ে গাছে। বাংলাদেশের এখন উভয় সংকট। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূলের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন বিপর্যস্ত।  এই মুহূর্তে গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি জনগণের জন্য ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হবে।

ওদিকে সারের মূল্য বৃদ্ধি করলে কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিকল্প হলো আমদানি শুল্ক, ভ্যাট কমানো এবং ভর্তুকি বাড়ানো। আমদানি শুল্ক আর ভ্যাট কমালে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব  সংগ্রহ সীমিত হবে। ভর্তুকি বাড়ালে অন্যান্য খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একটি সমীক্ষায় দেখা গাছে মূল্য না বাড়ালে বিদ্যুৎখাতে ১৮ হাজার কোটি, গ্যাস ১৭ হাজার ৩শ কোটি এবং সার ১৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এখানে সরকারকে মুন্সিয়ানার ছাপ রাখতে হবে। তাকে মানে সরকারকে কাপড় বুঝে কোট কাটতে হবে। 

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাস এবং বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির গণশুনানি করে ফেলেছে। বিশ্ববাজারে এলএনজি/গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পরিপেক্ষিতে পেট্রোবাংলা কোম্পানিসমূহের ১১৭ শতাংশ গ্যাস মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে রেগুলেটরি কমিশনের কারিগরি কমিটি ২০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা খুঁজে পেয়েছে। 

ভোক্তাদের সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বিস্তারিত অ্যানালাইসিস করে দেখিয়েছে গ্যাস সিস্টেমে বিদ্যমান চুরি অপচয় রড এবং ব্যাবহারে দক্ষতা নিশ্চিত হলে মূল্য বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে না। কিছুটা শুল্ক ছাড় এবং ভর্তুকি বৃদ্ধি করলেই গ্যাস মূল্য বৃদ্ধি প্রয়োজন হবে না। 

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি না হলে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির চাপ সীমিত হবে। সে ক্ষেত্রে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসার প্রেক্ষিতে খরুচে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তি ধীরে ধীরে বাতিল করতে হবে।  গ্রিড বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্রমাগত নির্ভর যোগ্য হয়ে আসায় ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুতে দিতে হবে। তার পরেও বিদ্যুতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে সহনীয় মাত্রায়। খাদ্য উৎপাদনে সরাসরি সম্পৃক্ত সার খাতে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি বাড়ানো ছাড়া গত্যন্তর নেই। 

একটি কথা ইদানীং সুশীল সমাজের একটি অংশ বলছেন জ্বালানি এবং বিদ্যুৎকোম্পনিগুলো সেবা সংস্থা বিবেচনায় নো-লস নো-প্রোফিটভিত্তিতে পরিচালিত হতে হবে। ধারণাটি কিন্তু পুরোপুরি সঠিক না। গ্যাস কোম্পানিগুলোর কোথায়ই ধরুন। এগুলো কিন্তু কোম্পানি আইনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। এগুলোকে সরকারি হাসপাতালগুলোর মতো দাতব্য প্রতিষ্ঠান ভাবা সঙ্গত হবে না। অনেক কোম্পানি আবার স্টক এক্সচেঞ্জ রেজিস্ট্রিকৃত। শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দিতে হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারিদের লাভের অংশ দিতে হয়। কোম্পানিগুলোকে সীমিত লাভ করেই টিকে থাকতে হবে। 

তবে অবশ্যই গ্যাস এবং বিদ্যুৎকোম্পানিগুলোকে চুরি, সিস্টেম লস, অপচয়, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে কৃচ্ছ্রতাসাধন করতে হবে। গ্যাস বিদ্যুৎ কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিদেশ ভ্রমণ স্থগিত  করা, যানবাহন ক্রয় বন্ধ করায় সাশ্রয় হবে। প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন কাজ নিবিড় তদারকির মাধ্যমে খরচ সীমিত রাখতে হবে। যানবাহন অপব্যাবহার বন্ধ করতে হবে। 

মনে রাখতে হবে, মূল্য বৃদ্ধি হলে মুদ্রাস্ফীতি হবে। ২০২৩ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারে বিলাসী বাজেট করার কোনো অবকাল নেই। আশা করি, সকল পর্যায়ে শুভবুদ্ধির উদয় হবে।


শেয়ার করুন