২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:২৮:১৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


কথা বলতে না পেরে আ. লীগের তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ হতাশ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৮-২০২৩
কথা বলতে না পেরে আ. লীগের তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ হতাশ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত তুলে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


বর্ধিত সভায় দুঃখ, কষ্ট ও ক্ষোভের পাশাপাশি মন্ত্রী এমপি’র দাপটের কথা আরো খোলামেলাভাবে প্রকাশ করতে না পেরে হতাশ হয়েছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা। এছাড়া রাজধানীর পাশাপাশি শহরে বসে নিজের মতো করে দল পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে খোদ শীর্ষ পর্যায় থেকে কঠোর ব্যবস্থার আশ্বাসের বদলে পাশ কাটিয়ে অন্যরকম বক্তব্য দেয়াতেও ক্ষুদ্ধ হয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। বর্ধিত সভায় যোগ দিতে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে আসা তৃণমূলের নেতাদের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলেন এসব তথ্য পাওয়া গেছে।  

কড়া নির্দেশে হতাশ তৃণমূলের নেতারা

চলতি সপ্তাহের ৬ আগস্ট রোববার গণভবনে হয়ে গেলো দেশের ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা। সভায় সারা দেশ থেকে আসেন দলের শীর্ষ নেতারা। প্রায় ৫ হাজার নেতা এ সভায় অংশ নেন বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়। গণভবন চত্বরের মাঠে বর্ধিত সভার মঞ্চ ছাড়াও তৃণমূল নেতাদের জন্য বিভাগওয়ারি প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছিল। আটটি বিভাগের নেতাদের জন্য আলাদা প্যান্ডেল ছিল। দলের জাতীয় কমিটি, কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ছাড়াও জেলা-মহানগর ও উপজেলা-থানা-পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং দলের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সভায় যোগ দেন। প্রায় পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত এই বিশেষ বর্ধিত সভা ঘিরে দলটির তৃণমূল নেতাদের পদচারণায় গণভবন চত্বর মুখরিত হয়ে ওঠে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সভায় তৃণমূলের ৪৩ জন নেতা বক্তব্য রাখতে পেরেছেন। এসব নেতাদের বক্তব্যে তৃণমূলের সঙ্গে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি এসব অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দূরুত্বের প্রসঙ্গে খোলামেলাভাবে উঠে আসার কথা থাকলে তা সম্ভব হয়নি অদৃশ্য কারণে। অনেকের বক্তব্যে শুধু আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্তক হতে বলা হলেও, বিভিন্ন কারণে দায়ী নেতারা কিভাবে কাদের নিয়ে এলাকায় দল পরিচালনা করছে তা স্পস্টভাবে উঠে আসেনি।  অনেকে অভিযোগ করেছেন, তারা বর্ধিত সভায় এসে দেখেন যাদের বিরুদ্ধে অর্থ্যাৎ এলকার যেসব জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে কথা বলবেন তাদেকে দেখা গেছে দলের শীর্ষদের সাথে ভালোই সু-সম্পক বজায় রেখেছেন। মাঠে এলাকার এসব বিতর্কিত জনপ্রতিনিধিরা যে রাজধানীতে ভালো প্রভাব বজায় রাখতে পারছেন এমন দৃশ্য দেখে তৃণমূলের নেতারা আগ বাড়িয়ে বেশি কিছু বলতে আগ্রহী হননি এবারের বর্ধিত সভায়। তাছাড়া যাকে মনোনয়ন তাকে ভোটে জিতিয়ে আনতে হবে-এমন কড়া নির্দেশে হতাশ হয়েছে তনমূলের নেতারা। যদিও বর্ধিত সভার সমাপনী বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐক্যের ওপর জোর দিয়েছেন। দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, তিনি তাঁর পক্ষে থাকার বিষয়ে হাত তুলে ওয়াদা করিয়েছেন সবাইকে। তারপরে ক্ষোভ কাটেনি বলে জানা গেছে বিভিন্ন নেতার সাথে কথা বলে। তাদের মতে, এলাকার বিতর্কিত জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি হাইব্রিডদের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি বা ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে বরাবরে মতো চেপে যাওয়ায় ব্যাপারে শীর্ষ নেতার ভূমিকায় তৃণমূল ভীষণভাবে হতাশ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের একজন নেতা গাজীপুরের নির্বাচনের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন দেশ প্রতিনিধিকে। তিনি বলেন, তৃণমূলের মতামতকে উপক্ষোর পাশাপাশি তথাকথিত জরিপের ধুয়া তুলে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে তিনি জয় ছিনিয়ে আনতে পারেননি। এখানে গত মে মাসে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাঁর পরাজয়ের পেছনে দলীয় কোন্দলের চেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত তথা তৃণমূলকে অগ্রাহ্য করাকে দায়ি বলে মনে করেন তিনি। যদিও শীর্ষ পর্যায় থেকে আশ্বস্থ করা হয় যে, মনোনয়ন ঠিক করতে প্রতি ছয় মাস পরপর জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে। তৃণমূলের অনেকেই মনে করেন বর্তমান মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের অনেককেই নিজ আসনের ভোটাররা পছন্দ করেন না। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটে জয় পেতে হলে জরিপের দোহাই দিয়ে যেন যেনতেন প্রার্থী না দেওয়া হয়। 

তৃণমূলের ভূমিকাও অগ্রাহ্য ..

তৃণমূলের নেতাদের মতে, রাজনৈতিক মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি শক্তিশালি অবস্থান নিয়ে ফেলেছে। বলা চলে মাঠের সব বিরোধী দলকেই তারা এক কাতারে নিয়ে এনেছে।  ভেদাভেদ ভুলে তারা এখন ঐকবদ্ধ। কিন্তু তৃণমূলে আওয়ামী লীগের সঙ্কট প্রকট। এমনকি খোদ দলের সাধারণ সম্পাদকের এলাকাতেও আওয়ামী লীগরে অবস্থান নড়বড়ে। তাদের অভিযোগ শহরে বসে দল চালায় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা। নেতাদের মতে, আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি মাঠের প্রধান দল বিএনপিসহ বিরোধী দলকে মোকবেলায় তৃণমূলের ভূমিকাও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এব্যাপারে তৃণমূল যে কি ভূমিকা রাখতে পারে তার বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেয়া হয়নি এই বর্ধিত সভায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তৃণমূল নেতা এই প্রতিনিধিকে জানান, বর্ধিত সভায় তৃণমূলের নেতারা যদি তাদের দুঃখ, ক্ষোভ  অভাব অভিযোগের সামান্য কিছুটা যদিও প্রকাশ করতে পারতো তাহলেও হয়তো তাদের কষ্ট কিছুটা প্রশমন হয়তো হতো। বরং একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ স্ক্যান্ডাল যেনো দলের শীর্ষ পর্যায়ে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে না পাঠানো হয় - সে ব্যাপারে জানিয়ে দেয়াটিও তৃণমূলে নেতাদের মনে দাগ কেটেছে। 

শেষ কথা..

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে একক প্রার্থী রাখা কঠিন হবে তৃণমূলের অসন্তোষের কারণে। এক্ষেত্রে তখন দলের ভেতর থেকেই একাধিক নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়িয়ে যেতে পারে। তাছাড়া বিএনপি যেভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে মাঠ দাবড়িয়ে বেরাচ্ছে, তা মোকাবেলায়ও আওয়ামী লীগকে তৃণমূলের অসন্তোষ দূর করতে হবে। তা না হলে রাজনৈতিক ময়দান নিমিষেই বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোটের হাতে চলে যেতে পারে। আবার অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করাও কঠিন হবে না, যতোই যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী দেয়া হোক না কেনো।

শেয়ার করুন