০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ১১:০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন


উপজেলা নির্বাচনে বিএনপিকে রাজি করাতে মরিয়া আ.লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০২-২০২৪
উপজেলা নির্বাচনে বিএনপিকে রাজি করাতে মরিয়া আ.লীগ


এবছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ দেশের রাজনৈতিক দলের বড় একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সে-ই নির্বাচন শেষ-মেষ সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবে আমেরিকাসহ পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলি বলেছে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনের পরপরই বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড অনুযায়ী হয়নি বলে অভিমত দিয়েছে যুক্তরাজ্য। 

এধরনের পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক অঙ্গনে যতই উচ্চবাচ্য করুক না কেনো তারাও বিষয়টি নিয়ে বড়োই বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে। আর সে-ই বিব্রতকর অবস্থা থেকে রেহাইয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইমেজ ফিরে পেতে বিভিন্ন কৌশল নিয়েছে। প্রথম কৌশল হচ্ছে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি’কে অংশ নিতে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেয়া হচ্ছে। কেননা আওয়ামী লীগ মনে করে বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে কিছুটা রেহাই মিলবে। বলা যাবে ভবিষ্যতে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ আসলে পশ্চিমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট হবে ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে ১১ মে, তৃতীয় ধাপের ভোট হবে ১৮ মে এবং চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ২৫ মে। সারাদেশে উপজেলা পরিষদ আছে ৪৯৫টি। সাধারণত একাধিক ধাপে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারও ধাপে ধাপে এই নির্বাচন করার চিন্তা করছে ইসি। 

বিএনপি কি অংশ নেবে?

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই নির্বাচনে কি বিএনপি অংশ নেবে? এখনো পর্যন্ত উপজেরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে বিএনপি জোরালো বা অফিসিয়ালি কিছু বলেনি। সর্বশেষ খবর পর্যন্ত জানা গেছে, বিএনপি উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নেবে না। অন্যদিকে বিএনপি’র সাথে সমমনাদেরেও একিই মত। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ মহলে নেই উদ্বেগ আছে অস্বস্তি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি’কে এই নির্বাচনে টেনে আনতে বেশ তৎপর। এজন্য প্রথম টোপটি দেয়া হয়েছে এই বলে যে এবার উপজেলা নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রতীক থাকবে না। এর পক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছে এটা রাষ্ট্রীয় নির্বাচন নয়। এলাকাভিত্তিক নির্বাচন। এখানে মানুষ এলাকার লোককে নির্বাচিত করবেন, পুরো জাতির জন্য নয়।

স্থানীয় সরকার তার নির্ধারিত এলাকা জনশাসন পরিচালনা করে থাকে। তার সীমিত ক্ষমতা থাকে। কিন্তু আসলে এর পেছনে অন্য কারণ রয়েছে। তা হলো একদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে নিজেদের মধ্যে যে অসন্তোষ বিরাজ করছে তা থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে দলীয় প্রতীক ছাড়া আয়োজন করা হলে। অন্যটি হচ্ছে এই নির্বাচনকে রাষ্ট্রীয় নির্বাচন নয় ও এর পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক নির্বাচন বলে প্রচার করে বিএনপি’কে অংশ নিতে এতে টেনে আনা বা প্রলুব্ধ করা। আর এতে করে ক্ষমতাসীনরা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারবে। কিন্তু এসব ব্যাপারে বিএনপি বেশ কয়েকজন নেতা দেশ প্রতিনিধিকে বলেন, এসরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই বিএনপি অংশ নিয়ে জয়লাভের জন্য ন্যূনতম সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে না। কেননা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসীন হতে পারায় প্রশাসন এখন বেশি আস্থাশীল ও আজ্ঞাবহ হয়ে আছে। তাই আওয়ামী লীগের আর্শীবাদের বাইরে অবস্থান করে কোনোভাবেই উপজেলা নির্বাচনটিতে জয়ী হওয়া যাবে না-এটা তারা নিশ্চিত। তবে আওয়ামী লীগের একজন নেতা এই প্রতিবেদককে তার অন্য অভিমত জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন পুরো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। এই অবস্থায় উপজেলা নির্বাচন নিয়ে হাই কমান্ড দলীয় ইন্টারেস্ট গুরুত্ব দেবে না। তবে দলীয় পরিচয় বাদ দিলেও আওয়ামী লীগের বাইরে আদৌ কোনো প্রাথী জয়ী হবে কি-না সে সন্দেহ তার মধ্যেও আছে। তার মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এলাকায় খবরদাবি হারিয়েছে। উপজেলা নির্বাচন সে-ই প্রভাব ধরে রাখতে তাদেরই পছন্দমত প্রার্থীকে জয়ী করাতে সব ধরনের তৎপরতা থাকবে। সেক্ষেত্রে বিএনপি বা অন্য দলের প্রার্থী কতটা জয়ী হওযার সুযোগ পাবে সেব্যাপারে সন্দিহান সে-ও। 

শেষ কথা

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে। তাই যেকোনো মূল্যে তারা বিএনপি’কে এই নির্বাচনে অংশ নেয়াতে মরিয়া হয়ে আছে। সরকার যে কতটা বিব্রত সর্বশেষ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যেও উঠে এসেছে। পাকিস্তানের নির্বাচনের প্রশংসা করতে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমি খুব বেশি বলতে চাই না, হয়তো পাকিস্তানের দৃষ্টান্তটা এসে যেতে পারে। সেখানেও একটা নির্বাচন, এটা বেশ সাড়া জাগানো নির্বাচন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে কোনো রকম প্রতীক ছাড়া বা বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে। তার এই বক্তব্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের অস্বস্তির একটা চিত্র প্রকাশ পায়। অন্যদিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কঠিন মন্তব্য করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এর বিপরীতে কোনো ধরনের প্রতিবাদ বা উচ্চবাচ্য করেননি। অন্যদিকে ১২ ফেব্রুয়ারি সোমবার সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পরিস্থিতি কখন কি হয় বলা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কী হবে সেটি বোঝা যাচ্ছে না। সবকিছু মিলে ২০২৪ সালে কী রেজাল্ট হচ্ছে তা বলা যাচ্ছে না- এমন বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। সব মিলিয়ে এযাত্রায় উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকবে না- আওয়াজ দিয়ে যদি এতে (উপজেলা নির্বাচনে) বিএনপি’কে টেনে আনা যায় তাহলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সব কুলই রক্ষায় পায়। আর একারণেই উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি’কে রাজি করাতে মরিয়া আ.লীগ।

শেয়ার করুন