০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০২:৪৩:৫৭ পূর্বাহ্ন


রাজনীতির মাঠে জামায়াতের লুকোচুরির নেপথ্যে কি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৯-২০২৩
রাজনীতির মাঠে জামায়াতের লুকোচুরির নেপথ্যে কি


একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রাজধানীর দেওয়ার জুড়ে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। পোস্টারের মূল বক্তব্য হচ্ছে একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী দল জামায়াত এখন বিএনপি’র ছত্রচ্ছায়ায় দেশে তাণ্ডব চালাতে চেষ্ট করছে। আর এজন্য সকলকে সর্তক থাকতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতারা সর্তক থাকতে আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কারা এখন একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবিরকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায়, বর্তমানে জামায়াতকে সামনে নিয়ে আসছে আওয়ামী লীগই। বিএনপি’ক সমঝোতা বা পাতানোর নির্বাচনে অংশগ্রহণে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়ে স্বাধীনতা বিরোধী দল জামায়াতকেই কাছে টেনে নিয়েছে আওয়ামী লীগ-এমনটাই বাজারে ভেসে বেরাচ্ছে। আর একারণেই বর্তমানে জামায়াতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হচ্ছে। 

অতীত কথা..

১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। আরো কয়েকজন এখনো সাজা খাটছেন। কিন্তু জামায়াতের বিরুদ্ধে এমন কঠোর পদক্ষেপ কয়েকজনকে ফাঁসির মধ্যেই থেমে থাকেনি। দলটিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মাঠেই নামতে দেয়নি। গ্রেফতার মামলা মোক্কাদমায় দলটির নেতাকর্মীদের বলা চলে মাঠে নামরই সুযোগ ছিল না..

কিন্তু অবস্থা পাল্টে গেছে...

এবছর ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সমাবেশ করে।  ঘরোয়া এই কর্মসূচির জন্য দলটিকে মিলনায়তনের বাইরে জড়ো না হওয়াসহ বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হলে তা রক্ষা করেনি দলটি । কিন্তু তাতেও আওয়ামী লীগ নিরব থেকেছে।  দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, দলের আমির শফিকুর রহমানসহ রাজনৈতিক নেতা ও আলেমদের মুক্তি এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এ সমাবেশ করছে। এই জামায়াত পুলিশের অনুমতি নিয়ে তারা সর্বশেষ বিক্ষোভ মিছিল করেছিল ঢাকার মতিঝিলে ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারিতে। আর তারপরে দলটির কোনো সভা সমাবেশতো দূরে থাক দুই একজন ঘরে বসে বৈঠক করলে পুলিশে অভিযানে গ্রেফতার হতে হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের। সেই জামায়াত এই আওয়ামী লীগের আমলে ১০ বছরের বেশি সময় পর ঢাকায় কর্মসূচি পালনের অনুমতি পেল। এর আগে ৫ জুন রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকেছিল জামায়াত। 

ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্মসূচির অনুমতি দেয়নি। অনুমতি চাইতে গেলে দলের চার আইনজীবী নেতাকে আটকও করা হয়। অনুমতি না দেওয়ার কারণ হিসেবে পুলিশ জানিয়েছিল, সাপ্তাহিক কর্মদিবসে সমাবেশ করলে যানজটসহ জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হবে। পরে জামায়াত কর্মসূচি স্থগিত করে ১০ জুন বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করার জন্য আবেদন করে। পুলিশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুমতি দেয়। যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনো পর্যন্ত বেশ বির্তক চলছে। এসময়ে সরকারের পক্ষ থেকে জামায়াতের ব্যাপারে অনেক ইতিবাচক বক্তব্যও হতাাশ করেছে অনেককে। 

আবারো মাঠে জামায়াত..

গত ১০ জুন বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করার পর থেকে বির্তক যেনো ছাড়ছিল না সরকারের ভ’মিকা নিয়ে। কম-বেশি সব ক’টি গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হতে থাকে আওয়ামী লীগ জামায়াত আঁতাত হচ্ছে। এমনও কথা প্রচার পেতে থাকে যে জামায়াত আওয়ামী লীগের অধীনেই বিএনপি’কে ছাড়াই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। আর এমন বির্তকের পর জামায়াত কিছুটা নিবর থাকে। অবশ্য এমন নিরবতার পেছনে অন্য কারণও ছিল। কেননা এই সময়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছিল জামায়াতের নিবন্ধন ইস্যুতে আপিল শুনানির ছিল ১০ আগস্ট। জানা গিয়েছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদন শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) রয়েছে। আর এজন্য নিবন্ধন ইস্যুতে আপিল শুনানির দিনই দলটিকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে-এমন আশঙ্কা বিরাজ করছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। আর এর আগে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে ধরপাকড়ের শিকার হতে পারে বলেই তাদের মধ্যে আশঙ্কা। কিন্তু সেদিন শুনানি হয়নি। এরপর শোনা যায় যে,  জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলটির রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনের শুনানি হবে আগামী ৩১ আগস্ট।

ওই দিন জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে করা আদালত অবমাননার আবেদনেরও শুনানি হবে। কিন্তু তারপরে আর খবর পাওয়া যায়নি। বরং দেশজুড়ে একের পর এক খবর প্রকাশিত হতে থাকে যে জামায়াত রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে মিছিল করে যাচ্ছে। খোদ রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর। সম্প্রতি বসুন্ধরা গেইট থেকে বারিধারা মাদ্রাসা পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন দলটির নেতাকর্মীরা। দলের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় বাধা, দেশের বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজায় হামলা, সারাদেশে কয়েকশ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং জামায়াত আমির শফিকুর রহমান, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনসহ গ্রেফতার সব নেতাকর্মী ও আলেমা-ওলামার মুক্তি এবং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে রাজধানীতে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে জামায়াত।

শেষ কথা..

জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধেরও দাবি আছে বিভিন্ন মহলের। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিচার, দন্ড কার্যকর করাসহ সার্বিক প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর স্বাভাবিক কার্যক্রম বলা চলে দেখাই যায়নি। সেই দলটি এখন ঘন ঘন মাঠে মাঠছে? কি রহস্য এর পেছেনে? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  বিএনপি’কে কোনঠাসা ও একলা প্রমাণ করতে জামায়াতের সাথে নয়া দোস্তী পেতেছে আওয়ামী লীগ। যদিও প্রতিবেশী দেশ ভারত বিভিন্নভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে জামায়াতকে নিয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বা পর্দার আড়ালে খেলাধুলার বিরুদ্ধে সোচ্চার বলেই জানা গেছে। সম্প্রতি তরিকত ফেডারেশনে চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সর্তক করে দিয়ে বলেছেন জামায়াতকে নিয়ে কোনো ধরনের খেলাধুলার ব্যাপারে ভারত নাখোশ। কিন্তু তারপরেও বিএনপি’কে কোণঠাসা ও বেকায়দয়ায় ফেলতে আওয়ামী লীগের জামায়াতী দোস্তী কোথায় নিয়ে ঠেকে তা সময় বলে দেবে। তবে এর জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বড়ো ধরনের মাসুল দিতে হতে পারে- এমনটাই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।

শেয়ার করুন