২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৭:১১:৪৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


হট ইস্যুতে রূপান্তরিত ‘তত্ত্বাবধায়ক’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৮-২০২৩
হট ইস্যুতে রূপান্তরিত ‘তত্ত্বাবধায়ক’


বাংলাদেশের রাজনীতি দুই ধারাতে বিদ্যমান।  যে যেভাবে বলুক, সবযুক্তিতর্ক শেষে এর এক ধারাতে পড়বে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দুই মেরুর দুই দল। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ওই দুই ধারা আরো স্পষ্ট। এবার আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কী ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের অধীন হবে নাকি চলমান ধারায় (সংবিধান অনুসারে) অনুষ্ঠিত হবে। আরেকটু সংক্ষেপ করে বললে তত্ত্বাবধায়ক চাই, তত্ত্বাবধায়ক চাই না। বিএনপি চায়, আওয়ামী লীগ চায় না। 

বাংলাদেশে এটা আর গোপন নেই। মানুষও প্রকাশ করছেন। বুঝিয়ে দেন ইশারা ইঙ্গিতে। যে কতটুকু রাকঢাক তা শাসক দলের ভয়ে, যদি কোনো আইনশৃঙ্খলার মারপ্যাঁচে পড়তে হয়! এতো গেল দেশের মানুষ, বুদ্ধিজীবী বা রাজনীতিবিদদের কথা। সাধারণে দৃষ্টি বিদেশিদের পানেও। বিদেশিরা কে তত্ত্বাবধায়ক চান, কে চান না। যদিও এটা বিদেশিদের ইস্যু নয়। তারা কোনো সময় এসব নিয়ে কথা বলেন না। তবে প্রকারান্তে বলেনও। অতীতে একটি বন্ধুপ্রতিম দেশের এমন প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত হওয়ার কথা এখনো বিভিন্ন রেফারেন্সে আসে। তারা বলেছিলেন, সে সময়ের রাজনীতির ধারায় নির্বাচনে যেতে হবে সবাইকে। সবার যাওয়া উচিতও। কিন্তু এ উদ্যোগটা ওই ফরমুলায় ফেলে এখনো দোষের বোঝা চাপানো হয় একতরফা এক নির্বাচন সমর্থনের অভিযোগে। 

দীর্ঘদিন থেকে তত্ত্বাবধায়ক চাই, দিতে হবে। অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক আর ফিরবে না, ওটা মরে গেছে এ বিতর্ক বাংলাদেশের রাজনীতিতে। বাংলাদেশে চলমান যে আন্দোলন সেটাতেও ওই একটি ইস্যু। বিদেশিরা বাংলাদেশে যে একটা সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছেন সেটার আড়ালেও ব্যাপক অর্থ খুঁজলে দেখা যাবে তত্ত্বাবধায়ককে সমর্থন করছেন তারাও। কারণ বর্তমান সরকারের অধীনে গত দুটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেটাতে অংশ নেয়নি দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এতে বিনা ভোটে পাস হয়ে যাওয়ার নজির স্থাপন হয়েছে দেড় শতাধিক সংসদ সদস্যের। অভিযোগ আছে, দিনের ভোট রাতে অনুষ্ঠিত হওয়ার। ওই দুই জাতীয় সংসদ ছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ের যে সব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলোও অলমোস্ট একতরফা। প্রধান বিরোধী দল ছাড়া। ফলে ভোটে আর আস্থা নেই মানুষের। ভোট দিতে যান না খোদ ক্ষমতাসীন দলের লোকেরাও। নতুবা সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা-১৭ উপনির্বাচন ও চট্টগ্রামের একটি উপনির্বাচনে ১২ শতাংশের আশপাশে রয়েছে ভোটদানের। 

বিদেশিরা বলছেন, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভোটারদের ভোটদানের সুযোগ করে দিতে হবে, যাতে নিজের ভোট নিজে দিয়ে তাদের প্রতিনিধি বাছাই করে নিতে পারেন। মূলকথা এ একটাই। যে আস্থা ফেরাতে ওই এক তত্ত্ববধায়ক ফরমুলার কথাই উঠে আসছে।  

তবু বিদেশি দেশসমূহ বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যারা প্রভাব বিস্তার করেন একটু বেশি তারা কি বলছেন এ ব্যাপারে এ কথা শুনতে বা অনুমান করতে চোখ কান খাঁড়া বাংলাদেশের মানুষের। এর বাইরেও কোনো ভিনদেশি দেশে সফরে এলেও প্রথমই যে কথাটা জানতে চান সবাই, তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে কী কিছু বলেছেন? ভাবটা এমন ওই একটা ইস্যুই সব, অন্যসব গুরুত্বহীন। 

তবে এখন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে কেউই কথা বলেনি। 

এ ব্যাপারে অনেকেই ভারতের দিকে দৃষ্টি দিয়ে রেখেছিল। কী বলতে চান তারা। তাদের মনোভাব কী। এর একটা উত্তর মিলেছে অতিসম্প্রতি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সে দেশের এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন প্রভাব আমাদের (ভারত) ওপরও এসে পড়ে। তবে সে দেশে কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে সেটা সে দেশের জনগণ ঠিক করবেন। অনেকেই শুনতে চেয়েছিলেন, ভারত কী টেকনিক্যালি হলেও এটুকু বলে কি না যে বাংলাদেশের নির্বাচন হবে সে দেশের সংবিধান অনুসারে। অর্থাৎ বর্তমান সরকারের অধীন। যা ক্ষমতাসীন দল প্রত্যাশা করে চলছে। 

না! ভারত সেটা বলেনি। খুব স্পষ্ট করে বলেছেন এবং জনগণের সিদ্ধান্তের ওপর তাদের আস্থার কথা জানিয়েছেন। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে তার সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৬ সদস্যের একটি দল। সেখানেও পিটার হাসের কাছে প্রশ্ন থাকলেও সে বিষয়টি এড়িয়ে যান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্পষ্ট করে বলেন, ওনার সঙ্গে অনেক কথা বলেও উনি ‘তত্ত্বাবধায়ক’ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। বিশ্লেষকরা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে কথা না বললেও পিটার হাসের নির্দেশনা বা উপদেশ ওই তত্ত্বাবধায়ককেই প্রকারান্তে সমার্থন করে। 

চীন সফরে আওয়ামী লীগের শরিক তিন বাম নেতার নেতৃত্বে একটি দল সম্প্রতি সফর করে আসে চীন। চলতি মাসের গোড়ার দিকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে যে প্রতিক্রিয়া তাদের, সেখানেও প্রত্যাশা করছে চীনের প্রবল সমর্থন। কিন্তু দেশে ফিরে বাম নেতারা যা বলেছেন, তাতে সেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা। সফরকারি একজন স্পষ্ট করেই বলেছেন, ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার প্রতি তাদের সাপোর্ট অব্যাহত থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা হস্তক্ষেপ করবেন না। একই সঙ্গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে পশ্চিমাদের যে নাক গলানোর বিষয়, এটাও তারা পছন্দ করেন না।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ভারত সফরে গেছে ৭ আগস্ট সোমবার। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের এই সফর। জানা গেছে, তিন দিনের এই সফরে প্রতিনিধিদলটি ভারতের সরকার ও বিজেপির প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে মিলিত হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এই প্রতিনিধিদলে রয়েছেন দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জাহান ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত।

বলা হচ্ছে, এটা বিজেপির আমন্ত্রণে এটি একটা সৌজন্য সফর মাত্র। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলটির ভারত সফর এবং সেখানকার নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠকের অন্য গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বিশেষ করে আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের তৎপরতা বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভারত এখনো প্রকাশ্যে ততটা তৎপর নয়। ফলে এ বৈঠক থেকে ফলপ্রসূ কোনো আলোচনা প্রত্যাশা করলে এটা আওয়ামী লীগের বাড়তি কোনো চাওয়া হবে বলে মনে হয়না। 

তাছাড়া আগামী মাসে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। 

তবে এটা ঠিক, তত্ত্বাবধায়কে ফিরলে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটা নির্বাচন হবে। যা দেশের জন্য দেশের সবার জন্য মঙ্গলজনক এবং দেশ একটা স্থিতিশীল অবস্থায় থেকে যাবে। এর ব্যতিক্রম ঘটতে পারে অনেক কিছু, যেমনটা ওয়ান-ইলেভেনে হয়েছিল। সে শঙ্কাও আছে। 

শেয়ার করুন